আইপিএস অফিসার যশপ্রীত সিংহ। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার)।
পশ্চিমবঙ্গে শিখ আইপিএস অফিসার যশপ্রীত সিংহের ‘চরিত্রহনন’ করেছে বিজেপি! এই দাবি তুলে সমাজমাধ্যমে ধিক্কার জানালেন অমৃতসরের শিরোমণি গুরদ্বার প্রবন্ধক কমিটির সভাপতি হরজিন্দর সিংহ ধামি। এ-ও জানালেন, যে নেতাদের এ ধরনের চিন্তাভাবনা, তাঁদের মনে রাখা উচিত যে, এ দেশের স্বাধীনতারক্ষার জন্য সব থেকে বেশি আত্মত্যাগ করেছেন শিখেরা।
সন্দেশখালি থানার অন্তর্গত ধামাখালিতে এক আইপিএস আধিকারিককে ‘খলিস্তানি’ বলা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছে, ওই মন্তব্য করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পরে রাজ্য পুলিশের তরফেও একই অভিযোগ করা হয়। তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রতিবাদে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তা নিয়ে সমাজমাধ্যমে সরব হলেন শিরোমণি গুরদ্বার প্রবন্ধক কমিটির সভাপতি ধামি। তিনি লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে শিখ আইপিএস অফিসার যশপ্রীত সিংহের ইচ্ছাকৃত ভাবে যে চরিত্রহনন করেছে বিজেপি, তাকে ধিক্কার জানাচ্ছি। যে রাজনীতিকদের এ রকম চিন্তাভাবনা, তাঁদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, এ দেশের স্বাধীনতা এবং রক্ষার জন্য সব থেকে বেশি আত্মত্যাগ করেছেন শিখেরা। শিখদের কারও শংসাপত্রের প্রয়োজন নেই। তারা জানে কী ভাবে দেশের জন্য কর্তব্য পালন করতে হয়, নিজেদের ঐতিহ্য, প্রথা বজায় রেখে।’’
গুরুদ্বার কমিটির সভাপতি ধামি অভিযোগ করেছেন যে, দেশে ‘হিংসার আবহ’ তৈরির চেষ্টা চলছে। তিনি আঙুল তুলেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেও। তাঁর কথায়, ‘‘এটা বড় প্রশ্ন যে, এই ধরনের লোকজন দেশে হিংসার আবহ তৈরির চেষ্টা করছেন, কিন্তু সরকার চুপ রয়েছে। যাঁরা এ সব করছেন, তাঁদের কড়া শাস্তি দেওয়া উচিত, যাতে অন্য জায়গায় যাঁরা সৎ ভাবে নিজের কাজ করছেন, তাঁদের এ ধরনের হিংসার শিকার হতে না হয়।’’
ওই আইপিএস অফিসারের উদ্দেশে করা ‘খলিস্তানি’ মন্তব্য নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজ্য পুলিশও। এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার মঙ্গলবার বিকেলে সন্দেশখালি থানায় সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু আঙুল উঁচিয়ে যশপ্রীত সিংহকে খলিস্তানি বলে মন্তব্য করেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই মন্তব্য অসংবেদনশীল, প্ররোচনামূলক এবং ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করেছে। এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা করছি।’’ পরে রাজ্য পুলিশের তরফে এক্স (সাবেট টুইটার)-এ ওই সময়কার ঘটনার ভিডিয়ো পোস্ট করে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর নেতৃত্বে মঙ্গলবার সন্দেশখালি গিয়েছিলেন বিজেপির কয়েক জন বিধায়ক। ধামাখালি এলাকায় ব্যারিকেড গড়ে শুভেন্দুদের আটকে দেয় পুলিশ। সেই সময়েই পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয় বিজেপি বিধায়ক এবং কর্মী-সমর্থকদের। অভিযোগ, সে সময় পাগড়িধারী এক পুলিশ অফিসারকে ‘খলিস্তানি’ বলে মন্তব্য করা হয়। মন্তব্যটি উড়ে এসেছিল বিজেপি নেতৃত্বের তরফ থেকে। প্রথমে সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্তার সঙ্গে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের বাদানুবাদের ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছিল। তাতে ওই অফিসারকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি পাগড়ি পরে আছি বলে আমি খলিস্তানি? এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’’ তার পর অগ্নিমিত্রা এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে লেখেন, ‘‘কেউ কাউকে খলিস্তানি বলেনি।’’
এই ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ভিডিয়ো এক্সে পোস্ট করেছিলেন। সেটি রিপোস্ট করে অগ্নিমিত্রা লিখেছিলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে ভিডিয়ো প্রকাশ করুক তৃণমূল। পুলিশ তৃণমূলের ছদ্মবেশে সন্দেশখালিতে কাজ করছে।’’ অগ্নিমিত্রার পোস্টটিকে রিপোস্ট করে পাল্টা একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনেছে তৃণমূল। শাসকদলের আইটি সেলের অন্যতম নেত্রী অদিতি গায়েন একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ফুটেজ পোস্ট করেছেন। সেখানে পুরুষ কণ্ঠে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘এটা হচ্ছে খলিস্তানি।’’ সেই ফুটেজে শুভেন্দুকেও দেখা যাচ্ছে। তৃণমূলের দাবি, ওই পুরুষ কণ্ঠটি শুভেন্দুরই। আনন্দবাজার অনলাইন যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি।
বিতর্ক যখন দানা বাঁধতে থাকে তখন শুভেন্দু বলেন, ‘‘পাকিস্তানি-খলিস্তানি এ সব বলার দরকার নেই আমাদের। ওই অফিসার রূঢ় ব্যবহার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিজের নম্বর বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমি বা আমাদের সঙ্গীরা কোনও ধর্মকে আক্রমণ করে কিছু বলিনি। বলবও না। আমরা গুরু নানকজিকে প্রণাম করি। শিখ ধর্মকে সম্মান করি। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে শিখদের।’’