—প্রতীকী চিত্র।
রজ্জুতে সর্পভ্রম! বাংলা এই প্রবাদের কথা আমেরিকান সাহেবসুবোদের জানার কথা নয়। তবে বিস্তর সাক্ষ্যপ্রমাণ, বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি খতিয়ে দেখার পরে পেন্টাগন তার রিপোর্টে জানাল, ইউএফও-র অস্তিত্বের প্রমাণ মেলেনি। বিভিন্ন সময়ে সামরিক-প্রশাসনিক নথিতে যে সব ইউএফও-গোত্রীয় দৃশ্যমালার কথা আছে, সেগুলো আদতে অন্য কোনও বস্তুকে ইউএফও ভেবে বসার পরিণাম! অর্থাৎ কিনা, রজ্জুতে সর্পভ্রম!
ইউএফও— আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্টস, মানে অচেনা উড়ুক্কু বস্তু। এটা চলতি কথা, জনপ্রিয় শব্দ। সরকারি খাতায় লেখা হয়, ইউএপি— আনআইডেন্টিফায়েড অ্যানোমেলাস ফেনোমেনা, অচেনা অস্বাভাবিক বস্তু। পেন্টাগনের ৬৩ পাতার রিপোর্টের শিরোনাম তাই, রিপোর্ট অন দ্য হিস্টরিকাল রেকর্ড অব ইউ.এস গভর্নমেন্ট ইনভলভমেন্ট উইথ আনআইডেন্টিফায়েড অ্যানোমেলাস ফেনোমেনা (ইউএপি)। সেই রিপোর্টই বলছে, আমেরিকার সরকার অন্তত এ পর্যন্ত ভিনগ্রহে জীবনের খোঁজ বা বহির্বিশ্বের প্রযুক্তির সাক্ষ্য পেয়েছে বলে কোনও প্রমাণ নেই। ‘‘যা কিছু দেখা গিয়েছে বলে নথিভুক্ত, তার বেশির ভাগই সাধারণ জিনিস চিনতে ভুল হওয়ার ফল।’’ কী ধরনের জিনিস? মূলত অচেনা রকেট, স্পেস সিস্টেম, ড্রোন ইত্যাদিকেই ইউএফও বলে ধরে নেওয়া হয়েছে বলে রিপোর্টে দাবি।
বস্তুত ইউএফও-র অস্তিত্বের সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখতে আমেরিকান সরকার বিশদ নিরীক্ষায় নেমেছিল। চল্লিশের দশক থেকে শুরু করে এ যাবৎ কালের সামরিক-প্রশাসনিক দলিল দস্তাবেজ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি, কংগ্রেসে শুনানি এবং নাসা-র আধিকারিকদের সঙ্গে প্রকাশ্য আলোচনাও ছিল তার অঙ্গ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, নাগরিকদের একাংশের মধ্যে এমন একটা ধারণা আছে যে, সরকার নাকি গোপনে ইউএফও নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ভিনগ্রহের স্পেসশিপ, ভিনগ্রহীদের
শবদেহও সরকারের হাতে আছে বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু তার সপক্ষে কোনও প্রমাণই মেলেনি। পেন্টাগনের প্রেস সচিব মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার বলেছেন, সব রকম নথি পরীক্ষা করেই দেখা যাচ্ছে, ‘‘গোপন গবেষণা তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা পাওয়ার মতো কোনও প্রমাণ নেই।’’ তবে পেন্টাগন এ কথাও স্বীকার করছে, এই রিপোর্ট প্রকাশিত হলেই যে মানুষের মন থেকে যাবতীয় ‘ভুল’ ধারণা দূর হয়ে যাবে তা নয়। সিনেমা-টিভি-বইপত্র-সমাজমাধ্যম থেকে লাগাতার জনমানসে যে সব কল্পনা আর বিশ্বাস তৈরি হচ্ছে, তা মুছে ফেলা সহজ নয়। অর্থাৎ পেন্টাগনের রিপোর্টও থাকবে, আবার ইটি-জাদু-বঙ্কুবাবুর বন্ধুরাও থাকবে!