এনায়েতপুর থানার বর্তমান পরিস্থিতি। ছবি: সংগৃহীত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রবিবার উত্তাল হয়েছিল বাংলাদেশ। কখনও আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করেছেন পুলিশকর্মীরা। কখনও আবার পুলিশকর্মীদের দিকে তেড়ে এসেছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলন ঘিরে অশান্তি এবং তা দমনের চেষ্টায় রবিবার শতাধিক মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। রেহাই পাননি পুলিশকর্মীরাও। মৃতদের তালিকায় রয়েছেন শুধুমাত্র এনায়েতপুর থানারই ১৪ জন পুলিশকর্মী।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’য় প্রকাশ, হামলার সময় ওই থানায় প্রায় ৪০ জন পুলিশকর্মী কর্তব্যরত ছিলেন। একদল বিক্ষুব্ধ জনতা যখন তেড়ে আসে থানার দিকে, তখন পুলিশকর্মীরা ভয়ে যে যে দিকে পেরেছেন, দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। রবিবারের ঘটনায় জখম হয়েছেন এনায়েতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক শাহিনুর আলম। তিনি এখন ভর্তি রয়েছেন সিরাজগঞ্জের এক হাসপাতালে। তাঁকে উদ্ধৃত করে ‘প্রথম আলো’য় প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কী ভাবে খুঁজে খুঁজে মারা হয়েছিল পুলিশকর্মীদের।
শাহিনুর জানিয়েছেন, রবিবার সকাল থেকে দু’টি মিছিল এসেছিল থানার সামনে। ইটবৃষ্টি চলছিল থানা লক্ষ্য করে। প্রথম মিছিলটিকে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়ে এবং দ্বিতীয় মিছিলটিকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে তখনকার মতো প্রতিহত করেন এনায়েতপুর থানার পুলিশকর্মীরা।
এর পর দুপুর একটা নাগাদ আরও একটি বড় মিছিল আসে থানার সামনে। সেখান থেকেও চলছিল ইটবৃষ্টি। পুলিশকর্মীরা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে, রবার বুলেট ছুড়েও দমাতে পারেননি তৃতীয় মিছিলটিকে। ‘প্রথম আলো’কে শাহিনুর জানিয়েছেন, একটা সময়ে পুলিশকর্মীরা আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা কোনও কিছু তোয়াক্কা না করে হামলা চালান। ফলে প্রাণভয়ে পুলিশকর্মীরা যে যে দিকে পেরেছেন, ছুটে পালিয়েছিলেন।
হাসপাতালে ভর্তি ওই পুলিশ পরিদর্শক জানিয়েছেন, কেউ থানার ভবনের ছাদে জলের ট্যাঙ্কের পিছনে, কেউ শৌচালয়ে, কেউ পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কেউ আবার প্রাণভয়ে থানার কাছেই একটি জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন থানার ভিতরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করছিলেন একদল বিক্ষোভকারী। তিনি জানিয়েছেন, হামলাকারীরা এক তলাতেই ছিলেন। ছাদে ওঠেননি। সেই কারণে ছাদের উপর আশ্রয় নেওয়া পুলিশ পরিদর্শক-সহ বাকি পুলিশকর্মীদের দেখতে পাননি বিক্ষোভকারীরা।
কিন্তু আশপাশের বাড়িতে যাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁদের খুঁজে খুঁজে বার করে আনেন আন্দোলনকারীরা। দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত থানা সংলগ্ন এলাকায় এই অভিযান চালিয়ে বিক্ষোভকারীরা ‘হত্যাযজ্ঞ’ চালান বলে অভিযোগ এনায়েতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শকের।
রবিবারে ঘটনার বিবরণ উঠে এসেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখেও। থানা সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা নুরজাহান বেগম ‘প্রথম আলো’কে জানিয়েছেন, তিনি বাড়িতে তিন জন পুলিশকর্মীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। যাতে হামলাকারীরা পুলিশকর্মীদের চিনতে না পারেন, সে জন্য তাঁদের উর্দির বদলে সাধারণ পোশাকও পরতে দিয়েছিলেন। পরে সুযোগ বুঝে পুলিশকর্মীদের নিরাপদে বাড়ি থেকে বার করে দেন তিনি। অপর এক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, তিনি বাড়ির দরজা বন্ধ করে বসেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ির বাইরের শৌচালয়ে এক পুলিশকর্মী আশ্রয় নিয়েছিলেন। বিক্ষোভকারীরা তাঁকে টেনে সেখান থেকে বার করে এবং বাড়ির প্রাঙ্গণেই পিটিয়ে হত্যা করেন।