Diploma Doctors

ডিপ্লোমা ডাক্তার: শঙ্কা কেন্দ্রীয় বরাদ্দ নিয়েই

ডিপ্লোমা ডাক্তার পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হলে, তাঁদের বেতন কোন খাতে হবে তা স্পষ্ট নয়। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, রাজ্য নিজে বেতন দিলে কেন্দ্রের আপত্তির কোনও কারণ নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৩ ০৭:০৯
Share:

প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে ডিপ্লোমা ডাক্তারদের কাজে লাগানোরও পরিকল্পনা করছে সরকার। প্রতীকী ছবি।

ডিপ্লোমা চালুর মাধ্যমে ডাক্তারের ঘাটতি পূরণ করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখার প্রস্তাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে ডিপ্লোমা ডাক্তারদের কাজে লাগানোরও পরিকল্পনা করছে সরকার। কিন্তু আর্থিক এবং বাস্তবের দিক থেকে বিষয়টি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, প্রতি বছর জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (ন্যাশনাল হেলথ মিশন বা এনএইচএম) বিপুল অর্থ পায় রাজ্য। যাতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অনেক কাজকর্ম হয়। তা ছাড়া ওই বরাদ্দ থেকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বহু কর্মীর বেতন দেওয়া হয়। তাই তাঁদের ব্যবহার করা হয় কেন্দ্রের বিধি মেনেই। ডিপ্লোমা ডাক্তার পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হলে, তাঁদের বেতন কোন খাতে হবে তা স্পষ্ট নয়। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, রাজ্য নিজে বেতন দিলে কেন্দ্রের আপত্তির কোনও কারণ নেই। তবে বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে রাজ্যের উপর আর্থিক বোঝা আরও চাপবে। কিন্তু মিশনের তহবিল থেকে ওই চিকিৎসকদের বেতন দেওয়ার প্ররিকল্পনা কেন্দ্র হয়ত মেনে নেবে না। কারণ, প্রথাগত চিকিৎসকদের গোটা বিষয়টা পরিচালিত হয় জাতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু ডিপ্লোমা ডাক্তারদের ক্ষেত্রে তেমন কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই। তাঁদের পাঠ্যক্রম কী হবে, প্রশিক্ষণের ধরন বা গুণগত মান কাউন্সিলের অনুমোদন পাবে কি না, নিশ্চিত নয়।

তবে ডিপ্লোমা-ডাক্তার পরিকল্পনার কথা মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন বৃহস্পতিবার। শুক্রবারই রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে সেই বিবৃতিতে ‘ডিপ্লোমা ডাক্তার’ কথাটির উল্লেখ রাখা হয়নি। বলা হয়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতিতে ‘হেলথ কেয়ার প্রফেশনাল’-দের তিন বছরের ক্লাস এবং হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে কমিটি। তবে এক মাসের মধ্যে ওই কমিটি কী ভাবে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র। তাঁর মতে, ওই কমিটিতে যাঁরা আছেন তাঁরা সরকারি উচ্চ পদে আসীন। তাই যেনতেন প্রকারে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন উদ্দেশ্য হতে পারে। কটাক্ষের সুরে তিনি বলেছেন, “গ্রামেগঞ্জে যন্ত্রপাতি, পরিকাঠামোর অভাব আছে। তাই অভিজ্ঞ চিকিৎসক সেখানে পাঠিয়ে শহরে মন্ত্রীসান্ত্রীদের চিকিৎসার ভার তো ডিপ্লোমা ডাক্তারদের দিতে পারে।”

Advertisement

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিধি বা কেন্দ্রীয় নিয়মের নড়চড় হলেই বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস বা একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের জট এখনও কাটেনি। এই অবস্থায় স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ এখনও বাধাহীন। আটঘাট না বেঁধে এমন পদক্ষেপ করা হলে সেই বরাদ্দও কতদূর মসৃণ থাকবে, তা নিয়েই সন্দেহ দানা বাঁধছে সংশ্লিষ্ট মহলে। প্রবীণ এক আমলার কথায়, “বর্তমানে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠলে মেডিক্যাল কাউন্সিলে অভিযোগ দায়ের করা সম্ভব। ডিপ্লোমা ডাক্তারদের ক্ষেত্রে তেমন ঘটনা ঘটলে কে দায়িত্ব নেবে, তা স্পষ্ট নয় এখনও।”

প্রশাসনিক সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, বেশ কয়েক বছর আগে কোয়াক-ডাক্তারদের ‘ব্রিজ-কোর্স’ করানোর একটা পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য। উদ্দেশ্য ছিল, এমনিতেই এমন ডাক্তারেরা গ্রামগঞ্জে চিকিৎসা করে থাকেন। যা নিয়ন্ত্রণ করা কার্যত অসম্ভব। ফলে তাঁরা যেটুকু চিকিৎসা করছেন, তা যেন ঠিক মতো হয়, তা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, গুরুতর কোনও কাটাছেঁড়া না করা, জটিল কোনও বিষয়ে না বুঝে চিকিৎসা ঠেকানোও ছিল উদ্দেশ্য। বেশ কিছু সংখ্যক কোয়াক ডাক্তারের প্রশিক্ষণও হয় সেই সময়। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।

তবে নার্সিং কোর্স নিয়ন্ত্রিত হয় নার্সিং কাউন্সিলের মাধ্যমে। প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, এখন তেমন প্রশিক্ষিত নার্সদের মাস ছ’য়েকের পৃথক প্রশিক্ষণ দিয়ে ন্যূনতম চিকিৎসায় সহায়ক হিসাবে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে কাজে লাগানো হয়। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, তেমন নার্সদের এক-দু’বছরের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে আরও ভাল ভাবে তাঁদের কাজে লাগানো সম্ভব। প্রাক্তন এক কর্তার কথায়, “ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া-সহ একাধিক দেশে এই ব্যবস্থা খুব প্রচলিত। আমাদের দেশেও এমন উদাহরণ পাওয়া যাবে। সেই পদ্ধতি তুলনায় বরং বিজ্ঞানসম্মত।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement