গ্রেফতার তরুণী

দাম মেটানোর ছুতোয় চুরি

শাড়ি-টাড়ি পছন্দ করে আচমকাই তিনি বলে ওঠেন, ‘‘এই যা! টাকা আনতে ভুলে গিয়েছি!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০১:০৮
Share:

শাড়ি-টাড়ি পছন্দ করে আচমকাই তিনি বলে ওঠেন, ‘‘এই যা! টাকা আনতে ভুলে গিয়েছি!’’

Advertisement

সম্ভ্রান্ত চেহারার যুবতীকে দেখে বেশ শাঁসালো গ্রাহক বলেই মনে হয় দোকানের মালিকের। তা না হলে, ১ লক্ষ ২৮ হাজার টাকার শাড়ি কেনেন তিনি! বেছে বেছে দোকানের দামি দামি শাড়ি সামনে সাজিয়ে রেখে যুবতী বলেন, ‘‘এক জন কর্মচারীকে আমার সঙ্গে পাঠাবেন প্লিজ। কাছাকাছির কোনও এটিএম থেকে টাকা তুলে দিয়ে দেব।’’

মহিলা সঙ্গে করে দোকানের কর্মচারীকেও যখন নিয়ে যেতে চাইছেন, তখন তো আর সন্দেহের কোনও অবকাশ থাকারই কথা নয়। রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের নামকরা বেনারসি শাড়ির দোকানের মালিক তৎক্ষণাৎ ওই মহিলার সঙ্গে দোকানের এক কর্মচারীকে যেতে বলেন। ট্যাক্সি ডেকে এ বার দু’জনে বেরিয়ে যান।

Advertisement

ট্যাক্সিতে উঠে যুবতী ফোন করে একটি গাড়িকে কাছাকাছি আসতে বলেন। সেই গাড়িটি এলে নতুন শাড়ির প্যাকেট তুলে দেন গাড়িটিতে। নিজে রয়ে যান ট্যাক্সিতেই। সাদার্ন অ্যাভিনিউ পৌঁছে একটি এটিএমের সামনে ট্যাক্সি দাঁড় করান। নিজে এটিএমে ঢোকার সময়ে টাকা দিয়ে শাড়ির দোকানের কর্মচারীকে বলেন, ‘‘ওই দোকান থেকে একটু খাবার জল কিনে আনবেন প্লিজ।’’ কর্মচারী সাত-পাঁচ না ভেবে ঘাড় ঘুরিয়ে জল আনতে চলে যান। ফিরে এসে দেখেন, ট্যাক্সি নেই। এটিএম ফাঁকা। ওই শাড়ির দোকানের মালিক নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য ২৯ জুন লেক থানায় এই অভিযোগ দায়ের করেন।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে জুলাই মাসের ২৯ তারিখে গিরিশ পার্ক থানায় এক যুবতীর বিরুদ্ধে প্রায় একই ধরনের একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। গিরিশ পার্কের এক চাদরের দোকান-মালিক জয়প্রকাশ বারলিয়া অভিযোগ করেন, তাঁর দোকান থেকে ৮৪ হাজার টাকার চাদর কিনে একই ভাবে ওই দোকানেও এক যুবতী জানান যে তাঁর সঙ্গে টাকা নেই। বলেন, বাড়ি থেকে টাকা দিয়ে দেবেন। দোকানের এক কর্মচারীকে নিয়ে একটি ট্যাক্সিতে ওঠেন। ট্যাক্সি থেকে ফোন করে কাছাকাছি একটি গাড়ি ডেকে পাঠান। মাঝরাস্তায় একটি গাড়ি দেখিয়ে জানান, এটা তাঁরই গাড়ি। সদ্য কেনা চাদরগুলি ওই গাড়িতে তুলে দেন যুবতী। ওই কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে আরও একটু এগিয়ে একটি বাড়ির নীচে দাঁড় করান। জানান, উপর থেকে টাকা নিয়ে আসছেন। বলাই বাহুল্য, আর আসেননি তিনি।

পুলিশের জালে বুধবার ধরা পড়েছেন ৩৫ বছরের ওই যুবতী প্রিয়াঙ্কা শেঠিয়া। পুলিশ জানিয়েছে, অভিনব পদ্ধতিতে শহরের বড় বড় দোকানে ঘুরে জিনিসপত্র নিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়াই ছিল তাঁর কাজ। কিন্তু, কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তাঁকে। ওই দুই দোকানের সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে প্রিয়াঙ্কাকে চিহ্নিত করা হয়। তার পর শুরু হয় খোঁজ। শেষে নিউ টাউনের একটি ভাড়া করা ফ্ল্যাট থেকে তাঁকে তুলে এনেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, সেখানে বোনের সঙ্গে থাকেন প্রিয়াঙ্কা। এর আগে দক্ষিণ কলকাতায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।

পুলিশ জানিয়েছে, এর আগেও তাঁর নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছিল। এমনকী গ্রেফতারও করা হয়েছিল তাঁকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement