সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারী।—ফাইল চিত্র।
গত তেইশ বছর ধরে তাঁর জীবনের রুটিন ছিল দু’বেলা দেড়শো জনের রান্না করা। যে হাতে তিনি লিখেছেন ‘ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন’, সেই হাতেই তাঁকে প্রতি দিন নামাতে হত ২০ কিলোগ্রাম চালের ভাত। তবে সেই কাজ করতে তিনি আপত্তি করেননি। কিন্তু, আপত্তি তুলেছিল তাঁর শরীর। দুটো হাঁটু প্রায় অকেজো। আর তাই দলিত সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারী বেশ কিছু দিন ধরেই সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছিলেন, যাতে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয় কায়িক পরিশ্রম থেকে। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে রান্নার হাতা-খুন্তি থেকে রেহাই পেয়ে মনোরঞ্জন এ বার থেকে কাজ করবেন গ্রন্থাগারে। মঙ্গলবার লেখকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিন মনোরঞ্জন বলেন, ‘‘সেই ১৯৯৭ সাল থেকে মুকুন্দপুরের হেলেন কেলার বধির বিদ্যালয়ে রান্নার কাজ করছি। গত কয়েক বছর ধরে আর শরীর দিচ্ছিল না। তাই কম পরিশ্রমের কোনও কাজের জন্য আবেদন করেছিলাম।” মনোরঞ্জন যে বিদ্যালয়ে চাকরি করেন, সেটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনশিক্ষা প্রসার দফতরের অধীনে। লেখক এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘আমার দুটো হাঁটুই প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ছানির অস্ত্রোপচার করা হয়েছে দু’চোখেই। বার দুয়েক মেডিক্যাল বোর্ডও বসানো হয়েছিল। চিকিৎসকেরাও আগুনের সামনে ভারী কাজ করতে বারণ করেছিলেন।”
আরও পড়ুন: দৈনিক নতুন সংক্রমিতের থেকে বেশি সুস্থ, নামছে সংক্রমণের হারও
এ দিন নবান্নের তরফেও জানানো হয়েছে, মনোরঞ্জনের আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছনোমাত্রই তিনি হস্তক্ষেপ করেন এবং জনশিক্ষা প্রসার দফতরের আধিকারিকদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এর পরই মনোরঞ্জনকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলার কাছে বিদ্যানগর পাবলিক লাইব্রেরিতে বদলি করা হয়। মনোরঞ্জন বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিবের কথা হয়েছে। সরকারি বদলির নির্দেশের কপিও আমি পেয়ে গিয়েছি। ইচ্ছে আছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম থেকেই নতুন জায়গায় কাজে যোগ দেব।” শারীরিক অসুস্থতার জন্য বর্তমান কাজের জায়গায় যোগ দিতে না পারায় অর্থকষ্টেও পড়েন মনোরঞ্জন। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের কাছে হাত পেতে চলতে হয়েছে। কী আর করব।”
আরও পড়ুন: বর্ষায় ক্ষতি হতে পারে চাষের, কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস মমতার
বরিশালের দলিত পরিবারে জন্ম মনোরঞ্জনের। খুব ছোটবেলায় উদ্বাস্তু হয়ে এ দেশে চলে আসে তাঁর পরিবার। কিশোর বয়স থেকেই রুজি-রুটির খোঁজে বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। সুযোগ পাননি কোনও প্রথাগত শিক্ষার। অনেক পরে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে জেলবন্দি থাকার সময় শুরু হয় পড়াশোনা। তাঁর একের পর এক লেখায় উঠে এসেছে বাংলার বুকে দলিত এবং নমশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষের কথা।