জো বাইডেন।—ছবি রয়টার্স।
ডেমোক্র্যাটদের তরফে বাড়তে থাকা চাপের মুখে পড়েই অবশেষে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক টেবিলে বসলেন মাইক পেন্স। ঢাক পিটিয়ে, প্রেসকে জানিয়ে নয়। ওভাল অফিসে গোপন বৈঠক। সূত্রের খবর, ক্যাপিটল-তাণ্ডব নিয়ে ভয়ঙ্কর খেপে যাওয়া বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স এখন অনেকটাই নরম। ডেমোক্র্যাটদের দাবি মতো, কালকের বৈঠকে কথায়-কথায় ট্রাম্পকে অবিলম্বে ইস্তফা দেওয়ার প্রস্তাবও পাড়েন পেন্স। তবে ট্রাম্প অনড়ই। ২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের শপথ নেওয়ার আগে কুর্সি ছাড়তে নারাজ তিনি। শুধু তাই নয়, বাকি থাকা আর ক’টা দিন কী ভাবে আরও ভাল করে দেশ চালানো যায়, তা নিয়েও পেন্সের সঙ্গে কাল কথা বলেন ট্রাম্প।
ইমপিচমেন্ট প্রসঙ্গে ট্রাম্পের দাবি, যেন-তেন ভাবে তাঁকে অপরাধী সাব্যস্ত করার চেষ্টা চলছে, দেশের ইতিহাসে যা নজিরবিহীন। ডেমোক্র্যাটরাও হাল ছাড়তে নারাজ। ইমপিচমেন্টেরও আগে তাঁরা চাইছেন, পেন্সকে দিয়ে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে হটাতে। যেমন ভাবা হয়েছিল, ব্যাপারটা ততটাও সহজ হচ্ছে না দেখে, এখন ইমপিচ-অস্ত্রেও ট্রাম্পকে কুপোকাত করতে চাইছেন হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। কাল হাউসে প্রাথমিক প্রস্তাব পেশ হয়েছে। সূত্রের খবর, বাইডেনও ইমপিচমেন্ট নিয়ে বেশ কয়েক জন সেনেটরের সঙ্গে কথা বলেছেন। আবার সংশোধনী প্রয়োগ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আজই হাউসে ওঠার কথা। ভোটাভুটিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে বাইডেনের নজর এখন মূলত নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের দিকেই। এ বার তাঁর শপথের থিম— ‘আমেরিকা ইউনাইটেড’। অথচ দেশের ১৫০ বছরের ঐতিহ্য তছনছ করে এ বার উত্তরসূরির শপথে থাকবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু তাঁর কট্টর সমর্থকেরা? এফবিআই বলছে, ওই দিন ফের ঝামেলার আশঙ্কা রয়েছে ওয়াশিংটন-সহ ৫০টি প্রদেশের রাজধানীতে। এ বার আরও ভয়ঙ্কর সশস্ত্র হামলা হতে পারে ধরে নিয়ে আগেভাগেই তৈরি ন্যাশনাল গার্ড। অভিযোগ, ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডব শুরু হওয়ার প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল সেনা। এ বার তাই আগাম ব্যবস্থা নিতে প্রতিরক্ষা সচিব চিঠি লিখেছেন ডেমোক্র্যাট সেনেটর ক্রিস মার্ফি। প্রথা অনুযায়ী, ক্যাপিটল ভবনের মাঠে শপথ নেওয়ার কথা বাইডেন ও ভাবী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের। ডেলাওয়্যার থেকে বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘অনুষ্ঠান খোলা মাঠে হলেও নিরাপত্তা নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন নই।’’
ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান ড্যানিয়েল হোকানসন জানিয়েছেন, শনিবারের মধ্যেই ওয়াশিংটনে ১০ হাজার সেনা পৌঁছে যাবে। স্থানীয় প্রশাসন চাইলে সংখ্যাটা ১৫ হাজারও হতে পারে। একটাই স্বস্তি, ক্যাপিটলে হামলার দায় না-নিলেও এফবিআইয়ের সতর্কবার্তা পাওয়ার পরে ওয়াশিংটনে জরুরি অবস্থা জারির অনুমতি দিয়েছেন। যা বলবৎ থাকবে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১৬ থেকে ২৪ পর্যন্ত শহরের বেশ কিছু এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
আরও পড়ুন: নতুন ৪টি কোভিড স্ট্রেনকে হাল্কা ভাবে নিলে আরও অন্তত ৫ লক্ষ মৃত্যু: সিদ্ধার্থ
সে দিন ক্যাপিটলে যা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিন্টন একটি দীর্ঘ নিবন্ধে লিখেছেন, ‘‘সে দিনের তাণ্ডব আসলে ট্রাম্পের উস্কানিতে শ্বেতাঙ্গ আগ্রাসনের একটা বহিঃপ্রকাশ। অনেকটা গভীরে যাওয়া এর শিকড় যেন হঠাৎ প্রকাশ্যে এল। শুধু বিদায়ী প্রেসিডেন্ট নয়, যে কংগ্রেস সদস্যেরা সে দিন ট্রাম্প ও উন্মত্ত সমর্থকদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদেরও ক্ষমতাচ্যুত করা উচিত। কিন্তু শুধু এ সব করেই আমেরিকা থেকে শ্বেত-সন্ত্রাসকে হটানো যাবে না।’’
আরও পড়ুন: টিকাকরণ শুরু হলেও হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হতে ঢের দেরি, জানাল হু
ট্রাম্প-সমর্থকদের তাণ্ডবের দিনে ক্যাপিটল হিলেই ছিলেন পেন্স। হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভস ও সেনেটের চেম্বার থেকে বাকিদের সঙ্গে তাঁকেও কার্যত পালাতেই হয়েছিল সে দিন। ট্রাম্পের উপরে ভয়ঙ্কর খেপে গিয়েছিলেন পেন্স। মাঝখানে দু’জনের কথাই হয়নি। কাল হল গোপন বৈঠকে। এবং বোঝা গেল, ‘বন্ধুত্ব’ এখনও অটুটই।