প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান’ এবং বাংলার ‘স্বাস্থ্যসাথী’ নিয়ে টানাপড়েন দীর্ঘদিনের। তারই মধ্যে ‘ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর কন্ট্রোল অব ব্লাইন্ডনেস অ্যান্ড ভিজ়ুয়াল ইমপেয়ারমেন্ট’ বা ‘জাতীয় অন্ধত্ব নিবারণ কর্মসূচি’ চালু থাকাকালীন পশ্চিমবঙ্গ হাতে নিয়েছে ‘চোখের আলো’ প্রকল্প। একই পরিষেবা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার নতুন প্রকল্প ঘোষণা করল কেন, প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, ‘চোখের আলো’ প্রকল্পে সকলকে নিখরচায় চোখের চিকিৎসা দেওয়া হবে, ছানির অস্ত্রোপচার হবে এবং চশমা দান করা হবে। প্রশ্ন উঠছে, দেশব্যাপী দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা জাতীয় অন্ধত্ব নিবারণ কর্মসূচিতে আগে থেকেই তো এই সুবিধা মিলছিল। নতুনটা তা হলে কী হল?
এই ব্যাপারে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশও কিছুটা অস্বস্তিতে। কারণ, তথ্য-পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, ২০১৭-১৮ সাল থেকে অন্ধত্ব নিবারণে কেন্দ্রের দেওয়া টাকার অর্ধেকই খরচ করতে পারেনি রাজ্য। প্রশ্ন উঠছে, একটা প্রকল্পেই যখন সব টাকা খরচ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, তা হলে চোখের জোড়া প্রকল্প সামলানো যাবে কী ভাবে? রাজ্যের ভাঁড়ারের শোচনীয় অবস্থায় একই ধরনের প্রকল্পে টাকা ঢালা হবে কেন?
প্রশ্নের মুখে পড়ে ইতিমধ্যে ‘নতুন’ বিশেষণ থেকে সরে এসে স্বাস্থ্যকর্তারা ‘চোখের আলো’-কে জাতীয় কর্মসূচির ‘সহযোগী প্রকল্প’ হিসেবে তুলে ধরতে শুরু করেছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী যেমন বলছেন, ‘‘এর মধ্যে নতুন তো কিছু নেই। জাতীয় কর্মসূচিকেই একটু চাঙ্গা করতে, একটু ঝাঁকুনি দিয়ে তার গতি বাড়াতে ‘চোখের আলো’র পরিকল্পনা করা হয়েছে। চোখের চিকিৎসার বিষয়টি একটু অবহেলিত হচ্ছিল। ঢিলেমি চলে এসেছিল। এই ভাবে তাকে আবার অগ্রাধিকারের তালিকায় ফিরিয়ে আনা হল।’’
চোখের আলো প্রকল্পের বাজেট কত, সেই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি স্বাস্থ্য অধিকর্তা। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রের রুটিন টিকাকরণ কর্মসূচি আগে থেকেই চলছিল। তা সত্ত্বেও নতুন নাম দিয়ে ‘মিশন ইন্দ্রধনুষ’ শুরু করে কেন্দ্র। সেটাও নতুন কিছু ছিল না।’’
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে জনমানসে চোখের আলো প্রকল্প সম্পর্কে যে-বাড়তি প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, স্বাস্থ্য দফতর তার চাপ সামলাতে পারবে তো? জবাবে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, ‘‘মানুষের চাপ যত বাড়বে, তত কিছু কর্মবিমুখ চিকিৎসক ও হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষকে দিয়ে আমরা কাজ করিয়ে নিতে পারব। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আওতায় ছানি অপারেশন বা ছাত্রছাত্রীদের চোখ পরীক্ষা করে চশমা দেওয়ার কাজে যে-বিপুল ‘ব্যাকলগ’ তৈরি হয়েছে, সেটাও এই প্রকল্পের মাধ্যমে কমিয়ে দেওয়া হবে। জেলার প্রত্যন্তে আরও বেশি মানুষকে চক্ষু-চিকিৎসা পরিষেবার আওতায় আনা যাবে।’’
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, ইতিমধ্যে এমন ১২৭ জন চক্ষু শল্যচিকিৎসককে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাঁরা তুলনায় কম ছানি কেটেছেন। আবার অনেক জায়গায় ফেকো মেশিন বা অন্য যন্ত্র কিনতে গাফিলতি হচ্ছে বলে চিকিৎসকেরা চাইলেও ছানি অপারেশন করতে পারছেন না। স্বাস্থ্য দফতরের চক্ষু বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘ছানি অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে কেন্দ্র যে-লক্ষ্যমাত্রা স্থির করছে, সেটা ঠিক নয়।
পশ্চিমবঙ্গে এখন অন্ধত্বের হার অনেকটাই কমেছে। কিন্তু নতুন হার অনুযায়ী কেন্দ্র লক্ষ্যমাত্রা স্থির করছে না। ফলে আমাদের পক্ষে লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না।’’
এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের চক্ষু চিকিৎসা বিভাগের এক সচিবের মন্তব্য, ‘‘সব তথ্যপ্রমাণ ঘেঁটেই আমরা লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি। পশ্চিমবঙ্গ ছানি অস্ত্রোপচারের লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে পৌঁছতে পারছে না বলেই এ-সব বলছে।
তার উপরে আবার ছানি অপারেশন ও চশমা দেওয়ার নতুন প্রকল্প ঘোষণা করছে। এ এক অদ্ভুত কাণ্ড!’’ কেন্দ্রীয় প্রকল্পে চশমা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর।