ফাইল চিত্র।
মাঝে মাত্র ১৯টি দিন। তার মধ্যে তাঁর দাবি মতো কামতাপুর রাজ্য নিয়েই ছাড়বেন, মায়ানমারের গোপন ডেরা থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে জানালেন কেএলও প্রধান জীবন সিংহ। তিনি বলেন, “আমাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। ১৫ অগস্টের মধ্যেই আমরা রাজ্য নেব। যা করার করা হচ্ছে।’’
তবে এই ক্ষেত্রে জীবনের চাহিদা ও প্রাপ্তির মধ্যে একটি তফাত থেকে যাচ্ছে। যে কামতাপুর রাজ্য জীবন বরাবর দাবি করে এসেছেন, তাতে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলার সঙ্গে অসমের চারটি জেলাও ছিল। এ দিন কিন্তু জীবনের ধর্মপুত্র দেবরাজ দিবাকর সিংহ জানান, অসমে স্বশাসিত পরিষদ রয়েছে। দেবরাজ এ-ও বলেন, “আমরা ভারতের সংবিধানের ভিতরে থেকেই আলোচনা চালাচ্ছি।’’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাই জীবনের সঙ্গে পুরো শান্তি প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। তিনি এক দিকে দেবরাজ, অন্য দিকে প্রাক্তন কেএলও জঙ্গিদের মাধ্যমে জীবনের সঙ্গে কথা এগিয়েছেন। প্রাক্তন কেএলও-রা কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, যে ‘চার্টার অব ডিম্যান্ড’ বা দাবিদাওয়ার তালিকা পেশ করেছিলেন জীবন, তাতেই সম্ভবত আলোচনা আটকে গিয়েছে। কারণ, স্বাধীন কামতাপুর রাজ্যে অসমের যে চার জেলা আছে, তা দিতে কেন রাজি হবেন হিমন্ত? তার পরেই বুধবার দেবরাজ জানান, ওই চার জেলায় এমনিতেই স্বশাসিত পরিষদ আছে। জীবনও জানান, তাঁর মূল লক্ষ্য ‘কলকাতার শাসন’ থেকে কামতাপুরিদের উদ্ধার করা।
জীবন জানান, ১৫ অগস্ট শান্তি চুক্তি সেরে দিল্লিতে ভারতের ‘আজাদি কি অমৃত মহোৎসবের’ সঙ্গে কেএলও-র জন্যও ‘স্বাধীনতার অমৃত’ পান করবেন। সঙ্গে থাকবেন দেবরাজ। দেবরাজ জানান, এর মধ্যে গুয়াহাটি পৌঁছে গিয়েছেন অর্ধশতাধিক প্রাক্তন কেএলও সদস্য। কিন্তু টম অধিকারীর মতো কয়েক জনকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আটকে রেখেছে। তিনি তাই বাধ্য হয়ে সেখানকার পুলিশের শেখানো বুলি আওড়াচ্ছেন। যদিও টম স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তাঁকে পুলিশ আটকে রাখেনি।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলার সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘আলাদা রাজ্য নিয়ে কোনও প্রস্তাব লোকসভায় নেই। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই লোকসভায় একটি লিখিত প্রশ্নের উত্তরে সে কথা জানিয়েছেন। তার পরেও ১৫ অগস্টের মধ্যে আলাদা রাজ্যের কথা বলা হাস্যকর।’’ তাঁর দাবি, জীবন সিংহকে অসম ও পশ্চিমবঙ্গের কয়েক জন বিজেপি নেতা ভুল বোঝাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কেএলও এখন যে বলছে নম্নি অসম বাদ, তাতে মানুষ সব বুঝতে পারছে। এর মধ্যে আবার তৃণমূলকে ভয় দেখানোর চেষ্টাও চলছে। সব হচ্ছে বিজেপির কথাতেই।’’ বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসু বলেন, ‘‘শান্তি প্রক্রিয়া সব সময়ই স্বাগত। আমরা চাই শান্তি ও উন্নয়ন। সেই লক্ষ্যেই কাজ করা হচ্ছে। আর আলাদা রাজ্য নিয়ে দলের অবস্থান রাজ্য নেতৃত্ব আগেই জানিয়েছেন।’’
(সহ-প্রতিবেদন: নমিতেশ ঘোষ)