আলোর-পথযাত্রী: হাতেখড়ির স্লেট হাতে বাসন্তী মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
পড়াশোনার কি আর বয়স আছে! তাই বাহাত্তরেই শুরু করলেন বাসন্তী মণ্ডল। বসন্ত পঞ্চমীতে সরস্বতীর সামনে হাতেখড়ি হল বৃদ্ধার। সাক্ষী রইলেন ‘বিদ্যাসাগর’ও।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে বৃহস্পতিবার ছিল বসন্ত পঞ্চমী, সরস্বতী পুজো। এ দিন মেদিনীপুর শহরের বিধাননগরে হাতেখড়ি হয়েছে পেশায় পরিচারিকা বাসন্তীর। শ্বেতশুভ্রা সরস্বতী প্রতিমা আর বিদ্যাসাগরের ছবির সামনে প্রথম অক্ষর পরিচয়ের পরে বাসন্তী বলছিলেন, ‘‘এ বার আমিও অক্ষর চিনতে শিখব। লিখতে-পড়তে পারব। এ এক দারুণ প্রাপ্তি।’’ উদ্যোগটা ‘মেদিনীপুর ডট ইন’-এর। সংস্থার কর্ণধার অরিন্দম ভৌমিকের কথায়, ‘‘মেদিনীপুর শিক্ষায় অগ্রণী। তবে এখনও সাক্ষরতা কর্মসূচির প্রয়োজন রয়েছে। সাক্ষরতার প্রসারেই আমাদের এই উদ্যোগ।’’
বাসন্তীর আদি বাড়ি বেলদায়। অনেকদিন আগেই সেখান থেকে মেদিনীপুর শহরে চলে এসেছেন। এখন থাকেন রাঙামাটির কাছে ঝর্নাডাঙায়। এক চিলতে ঘর রয়েছে তাঁর। বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে দিন গুজরান করেন। অক্ষর পরিচয় না থাকায় এতদিন টিপসই দিয়েই কাজ চালাতে হত। সেই আঁধার এ বার ঘুচবে।
বিদ্যাসাগরের জন্মভূমি বীরসিংহ এই পশ্চিম মেদিনীপুরেই। বর্ণপরিচয়ের স্রষ্টা, বাংলা ভাষার প্রাণপুরুষ মানুষটির জন্ম দ্বিশতবর্ষ চলছে। তবে তাঁর নিজের জেলাতেই ঘোচেনি নিরক্ষরতার অন্ধকার। অরিন্দমরাও জানালেন, মেদিনীপুর শহরের যে এলাকায় বাসন্তী থাকেন, সেখানেই এখনও অনেকে নিরক্ষর রয়েছেন। তাঁদের সাক্ষর করার চেষ্টা করবেন তাঁরা। এই বৃদ্ধাকে সামনে রেখেই সেই উদ্যোগ শুরু হল।
এ দিন বাসন্তী চক দিয়ে স্লেটে লেখেন অ, আ, ক, খ। এমন বাসন্তীরা সাক্ষর হলেই তো বিদ্যাসাগরের স্বপ্ন ষোলোআনা পূরণের দিকে এগনো সম্ভব হবে।