বিভিন্ন দেশে খাবার পরিবেশন করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। সেই পদ্ধতির বেশির ভাগই মূলত নির্ভর করে সেই দেশের রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের উপর। কিছু দেশে খাবার পরিবেশনের এমন উদ্ভট নিয়মও রয়েছে, যা দেখে যে রীতিমতো চমক লাগে! খাবার পরিবেশনের এমনই এক উদ্ভট নিয়ম দেখা যায় জাপানে। প্লেটে নয়, জাপানের এই ঐতিহ্যবাহী নিয়মের কারণে খাবার পরিবেশন করা হয় নিরাবরণ মানবদেহের উপর।
জাপানে এই বিশেষ উপায়ে খাবার পরিবেশন করার পদ্ধতির নাম ‘নিয়োতাইমোরি’ বা ‘নানতাইমোরি’।
শুধু মাত্র বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে নয়, ঐতিহ্য মেনে নগ্ন মহিলা-পুরুষদের উপরে খাবার পরিবেশন করা হয় জাপানের বিভিন্ন রেস্তোরাঁতেও।
নিয়োতাইমোরি পদ্ধতিতে পুরুষ-মহিলা উভয়ের শরীরের উপরে খাবার পরিবেশন করার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খাদ্য পরিবেশনের জন্য নিরাবরণ মহিলাদেহকেই বেছে নেওয়া হয়।
জাপানে খাবার পরিবেশনের এই অদ্ভুত ঐতিহ্য জগৎবিখ্যাত। অন্যান্য দেশ থেকে জাপানে ঘুরতে এসে নিয়োতাইমোরি পদ্ধতিতে খাবার খাননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল।
নিয়োতাইমোরি রীতি অনুযায়ী প্রথমে এক জন মহিলাকে খাবার টেবিলের উপর শুইয়ে রাখা হয়।
টেবিলে শুয়ে থাকার সময় ওই মহিলার শরীরে একটি সুতো পর্যন্ত থাকে না। সম্পূর্ণ নগ্ন ওই মহিলার উপরেই করা হয় বিভিন্ন পদ পরিবেশন।
প্রথমে নগ্ন মহিলার শরীরের উপর জাপানের ঐতিহ্যবাহী পদ ‘সুশি’ পরিবেশন করা হয়। এর পর একের পর এক অন্য পদ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় ওই মহিলার গোপনাঙ্গ। শরীরে বাকি অংশ অবশ্য উন্মুক্তই থাকে।
খাবারের পাশাপাশি নিরাবরণ মহিলার শরীর বাহারি ফুল দিয়েও সাজানো হয়।
খাবার-সজ্জিত সেই নগ্ন মহিলার চারপাশে গোল হয়ে ঘিরে খেতে বসেন বাড়িতে আমন্ত্রিত অতিথি বা রেস্তোরাঁয় খেতে-আসা লোকজন।
এর পর নিরাবরণ মহিলার গোপনাঙ্গের উপর থেকেই চপস্টিক বা কাঁটা-চামচ দিয়ে এক এক করে খাবার নিয়ে রসনা তৃপ্তি করতে দেখা যায় অভ্যাগতদের।
জাপানে নিয়োতাইমোরিকে একটি পেশা হিসাবে গণ্য করা হয়। যাঁরা এই কাজ করেন, তাঁরা অনেক সময়ই নিজেদের পরিচয় গোপন করে বা মুখোশ পরে এই কাজ করেন। আবার অনেকে মুখ না ঢেকেই সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে শুয়ে থাকেন খাবার টেবিলে।
এই পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকেন অনেক পুরুষও। এক জন বিবস্ত্র পুরুষের উন্মুক্ত শরীরের উপর খাবার পরিবেশন করার পদ্ধতি পরিচিত ‘নানতাইমোরি’ নামে।
নিয়োতাইমোরি বা নানতাইমোরিকে পেশা হিসাবে বেছে নেওয়া মহিলা এবং পুরুষদের বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। নিয়ম মেনে চলতে হয় খেতে আসা মানুষদেরও।
নিয়ম অনুযায়ী, খাবার সময় কোনও অতিথিই উন্মুক্ত হয়ে শুয়ে থাকা পুরুষ-মহিলাদের সঙ্গে কোনও কথা বলতে পারবেন বা তাঁদের ছুঁতে পারবেন না। একই সঙ্গে টেবিলের উপর শায়িত থাকা পুরুষ এবং মহিলাদেরও অতিথিদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি থাকে না।
জাপানে এই অদ্ভুত ঐতিহ্যকে শিল্পের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক দেশেই এই নিয়ম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চিন, হংকং, ব্রিটেন, আফ্রিকা-সহ অনেক দেশে এই প্রথাকে ‘নিষ্ঠুর, অবমাননাকর এবং অনৈতিক’ বলে বিবেচনা করা হয়।