Afghan Couple

দেড় বছর কাবুলে আটকে, দিল্লিতে ‘শরণার্থী’ সন্তানদের কাছে ফিরতে চেয়ে আর্তি আফগান দম্পতির

গত পাঁচ বছর ধরে পরিবারকে নিয়ে নয়াদিল্লিতে বাস করেছেন জারিফ। পাঁচ বছর আগে স্ত্রী জামিলা এবং সন্তানদের নিয়ে ভারতে চলে আসেন তিনি। দিল্লিতে এসে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসা শুরু করেছিলেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২২ ১২:০৮
Share:

সন্তানদের সঙ্গে মহম্মদ জারিফ। ছবি: সংগৃহীত।

গত দেড় বছরে একেবারে বদলে গিয়েছে আফগানিস্তানের বাসিন্দা মহম্মদ জারিফ জাফর এবং তাঁর স্ত্রী জামিলা জাফর হায়দারির জীবন। আর বদলে যাবে না-ই বা কেন! গত ১৮ মাস ধরে এই দম্পতি আফগানিস্তানের কাবুলে থাকলেও তাঁদের ছয় সন্তান দিল্লিতে। তা-ও আবার অভিভাবকহীন অবস্থায়।

Advertisement

গত পাঁচ বছর ধরে পরিবারকে নিয়ে নয়া দিল্লিতে বাস করেন জারিফ। পাঁচ বছর আগে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পাকাপাকি ভাবে ভারতে চলে এসেছিলেন তিনি। দিল্লিতে এসে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তবে কাবুলের প্রতি পিছুটান থেকেই গিয়েছিল। পরিবারকে নিয়ে এক-দু’বার আফগানিস্তানেও গিয়েছিলেন।

তেমনই প্রায় দেড় বছর আগে সন্তানদের নয়াদিল্লিতে রেখে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করতে তিন সপ্তাহের জন্য আফগানিস্তানে যান জারিফ এবং জামিলা। কিন্তু ওই দম্পতি আফগানিস্তান পৌঁছনোর দিন কয়েকের মধ্যেই বদলে যায় সে দেশের পরিস্থিতি। দিকে দিকে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তৎকালীন আফগান সরকার এবং তালিবরা। বন্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল। বাধ্য হয়ে কাবুলেই আটকে পড়েন দম্পতি।

Advertisement

আফগানিস্তানে দ্বিতীয় বার তালিবান সরকার গঠনের পর দেশের পরিস্থিতি একটু ঠিক হলেও দিল্লি ফেরা হয়নি জারিফ-জামিলার। বার বার ভারতে ফিরে আসার চেষ্টা করলেও এখনও পর্যন্ত সে দেশের সরকার তাঁদের ভিসা মঞ্জুর করেনি। তার পর থেকে প্রত্যেকটা দিন দিল্লি ফেরার আশায় জন্য দিন গুনছেন দম্পতি। দিন গুনছেন ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা করার।

কাবুল থেকে একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় জারিফ বলেন, ‘‘আমরা আমাদের সন্তানদের সঙ্গে নেই। এটাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ। আমরা তিন সপ্তাহের জন্য আফগানিস্তানে এসে আটকে গেলাম! আমাদের ছেলেমেয়েরা দিল্লিতে একা। এখানেও আমরা আমাদের বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছি। বাধ্য হয়ে আত্মীয়দের কাছে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখানে প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছি। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।’’

জারিফের স্ত্রী জামিলা জানান, তিনি প্রতি দিন, প্রতি মুহূর্তে তাঁর সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রার্থনা করে চলেছেন। তাঁর করুণ আর্তি, “আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে থাকতে চাই। অনুগ্রহ করে কিছু করুন!” ভারতে ফিরে যাওয়ার জন্য তাঁরা সব সময় নিজেদের ব্যাগপত্র গুছিয়ে রাখেন বলেও দম্পতি জানিয়েছেন।

দিল্লিতে এই দম্পতির এক মেয়ে এবং পাঁচ ছেলে রয়েছে। মেয়ে ফ্রেস্তা জাফর এবং পাঁচ ছেলে মহম্মদ ফাহিম জাফর, মহম্মদ লতিফ জাফর, মহম্মদ সোহেল জাফর, মহম্মদ হামিদ জাফর এবং মহম্মদ আকবর জাফর বর্তমানে বাবা-মায়ের মালব্যনগরের বাড়িতেই রয়েছেন।

জারিফ-জামিলার ছয় সন্তানের মধ্যে ফাহিম বড়। তিনি এখন ১৮ বছর বয়সি কিশোর। বর্তমানে ভাইবোনদের দায়িত্ব দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ফাহিমের কাঁধেই। বাবা-মা কাবুলে আটকে যাওয়ার পর ঘর সামলাতে ছোটখাট কাজ করতেও শুরু করেছেন তিনি। ফাহিম বলেন, “আমরা চাই বাবা-মা এখানে ফিরে আসুন। আমরা তো আফগানিস্তানে যেতে পারব না। ওখানে পরিস্থিতি ভাল নয়। ওঁরা মাত্র তিন সপ্তাহের জন্য গিয়েছিলেন। আর ফেরেননি। আমরা অনেক জায়গায় গিয়ে বাবা-মাকে ভারতের ফিরে আসতে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেছি। কোনও লাভ হয়নি। আমাদের ছোট ভাইয়ের বয়স আট বছর। সে প্রতি রাতে মায়ের জন্য কাঁদে। এখানে আমাদের জীবন ক্রমশই খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে!’’ ফাহিম আরও জানিয়েছেন, তাঁদের পরিবার ভারতে ‘শরণার্থী’ হিসেবে বসবাস করছে। তাঁর আতঙ্ক, মা-বাবাকে ছাড়া তিনি এবং তাঁর ভাইবোনেরা বেশি দিন বাঁচবেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement