ছবি: সংগৃহীত
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের অসহযোগিতার জন্য উত্তরবঙ্গের প্রথম ইনল্যান্ড কন্টেনার পোর্ট চালু করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠল। প্রায় ৩০ কোটি টাকা পরিকাঠামোয় খরচের পরেও তা চালু না হওয়ায় উত্তর পূর্বাঞ্চল থেকে উত্তরবঙ্গের শিল্পমহলে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শিলিগুড়ি শহরের ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া সাহুডাঙিতে তৈরি হয়ে থাকা কলকাতা বন্দরের সংযোজন ‘ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো’ বা পোর্টটি (আইসিডি) দ্রুত চালুর জন্য সরব হয়েছে বণিকসভা কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ় (সিআইআই)। পোর্ট বা বন্দরটি চালু হলে উত্তরবঙ্গ, উত্তর-পূর্বাঞ্চল তো বটেই, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের কলকাতা বন্দরের উপর নির্ভরতা অনেকটাই কমে যাবে। পণ্য পরিবহণ থেকে শ্রমিক মজুরিও কমে আসবে।
সাহুডাঙি থেকে এনজেপি হয়ে কলকাতা বন্দরে পৌঁছনোর রেল লাইনের ট্রায়ালও এর মধ্যে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় লক্ষাধিক টাকার ফি এবং একাধিক অনুমোদনের পরেও রেল শেষে জমির লিজ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাণিজ্যিক বিজ্ঞপ্তি জারি করছে না বলে অভিযোগ। রেলের দাবি, ওই ৩০ একর জমি ২০০৯ সালে এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ নিয়েছিলেন বন্দরটি চালু করার জন্য। পরে তা কেন্দ্র, পোর্ট ট্রাস্টের অনুমোদনপ্রাপ্ত দিল্লির একটি সংস্থাকে আইসিডি এবং প্রাইভেট ফ্রেট টার্মিনাল (পিএফটি) করার জন্য দেয়। রেলের নতুন নিয়মে আইসিডি করা গেলেও পিএফটি করা যাবে না। তাই অনুমোদন নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। রেলের এই জবাব মেলার পরে নির্মাণ সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে গুয়াহাটি হাইকোর্টে মামলা দাখিল করে।
সংস্থা হাইকোর্টে জানায়, ২০০৯ সালে রেল এবং এসজেডিএ-র সঙ্গে জমি চুক্তির সময় রেলের পিএফটি নীতি বলে কিছুই ছিল না। শুধুমাত্র আইসিডি ছিল। ২০১৫ সালে রেল নতুন পিএফটি নিয়ম চালু করে। তত দিনে এসজেডিএ চুক্তি করে নেয়। তাই নতুন নিয়ম এখানে কার্যকরী নয়। জানুয়ারি মাসেই হাইকোর্ট রেলের যুক্তি খারিজ করে দিয়ে দ্রুত বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ দেয়। রেলের তরফে তা না করায় নতুন করে আইনের পথে গিয়েছে দিল্লির সংস্থাটি। এই প্রসঙ্গে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের ডিআরএম (কাটিহার) রবীন্দ্রকুমার বর্মা বলেন, ‘‘প্রকল্প সম্পর্কিত কিছু জটিলতা রয়েছে। বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে। আমরা বিষয়টি দেখছি।’’
পটনা, কানপুর, খাগারিয়ায় সংস্থার এই ধরনের আইসিডি এবং পিএফটি রয়েছে। সংস্থার শিলিগুড়ির টার্মিনাল ম্যানেজার আলম খান বলেন, ‘‘গত এক বছর ধরে পরিকাঠামো তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। শিল্পগোষ্ঠীগুলির খরচও বাড়ছে। উত্তরবঙ্গের শিল্পের অগ্রগতির জন্য রেল কর্তৃপক্ষের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা প্রয়োজন।’’
শিল্পপতি, ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এখন বিভিন্ন দেশ থেকে উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মালপত্র কলকাতা বন্দরে আসে। সেখানে শ্রমিক মজুরি আছে। সেই কন্টেনার সড়ক বা রেলে এনজেপি আনতে খরচ আছে। শিলিগুড়ি আইসিডি চালু হলে বন্দর থেকে রেল লাইনে কন্টেনার সাহুডাঙি আসবে। তার পরে তা উত্তরের জেলা বা পাশের রাজ্যে যাবে। খরচ অনেক বাঁচবে।
সিআইআই-এর উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান সঞ্জিত সাহা বলেন, ‘‘এখানে বাংলাদেশ, নেপাল, চিন সীমান্ত থাকায় আমদানি-রফতানির আরও সুযোগ রয়েছে।’’