Calcutta High Court

দেশে মুখ পুড়ল, খেদ তরুণ কৌঁসুলিদের

প্রবীণ আইনজীবীরা ওই বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সোমবারেই মুখ খুলেছিলেন। এ বার কিছু বিক্ষুব্ধ কৌঁসুলির আচরণের কড়া সমালোচনা করে নবীনেরা বলছেন, ওই ঘটনায় বাংলার মুখ পুড়েছে, এটাই চিন্তার।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:২৬
Share:

কলকাতা হাই কোর্ট। ফাইল চিত্র।

অখণ্ড ভারতবর্ষে কলকাতা থেকে করাচি পর্যন্ত প্রতাপ ছিল কলকাতার আইনজীবীদের। স্বাধীনতার পরে তাঁদের প্রতিপত্তির পরিধি সঙ্কুচিত হয়ে এলেও কৌঁসুলি শিবিরের দাবি, অন্যান্য রাজ্যে কলকাতা হাই কোর্টের আইজীবীদের সম্মান এখনও অটুট। কিন্তু বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসের বাইরে সোমবার এক দল কৌঁসুলি যে-‘বেনজির’ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তার পরে সেই সম্মান কতটা অক্ষুণ্ণ থাকবে, বিশেষত নবীন আইনজীবীরা সেই বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন। প্রবীণ আইনজীবীরা ওই বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সোমবারেই মুখ খুলেছিলেন। এ বার কিছু বিক্ষুব্ধ কৌঁসুলির আচরণের কড়া সমালোচনা করে নবীনেরা বলছেন, ওই ঘটনায় বাংলার মুখ পুড়েছে, এটাই চিন্তার।

Advertisement

বিচারপতি মান্থার সাম্প্রতিক কিছু রায় রাজ্য সরকার এবং শাসক দলের পক্ষে ‘অস্বস্তিকর’ হয়ে উঠেছে। কার্যত সেই সব মামলার প্রসঙ্গ তুলেই ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ ব্যক্তিরা বিচারপতির আবাসস্থল যোধপুর পার্কের একাংশে পোস্টার দেয়। তাতে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ‘রক্ষাকবচ’ দেওয়া এবং তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরের রক্ষাকবচ বাতিলের প্রসঙ্গ রয়েছে। বিচারপতি যে-ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকেন, সেটি ‘বেআইনি’ বলে অভিযোগ করা হয়েছে পোস্টারে। সোমবার সেই পোস্টার সাঁটানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বেলা সাড়ে ১০টা থেকে কোর্টে বিচারপতি মান্থার এজলাসের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন এক দল আইনজীবী। তাঁরা তৃণমূলের অনুগামী হিসেবে পরিচিত।

নবীন আইনজীবীরা ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন বিক্ষোভকারী কৌঁসুলিদের বিরুদ্ধে। আইনজীবী প্রীতি কর বলেন, ‘‘আমাকে এজলাসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। বলা হয়, বিক্ষোভে যোগ দিতে হবে। আমি এজলাস বয়কট সমর্থন করিনি। এই ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। দেশের অন্য আদালতে গিয়ে নিজেকে কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী বলতে লজ্জা করবে।’’ প্রীতিকে বাধাদান ও হেনস্থার কথা বিচারপতি মান্থাকে জানান আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী। তিনি দিল্লি থেকে ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে সওয়াল করায় বাধার মুখে পড়তে হননি। কৌস্তভ বলছেন, ‘‘খোদ অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) গিয়েও বিক্ষোভ তুলতে পারলেন না। এই লজ্জাজনক কাণ্ডের জন্য এজি-র আগে পদত্যাগ করা জরুরি।’’ আইনজীবী সালোনি ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘এজলাসের দরজা আটকে রাখা, মহিলাদের হেনস্থা করা কোনও আদালতের চরিত্র হতে পারে না। শাসক দলের স্বার্থে ঘা লাগলেই কিছু আইনজীবী বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।’’

Advertisement

এই ধরনের কাণ্ডে শাসক দল বা সরকারের সমর্থন থাকবে না বলেই মনে করছে আইনজীবীদের একাংশ। আইনজীবী শমীক বাগচী বলেন, ‘‘সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এক দল অপদার্থ আইনজীবীর জন্যই সরকারকে বার বার আইনি যুদ্ধে হারতে হচ্ছে। তাঁর কথা যে সত্য, এই বিক্ষোভকারীরাই তা প্রমাণ করছেন।’’

আইনজীবী শিবির-সহ বিভিন্ন মহলের অনেকের প্রশ্ন, মামলার পাহাড় জমেছে। বিচারের অপেক্ষায় বসে আছেন সাধারণ মানুষ। বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে বিচারপ্রার্থীদের ক্ষতি—‘বয়কট সমর্থক’ আইনজীবীরা কি সেটা ভাবেন না?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement