প্রতীকী ছবি।
বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টি করা জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়দার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এ রাজ্য থেকে ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেরল থেকে গ্রেফতার হয়েছে আরও কয়েক জন। এই ঘটনার জেনে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে বেশ কিছু প্রশ্ন।
এমন একটি অবস্থায় নেট দুনিয়ায় দেদার বিকোচ্ছে ওয়্যারলেস সেট। যা ব্যবহার করে ‘ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি’ মারফত কোনও নিরাপত্তা বাহিনীর অন্দরের কথা জানতে পেরে যেতে পারেন যে কেউই। কলকাতায় বসে অনলাইনে টাকা দিয়ে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ওই ওয়্যারলেস সেট কিনে তার সাহায্যে আকাশে উড়ে যাওয়া পাইলটের সঙ্গে বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর কথোপকথনও শোনা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই আশঙ্কা থেকেই কেন্দ্রের যোগাযোগ মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে ইমেল করে অভিযোগ জানিয়েছেন কলকাতার হ্যাম রেডিয়ো অপারেটর আর্য ঘোষ।
কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের দুই কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। শহরে বা রাজ্যে বসে কারা অনলাইনে এই ওয়্যারলেস সেট কিনছেন এবং তা কী ধরনের কাজে ব্যবহার করছেন তা-ও খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা।
আর্যবাবু জানিয়েছেন, বিষয়টি নতুন নয়। বছর তিনেকের বেশি সময় ধরে অনলাইনে এই ধরনের ওয়্যারলেস সেট কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগ, সাধারণ ভাবে গোয়েন্দা বা পুলিশ যাতে আড়ি পাততে না পারে, তার জন্য জঙ্গিরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে নিত্যনতুন মাধ্যম বেছে নিচ্ছে। উল্টো দিকে, পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর নিজেদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আড়ি পাতার ব্যবস্থা সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে।
সাধারণত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন বাহিনী নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য এই ওয়্যারলেস সেট ব্যবহার করে। বার্তা পৌঁছনোর জন্য এক-একটি নির্দিষ্ট মাত্রার শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে প্রতিটি বাহিনী। আর্যবাবু জানিয়েছেন, ওই নির্দিষ্ট মাত্রার খোঁজ পেলেই কলকাতায় বসে যে কোনও ব্যক্তি অনলাইনে কেনা ওয়্যারলেস সেট ব্যবহার করে নিকটবর্তী থানা বা গোয়েন্দা দফতরের কথোপকথন শুনতে পারবেন। এমনকি, বিমানবন্দরের কাছাকাছি বসবাসকারী কোনও ব্যক্তি ওই ভাবেই পাইলট ও এটিসি-র বার্তা শুনতে পারবেন। চাইলে ওই ব্যক্তি তাঁদের সঙ্গে কথাও বলতে পারেন।
নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও যাঁদের ওয়্যারলেস সেট ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরেরা। আর্যবাবুর কথায়, তাঁদের পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স পেতে হয়। নির্দিষ্ট কিছু সংস্থার কাছ থেকে তাঁরা সেট কেনেন। কেনার সময়ে লাইসেন্স দেখাতে হয়। আর্যবাবু বলেন, “মূলত প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার সময়ে প্রশাসনকে সাহায্য করার জন্য আমরা এগিয়ে আসি। এ ছাড়াও সারা বছর ধরে হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরেরা নিজেদের মধ্যে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখি এবং শব্দতরঙ্গ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাই। বিদেশের হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরদের সঙ্গেও নিয়মিত শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়।”
প্রতিটি রাজ্যেই যোগাযোগ মন্ত্রকের অধীনে একটি করে ইন্টারন্যাশনাল ওয়্যারলেস মনিটরিং স্টেশন রয়েছে। কলকাতায় সেটি রয়েছে বজবজের কাছে। পুলিশ থেকে হ্যাম রেডিয়ো— সব ধরনের ওয়্যারলেস যোগাযোগের উপরে তারা নজরদারি চালায়। প্রত্যেক অপারেটরের কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া একটি নির্দিষ্ট নম্বর (কল সাইন নম্বর) থাকে। সেটা দিয়ে কে, কী বলছেন তা-ও বোঝা যায়। আর্যবাবুর অভিযোগ, যাঁরা বাজার থেকে ওয়্যারলেস কিনছেন, তাঁদের এই নম্বর থাকে না। ফলে, তাঁদের খুঁজে বার করা মুশকিল। এই ফাঁক গলেই বাড়ছে নাশকতামূলক কাজের আশঙ্কা।