রাতের বেলা ঘুমোচ্ছেন, হঠাৎ মনে হল কে যেন কথা বলছে, পায়ের থেকে চাদরটা আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। কেমন লাগবে? ঠিক এ রকমই কিছু দৃশ্য দেখানো হয়েছিল ‘দ্য কনজ্যুরিং’ সিনেমাটিতে। মনে পড়ে?
সত্তরের দশকে সত্যি ঘটনার উপর ভিত্তি করেই ২০১৩ সালে এই সিনেমাটি বানানো হয়েছিল। রোড আইল্যান্ডের হ্যারিসভিলায় যে বাড়িটিকে কেন্দ্র করে এত হইচই, চল্লিশ বছর পর সেই বাড়িটিকে এ বার কিনলেন এক দম্পতি।
ওই দম্পতি, কোরি এবং জেনিফার হেইনজেন-এর দাবি, তাঁদের বরাবরই ভৌতিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ে আগ্রহ ছিল। কোরি জানান, এই ধরনের বিষয় তাঁকে সবসময় আকর্ষণ করে। ভূত থেকে শুরু করে ইউএফও (আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্টস) বা বিগফুট বা লেক মনস্টার, যা-ই হোক না কেন, প্রথম থেকেই তিনি বিশেষ ভাবে আগ্রহী।
চলতি বছরের জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে ওই দম্পতি এই বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। এখানে থাকার আর একটি কারণ হল, এই বাড়িটির সঙ্গে বাস্তব জীবনের পেরন পরিবার যুক্ত ছিলেন। এই পেরন পরিবারকে নিয়েই ‘দ্য কনজ্যুরিং’ ছবিটি তৈরি হয়। পরে এর আর একটি পার্ট বের হয় ‘কনজ্যুরিং ২’।
দম্পতির মতে, চল্লিশ বছর পরে এখনও নাকি ওই বাড়িতে কিছু ভৌতিক, গা শিরশিরানি আচরণ অনুভব করা যায়। তাঁদের বক্তব্য, ওই বাড়িটার ইতিহাসের কথা মাথায় রেখে তাঁরা প্রমাণ খুঁজে চলেছেন।
১৯৭০-’৮০ সাল পর্যন্ত ক্যারোলিন এবং রজার পেরন তাঁদের পাঁচ কন্যাকে নিয়ে রোড আইল্যান্ডের হ্যারিসভিলায় থাকতে আসেন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তাঁরা এই বাড়িতে ভুতুড়ে কাণ্ডকারখানা টের পান।
বাড়ির বাচ্চারাও বিভিন্ন রকমের অলৌকিক শক্তির উপস্থিতি অনুভব করত। রাতের বেলা মাঝেমধ্যে এ পাশ থেকে ও পাশ ঘুরলে দেখতে পেত, কে যেন হাঁ করে তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। ঘরের কোণে কেউ যেন দাঁড়িয়ে হাসছে তাঁদের দিকে তাকিয়ে।
এক বার ক্যারোলিন পেরন দেখেন যে বাড়ির ঝাঁটা নিয়ে কে যেন নাড়ানাড়ি করছে। তার পর কারা যেন ফিসফিস করে কথা বলছে। এক দিন ক্যারোলিন সোফায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আচমকা তাঁর পায়ে ব্যথা শুরু হয়। তিনি দেখেন, পায়ে একটা কাটার দাগ, সেখান থেকে রক্তও পড়ছে!
কানাঘুষো শোনা যায়, ১৮০০ সালে বাথসেবা নামে এক বদমেজাজি মহিলা তাঁর স্বামীকে নিয়ে ওখানে থাকতেন। রটে যায়, তিনি ‘শয়তানের শিষ্য’। বাথসেবার প্রথম সন্তান মারা যায়। সেই মৃত্যুর দায় বাথসেবার ঘাড়ে এসে পড়ে। কথিত আছে, ১৮৮০ সালে বাথসেবা মারা গেলে তাঁর আত্মা ওই বাড়িতে থেকে যায়। কিছু দূরেই ব্যাপ্টিস্ট কবরখানায় তাঁর স্মৃতিস্তম্ভ দেখতে পাওয়া যায়।
নানা ধরনের কাণ্ডকারখানার পরেও পেরন পরিবার কিন্তু ওই বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যাননি। এর পর বিখ্যাত মার্কিন পরাবাস্তব বিশেষজ্ঞ-গবেষক (প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর) এড ওয়ারেন এবং তাঁর স্ত্রী লোরেন ওয়ারেনকে ডাকা হয়। ২০০৬ সালে এড ওয়ারেন প্রয়াত হন। ৯২ বয়সী লোরেন ওয়ারেন চলতি বছরের এপ্রিলে মারা যান।
সিনেমাটি শেষ পর্যন্ত দেখিয়েছে বাথসেবাকে নরকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব চিত্রটি ঠিক সে রকম নয়। এড এবং লোরেন ওয়ারেন তাঁদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে এগোলে রজার পেরন ১৯৮০ সালে বাড়ি ছেড়ে পরিবারকে নিয়ে অন্যত্র চলে যান।
কোরি এবং জেনিফার হেইনজেন জানিয়েছেন, তাঁরা নিজেরা আধিভৌতিক কাজকর্মের কিছু কিছু প্রমাণ পেয়েছেন এবং আরও জোগাড় করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। যেমন, দরজা খোলার আওয়াজ, পায়ের ছাপ, অশরীরী আত্মার ভয়েস বা ইলেক্ট্রিক ভয়েস ফেনোমেনা ইত্যাদি। তাঁরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে তাঁরা এই জায়গাটিকে টুরিস্ট স্পট হিসেবে তৈরি করতে চান।