শুভম রায়
বাবা লটারির টিকিট বিক্রি করেন। সীমিত আয়ে সংসার চালানোই কঠিন। ফলে উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান শাখায় একাধিক টিউশন নিলেও, কোচিং সেন্টারে পড়ার সুযোগ হয়নি তাঁর। কিন্তু অক্লান্ত পরিশ্রম আর বড় হওয়ার জেদ যে তরুণের মধ্যে রয়েছে, তাঁকে কি আটকানো যায়! নিট বা সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফল হয়ে সেটাই ফের প্রমাণ করলেন বীরভূমের শুভম রায়। সিউড়ির সাজানোপল্লির বাসিন্দা শুভম এ বার ওই পরীক্ষায় দেশের ১৫ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৪,৭৬৪ র্যাঙ্ক করেছেন। মোট ৭২০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন পেয়েছেন ৬১২।
এই সাফল্যে আনন্দিত শুভমের বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা। শুভমের মা ছন্দাদেবীর কথায়, ‘‘আর্থিক দৈন্যতা সত্ত্বেও নিজের লক্ষ্যে সব সময় ১০০ শতাংশ সৎ থেকেছে ছেলে। তারই পুরস্কার এটা। আনন্দ প্রকাশের ভাষা নেই।’’ শুভম বলছেন, ‘‘যে র্যাঙ্ক হয়েছে, তাতে রাজ্যের যে কোনও সরকারি কলেজে সুযোগ পেতে পারি বলেই মনে করছি। এটাই তৃপ্তিদায়ক।’’
বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রবীর সেনগুপ্ত বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে দশম হয়েছিলেন শুভম। উচ্চ মাধ্যমিকে এ বছর তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৯৭ শতাংশের বেশি। তার পরে সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সাফল্য। কিন্তু, শুভমদের পরিবার আদতে খয়রাশোলের কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা। বাবা পরিমল রায় আদি বাসস্থানের কাছেই, ভীমগড়ে লটারির টিকিট বিক্রি করে কোনও ভাবে সংসার চালান। অনটন পরিবারের নিত্য সঙ্গী।
পরিমলবাবু বলছেন, ‘‘ছেলের মাধ্যমিকের সময় যে কষ্ট ছিল, তা লাঘব হয়েছিল অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায়। বইপত্র দেওয়া থেকে নিখরচায় পড়ানো, যে সেভাবে পেরেছেন সাহায্য করেছেন। ছেলে তার দাম দিয়েছে। ’’
সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞ শুভমও। তিনি বলছেন, ‘‘চাইব ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মানুষের এমন উপকার মনে রাখতে।’’ তবে, বাবা-মায়ের পাশে থাকাটাই সফাল্যের পিছনে সবচেয়ে বড় রসদ মনে করছেন তিনি। শুভমের কথায়, ‘‘লকডাউনের সময় বাবার আয় আরও কমে গিয়েছিল। কিন্তু কখনও আমাকে পড়াশোনার বাইরে কোনও কিছুতে ব্যস্ত হতে দেননি ওঁরা। মন দিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি। তাতেই কাজ হল।’’