লকডাউনের জেরে দূষণমাত্রা হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। যার ফলে স্বচ্ছ হ্রদের নীচে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ১৬০০ বছরের প্রাচীন গির্জার ধ্বংসাবশেষ।
এ ভাবেই প্রকৃতি নিজে ইতিহাসের দরজা খুলে দিয়েছে তুরস্কে। সে দেশে ইজনিক হ্রদের নীচে দেখা যাচ্ছে ৩৯০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত গির্জার ভগ্নাবশেষ।
পুরাবিদ ও ইতিহাসবিদদের ধারণা, ৭৪০ খ্রিস্টাব্দে ভূমিকম্পের ফলে স্থাপত্যটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার পর ধীরে ধীরে তাকে গ্রাস করে ইজনিক হ্রদের জল।
তলিয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক নিদর্শনটি রয়েছে জলতল থেকে মাত্র দেড় থেকে দু’মিটার গভীরে। এই প্রথম এত স্পষ্ট করে সেটিকে দেখা গেল জলের উপর থেকেই। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে ড্রোনের মাধ্যমে তার ছবিও তোলা হয়েছে।
ইজনিক হ্রদের নীচে প্রাচীন গির্জার অস্তিত্ব ধরা পড়েছিল ২০১৪ সালে। আর্কিয়োলজিক্যাল ইনস্টিটিউট অব আমেরিকা সে সময় একে বছরের সেরা দশটি ঐতিহাসিক আবিষ্কারের মধ্যে জায়গা দিয়েছিল।
গবেষকদের মত, ১৬০০ বছর আগে সন্ত নিওফাইটোসের সম্মানে এই গির্জা তৈরি করা হয়েছিল। সে সময় ইজনিকের নাম ছিল নাইসিয়া। রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনের নাম অনুসারে ইস্তানবুল ছিল কনস্টাটিনোপল। রোমান সম্রাট ডায়োক্লেশিয়ান এবং গ্যালেরিয়াসের আমলে সন্ত নিওফাইটোসকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল।
যে স্থানে সন্তকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, সেখানেই পরে গির্জাটি নির্মাণ করা হয় তাঁর সম্মানে। মধ্যযুগের বিভিন্ন নথিতে দাবি করা হয়েছে, ইজনিক হ্রদের তটের বধ্যভূমিতে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয় সন্ত নিওফাইটোসকে।
গবেষকদের একটা বড় অংশের মতে, ইজনিক হ্রদের নীচে ওই গির্জা তৈরি করা হয় একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপরে। ইতিহাসবিদেরা নিশ্চিত, গির্জার ধ্বংসস্তূপের নীচে আরও প্রাচীন সভ্যতার চিহ্ন আছে।
এই দাবির পিছনে কারণ হল, হ্রদ থেকে রোমান সম্রাট অ্যান্তোনিয়াস পায়াসের সমকালীন মুদ্রা ও অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসের সন্ধান মিলেছে। পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন শাসক যেমন সম্রাট ভ্যালেন্স, সম্রাট দ্বিতীয় ভ্যালেন্তাইনিয়ানের সমসাময়িক মুদ্রার নিদর্শনও পাওয়া গিয়েছে।
রোমান সম্রাট অ্যান্তোনিয়াস পায়াস ১৩৮ থেকে ১৬১ খ্রিস্টাব্দ অবধি সিংহাসনে আসীন ছিলেন। তাঁর আমলে বা আরও আগে ওই স্থানে প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার দেবতা অ্যাপোলোর মন্দির ছিল বলে অনুমান। হ্রদের তলদেশে খনন করলে সেই সভ্যতার সন্ধান পাওয়া যাবে বলেই অনুমান।
২০১৪ সালে এর অস্তিত্ব আধুনিক পৃথিবীর সামনে প্রকাশ্যে আসতেই অনুসন্ধান শুরু হয়। পাওয়া যায় স্কটিশ নাইটদের স্মারকচিহ্ন। মনে করা হয়, তাঁরাই এই ব্যাসিলিকার প্রথম বিদেশি পর্যটক। পাশাপাশি গির্জায় বেশ কিছু সমাধি আছে বলেও জানিয়েছেন প্রত্নবিদরা।
উত্তর পশ্চিম তুরস্কের বার্সা প্রদেশে ইজনিক হ্রদের স্ফটিক-জলের আড়াল থেকে অতীত কথা বলছে বর্তমানের সঙ্গে। ইজনিক হ্রদ জুড়ে আন্ডারওয়াটার আর্কিয়োলজিক্যাল সাইট গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে তুরস্ক। (ছবি:শাটারস্টক)