Lok Sabha Election 2024

বাম না তৃণমূল, কোন দিকে যাবে বঙ্গের কংগ্রেস? সংখ্যালঘু ভোটের প্রশ্নেই হাতের অন্দরে টানাপড়েন

বাংলায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে তৃণমূল যে উৎসাহ দেখিয়েছে, সংখ্যালঘু ভোট এবং পঞ্চায়েত ভোটের অভিজ্ঞতাই তার কারণ বলে শাসক শিবির সূত্রের ব্যাখ্যা।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৩২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

বাম না তৃণমূল কংগ্রেস, কোন দিকে যাবে বঙ্গের কংগ্রেস, তার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। প্রয়োজনে একা চলার দাবিও উঠেছে দলের অন্দরে। বাংলার বিধানসভায় শূন্য হওয়া সত্ত্বেও কংগ্রেসকে ঘিরে এমন টানাপড়েনের কেন্দ্রে রয়েছে মূলত সংখ্যালঘু ভোট, এই ব্যাখ্যাই উঠে আসছে রাজনৈতিক শিবির সূত্রে। পরিস্থিতি বুঝে কংগ্রেসও এখন চাইছে কেবল মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো সংখ্যালঘু-প্রধান জেলার আটকে না থেকে অন্যত্রও লড়াই করতে। শেষ পর্যন্ত যাদের সঙ্গেই জোট হোক না কেন, নির্দিষ্ট একটি বলয়ের বাইরে আসন পাওয়াই হতে চলেছে কংগ্রেসের তরফে আলোচনার অন্যতম প্রধান শর্ত।

Advertisement

রাজ্যে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত বহু এলাকায় ‘প্রতিরোধে’র মুখে পড়তে হয়েছিল শাসক তৃণমূলকে। সেই প্রতিরোধের নেতৃত্বে কোথাও যেমন সিপিএম, কোথাও কংগ্রেস, আবার বেশ কিছু জায়গায় নওসাদ সিদ্দিকীর আইএসএফ ছিল। যেখানে যে দল শক্তিশালী, সেখানে তাকেই জায়গা ছেড়ে দিতে হবে— ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের মধ্যে এই তত্ত্বের প্রবক্তা তৃণমূল। কিন্তু বাংলায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে তারা যে উৎসাহ দেখিয়েছে, সংখ্যালঘু ভোট এবং পঞ্চায়েত ভোটের অভিজ্ঞতাই তার কারণ বলে শাসক শিবির সূত্রের ব্যাখ্যা। আবার বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে দ্বৈত লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু সমর্থনের অঙ্ক মাথায় রেখেই সিপিএমও চাইছে কংগ্রেস এবং আইএসএফ-কে নিয়ে একজোট হয়ে ময়দানে নামতে।

সূত্রের খবর, বাংলায় সংখ্যালঘু ভোটের এই সমীকরণ দিল্লিতে এআইসিসি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের আলোচনায় এসেছে। বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্ব বলেছেন, সংখ্যালঘু সমর্থন এখন তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম এবং কিছুটা হলেও আইএসএফের মধ্যে বিভক্ত। কোন পথে গেলে সংখ্যালঘু ভোটের বিভাজন আটকানো যাবে, সেই প্রশ্নে অবশ্য কংগ্রেসের মধ্যেই ভিন্ন মত রয়েছে। দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য দীপা দাশমুন্সি সেই ২০০৯ সাল থেকে বাংলায় তৃণমূল কী ভাবে কংগ্রেসকে ভেঙেছে, তার ছবি তুলে ধরার পাশাপাশিই প্রস্তাব দিয়েছেন, কলকাতার পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং দক্ষিণবঙ্গে দলকে আসন নিয়ে লড়াই করতেই হবে। নইলে কংগ্রেস কেবলই উত্তর দিনাজপুর, মালদহ ও মুর্শিদাবাদে আবদ্ধ হয়ে পড়বে। প্রয়োজনে একা চলার পক্ষে সওয়াল করেও প্রদেশ কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার দিল্লির বৈঠকে বলেছেন, দক্ষিণবঙ্গে হিন্দু-প্রধান এলাকায় কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ না পেলে দলের গায়ে ‘সংখ্যালঘু এলাকার পার্টি’র তকমা লেগে যাবে। আবার প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি আজ়হার মল্লিকের মতে, বিজেপিকে হারানোর জন্য যাকে সমর্থন করলে লাভ হবে, তার সঙ্গেই সমঝোতা হোক। রাজ্যেরসংখ্যালঘু মানুষও তা-ই চান। অর্থাৎ তৃণমূলের সঙ্গে জোট হলেও এই অংশের আপত্তি নেই।

Advertisement

কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘শুধু সংখ্যালঘু ভোট বা দু’-একটা আসনই নয়। দলটা যতটা আছে, তাতেও ক্ষতি যাতে কম হয়, সেটা বুঝে নিয়েই জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’’ কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত কী করছে, সে দিকে নজর রেখে সমঝোতার আলোচনা শুরুর আগে অপেক্ষা করছে সিপিএমও। এই প্রশ্নে দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘এই রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সকলকে একজোট করার ডাক আমরা দিয়েই রেখেছি। এর পরে কংগ্রেস কী করবে, বিধান ভবনে জিজ্ঞাসা করতে হবে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement