সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় অনেকেই বলছেন, ‘কাগজ দেখাব না’। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
অনেকেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে মুখ খুলেছেন। কেউ কেউ মুখ বুজেও রয়েছেন। কিন্তু বাংলার সুশীল সমাজের যাঁরা মুখ খুলেছেন সিএএ নিয়ে, তাঁদের সিংহ ভাগই এই নতুন আইনের বিরুদ্ধে। সোমবার সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা এক ভিডিয়ো সন্ধ্যার মধ্যে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। সব্যসাচী চক্রবর্তী থেকে সুমন মুখোপাধ্যায়, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় থেকে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়— সিএএর বিরোধিতায় সবাই বলছেন— ‘কাগজ দেখাব না’।
সপ্তাহ দুয়েক আগেই দেশ জুড়ে ভাইরাল হয়েছিল লেখক বরুণ গ্রোভারের একটা ভিডিয়ো। হম কাগজ নহি দিখায়েঙ্গে— সিএএ এবং এনআরসির বিরোধিতা করে বরুণ গ্রোভার আবৃত্তি করছিলেন সে ভিডিয়োয়। সেই কবিতারই ভাবানুবাদ করা হয়েছে বাংলায়। তার পরে অভিনেতা থেকে লেখক, নাট্য ব্যক্তিত্ব থেকে গায়ক— বাংলার সুশীল সমাজের এক ঝাঁক উজ্জ্বল মুখ ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে গলা মিলিয়েছেন সে কবিতায়।
সব্যসাচী, সুমন, ধৃতিমান, স্বস্তিকা ছাড়াও গায়ক রূপম ইসলাম, চলচ্চিত্র নির্মাতা তথা অভিনেত্রী কঙ্কনা সেনশর্মা, লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারী, অভিনেত্রী চিত্রাঙ্গদা— অনেককে দেখা গিয়েছে এই ভিডিয়োও। যাঁর তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছে এই ভিডিয়ো, তিনিও ছবি বানান— রনি সেন। তাঁর কথায়, ‘‘সিএএর বিরোধিতা তো দেশ জুড়েই চলছে। কিন্তু তার মাঝেও অনেকে এই বিরোধিতাকে রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন। তাই আমাদের মনে হচ্ছিল যে, রাজ্যের সাধারণ মানুষকে বোঝানো দরকার, এই আন্দোলন কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নয়। বোঝানোর দরকার ছিল যে, কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন যাঁরা, তাঁরাও স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সিএএর বিরোধিতা করছেন।’’
এই ভিডিয়োয় যাঁদের দেখা গিয়েছে, তাঁরা সকলে এই মুহূর্তে কলকাতায় নেই। কিন্তু সবাই নিজের নিজের মতো করে সহযোগিতা করেছেন বলে রনি জানালেন। বললেন, ‘‘কেউ মুম্বইতে রয়েছেন, কেউ শান্তিনিকেতনে। ফলে কলকাতার পাশাপাশি মুম্বইতে বা শান্তিনিকেতনেও শুট করেছি আমরা। কিন্তু ব্যস্ততা সত্ত্বেও সবাই এত সাগ্রহে সাড়া দিয়েছেন, যে ভিডিয়োটা খুব তাড়াতাড়ি তৈরি করে ফেলা গিয়েছে।’’
আরও পড়ুন: দিলীপের ‘গুলি’ মন্তব্যে বিজেপিতে সঙ্ঘাত, সরব বাবুল-সহ অনেকে
রূপমের কথায়, ‘‘সিএএর বিরোধিতা যে করছি, সেটা তো সবাই জানেন। আমার স্ত্রী বললেন, একটা ছেলে এ রকম একটা ভিডিয়ো বানাচ্ছে, তুমি ওর হয়ে কয়েকটা লাইন বলে দেবে? আমি বলে দিলাম। কাগজ দেখাব না— এটাই শেষ কথা।’’
চিত্রাঙ্গদা বললেন, ‘‘ছোট থেকে জেনে এসেছি, আমাদের দেশটা একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এই দেশটা অন্য অনেক দেশের থেকে আলাদা, এখানে সবাই মিলে আমরা একসঙ্গে থাকি— এটা জেনেই বড় হয়েছি। এখন ধর্মের ভিত্তিতে একটা আইন তৈরি হতে দেখে আর মেলাতে পারছি না। আমার মনে হয়েছে, এর বিরোধিতা করা দরকার।’’
আরও পড়ুন: আটকে দুই বিল, বিরোধীর গলায় রাজভবনের সুর, বৈঠক তবু সংশয়ে
সকালে পোস্ট হওয়া ভিডিয়ো সন্ধ্যার মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত রনিরা। সিএএ বিরোধিতায় এ রকম ভাবেই আরও কিছু করা যায় কি না, তা-ও ভাবা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।