বাগরাম বায়ুসেনা ছাউনি থেকে আমেরিকার বাহিনী চলে যাওয়ার পরে বাইরে একটি দোকানে বিক্রি হচ্ছে তাদের ব্যবহার করা পুরনো জিনিস। ছবি—রয়টার্স।
ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে তালিবান। শনি ও রবিবার তালিবানের সঙ্গে লাগাতার সংঘর্ষ চলার পরে সোমবার প্রতিবেশী তাজিকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছেন এক হাজারেরও বেশি আফগান সেনা। আমেরিকা ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়ার পর থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল ক্রমশ তালিবানের দখলে চলে যাচ্ছে। আফগান সেনারাও ক্রমে পিছু হটছেন। আফগান সেনাবাহিনীর অবশ্য দাবি, আশঙ্কা অমূলক। শীঘ্রই পাল্টা আক্রমণ করবে তারা।
উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের বাদখশান প্রদেশের এক ব্যাটেলিয়নের সেনাকর্তা আব্দুল বশির জানিয়েছেন, গত তিন দিন ধরে তাজিকিস্তান-সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় আফগান সেনাবাহিনীর উপরে সমানে হামলা চালাচ্ছিল তালিবান। সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেও ক্রমশই পিছু হটতে হচ্ছিল সেনাবাহিনীকে। অন্যান্য সেনাঘাঁটি থেকে আরও বাহিনী চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আজ সকাল পর্যন্ত অতিরিক্ত বাহিনী এসে পৌঁছয়নি। তালিবানের কাছে আত্মসমর্পণও করতে চাননি আফগান সেনারা। বেগতিক দেখে, প্রাণে বাঁচতে, তাঁরা প্রতিবেশী রাষ্ট্র তাজিকিস্তানে পালিয়ে যান।
আজwww তাজিকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ‘‘আফগানিস্তান থেকে ১০৩৭ জন সেনা আজ আমাদের দেশে প্রবেশ করেন। আমরা কখনওই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাই না। আফগানিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আমরা তাঁদের আপাতত এখানে থাকার অনুমতি দিয়েছি।’’
আফগান সেনার তাজিকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া অবশ্য কোনও নতুন ঘটনা নয়। সে দেশের তথ্য মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, আফগান-তাজিক সীমান্তের কাছাকাছি, আমু দরিয়া এলাকার একটা বড় অংশের প্রধান শহর এবং প্রধান সড়কগুলি তালিবানের দখলে চলে গিয়েছে। সূত্রের খবর, শনিবারের মধ্যে কন্দহর, বাদখশান এবং কুন্দুজ় প্রদেশের অন্তত ১৩টি জেলা পুরোপুরি তালিবানের আওতায় চলে এসেছে।
আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীর অবশ্য দাবি, খুব শীঘ্রই দেশের উত্তর প্রান্তে তালিবান বাহিনীর উপরে হামলা চালাবে তারা। আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হামদুল্লা মোহিব জানিয়েছেন, বড়সড় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সেনাবাহিনী। তবে তিনি এ কথা মুখে বললেও পরিস্থিতি যে এতটা সহজ নয়, তা মানছেন দেশ-বিদেশের সামরিক বিশেষজ্ঞেরা। যেমন কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্তা নুরির কথায়, ‘‘আফগান সেনার মনোবল একদম তলানিতে ঠেকেছে। আমেরিকান সেনাবাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করেছে। লড়াই চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মানসিক শক্তিটুকুও যেন আর সেনাদের নেই।’’