ED Summons Dev

ভাষাদিবসের কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দেব, ইডির ডাকে যাচ্ছেন না? তবে নেই শুভাপ্রসন্ন! বিতর্ক এড়াতে?

সকাল ১১টায় দিল্লিতে ইডির দফতরে দেবকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। বিকেল ৪টেয় রাজ্য সরকারের ভাষাদিবসের অনুষ্ঠান। ফলে দেব দিল্লিতে ইডির দফতরে আদৌ হাজির হবেন কি না, তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০০
Share:

দেব (বাঁ দিকে), মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (মাঝে), চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

ঘাটালের সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে দেব কি বুধবার দিল্লিতে ইডির সদর দফতরে হাজিরা দেবেন? তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জল্পনা। কারণ, রাজ্য সরকারের ভাষাদিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি আমন্ত্রিতের তালিকায় রয়েছেন দেবও। এই প্রেক্ষাপটেই প্রশ্ন উঠছে, দেব কি দিল্লিতে ইডির কাছে হাজিরা দেবেন বুধবার? পাশাপাশি, ওই অনুষ্ঠানে রাজ্যের তাবড় শিল্পীদের ডাক পড়লেও বাদ পড়েছে চিত্রকর শুভাপ্রসন্নের নাম। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, গত বার এই ভাষাদিবসের মঞ্চেই ‘পানি’ বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বর্ষীয়ান চিত্রশিল্পী।

Advertisement

২১ ফেব্রুয়ারি দেবকে দিল্লিতে ইডির সদর দফতরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, আর্থিক তছরুপ মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় তারা। সে সময় দেবের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যদিও দেবের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানানো হয়েছিল, ঘাটালের সাংসদকে যত বার ডেকে পাঠানো হবে, তত বারই তিনি যাবেন। তদন্তে সহযোগিতা করবেন।

এর আগে ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নিজ়াম প্যালেসে দেবকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছিল, গরু পাচারকাণ্ডে বিভিন্ন সাক্ষীকে জেরা করার সময় দেবের নাম উঠে এসেছিল। সেই কারণে তাঁকে ডাকা হয়েছিল বলে মনে করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে দেব জানিয়েছিলেন, ‘‘একজন ব্যক্তিকে চিনি কি না, সেই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। আমার বক্তব্য জানিয়েছি। মনে হয় আর ডাকবে না।’’ ২০২৩ সালে দেবের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ করেছিলেন বিজেপি বিধায়ক তথা অভিনেতা হিরণ। তাঁর অভিযোগ, গরু পাচারকাণ্ডে ধৃত এনামুল হকের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা নিয়েছেন ঘাটালের সাংসদ। দেব পাল্টা জানিয়েছিলেন, তথ্যপ্রমাণ থাকলে ইডি বা সিবিআইয়ের কাছে যান হিরণ।

Advertisement

সাম্প্রতিক অতীতে দেবের রাজনৈতিক জীবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। তাতে ইন্ধন যুগিয়েছিল দেবের কিছু কাজ। যেমন, নিজের লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত একাধিক সংগঠনের প্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়া, লোকসভার এই মেয়াদের শেষ অধিবেশনের ইঙ্গিতপূর্ণ ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা প্রভৃতি। এতে অনেকের মনে হয়েছিল, ঘাটাল থেকে আসন্ন লোকসভা ভোটে দেব আর দাঁড়াতে চান না। যদিও সরাসরি এ ব্যাপারে কখনওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানাননি দেব। এর মধ্যেই তৃণমূলনেত্রী মমতা এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের সঙ্গে বৈঠক করেন দেব। তার পরেই ‘খেলা ঘুরে যায়’। দেব প্রথম বার এ বিষয়ে মুখ খুলে বলেন, “আমি ছাড়তে চাইলেও রাজনীতি আমাকে ছাড়বে না!” এই প্রেক্ষাপটে যখন দেবের আবার ঘাটালের প্রার্থী হওয়া একপ্রকার ‘চূড়ান্ত’, তখনই ইডির ডাক আসে। বলা হয় বুধবার দিল্লির সদর দফতরে হাজির হতে। প্রাথমিক ভাবে, দেবের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছিল, দেব হয়তো ইডি অফিসে যাবেন হাজিরা দিতে। কিন্তু একই দিনে ভাষাদিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রের শুরুর দিকে মুখ্যমন্ত্রীর নামের পরই জ্বলজ্বল করছে দেবের নাম। ফলে ধন্দ তৈরি হয়েছে যে, আদৌ দেব দিল্লি যাবেন কি না তা নিয়ে। কারণ, আমন্ত্রণসূচিতে অনুষ্ঠান শুরুর সময় লেখা হয়েছে বিকেল ৪টে। দিল্লিতে ইডির দফতরে দেবের তলব সকাল ১১টায়।

ইডির তলবের প্রেক্ষিতে দেব যাবেন কি না তা নিয়ে তৈরি হওয়া জল্পনাকে রীতিমতো পাল্লা দিচ্ছে আর এক জল্পনা। তা হল, আমন্ত্রণপত্রে বর্ষীয়ান চিত্রকর শুভাপ্রসন্নের নাম না থাকা। প্রসঙ্গত, গত বার ভাষাদিবসের এই মঞ্চ থেকেই ‘পানি’ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল শুভাপ্রসন্নের সঙ্গে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। এ বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলেই এই প্রতিবেদনে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

গত বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শুভাপ্রসন্ন তাঁর ভাষণে বাংলা ভাষায় ‘পানি’ বা ‘দাওয়াত’-এর মতো শব্দের অনুপ্রবেশ নিয়ে তাঁর উদ্বেগ এবং অনুযোগের কথা বলেছিলেন। মঞ্চ থেকে শুভাপ্রসন্নকে ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়েও মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছিলেন, তিনি প্রবীণ শিল্পীর সঙ্গে একমত নন। ভাষার প্রবেশেই ভাষার ভান্ডার বৃদ্ধি হয়। যদিও তার পর আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের জবাবে ‘পানি’ ও ‘দাওয়াত’ শব্দ প্রসঙ্গে অনড় অবস্থানই বজায় রেখেছিলেন শুভাপ্রসন্ন। তিনি এমনও দাবি করেছিলেন যে, মমতার বক্তব্য ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’। কিন্তু তিনিই সঠিক। সেই সূত্রেই তাঁর সঙ্গে একই মঞ্চে থাকা কবি সুবোধ সরকার এবং প্রাবন্ধিক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়িকে ‘তেলবাজ’ বলে আক্রমণ করেছিলেন শুভাপ্রসন্ন। সেই ‘ভাষাযুদ্ধে’ তৃণমূল-শুভাপ্রসন্নের দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল কয়েকশো যোজন। তার পর বছর ঘুরে আবারও একটি ২১ ফেব্রুয়ারি। আবারও ভাষাদিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজনে রাজ্য সরকার। তাবড় শিল্পী, সাহিত্যিক সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেও, এ বার তাতে নেই শুভাপ্রসন্নের নাম। বিতর্ক এড়াতেই কি এই সিদ্ধান্ত? তা অবশ্য জানা যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement