রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
রেলের সেতু তৈরির কাজ। সেখানে দুর্ঘটনায় মৃত্যু। তবে মালদহে গিয়ে শুক্রবার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস জানালেন, দুর্ঘটনা নিয়ে কোনও সমালোচনামূলক কথা বলবেন না। রেলের ক্ষতিপূরণের চেকও তুলে দিলেন মৃতদের কয়েক জনের পরিবারের হাতে। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্তরের একটি সূত্রের দাবি, বিষয়টিকে ‘ভাল নজির’ বলে মনে করা হচ্ছে না। যদিও রেলের কর্তারা মন্তব্য করতে চাননি।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে রাজ্যপাল অন্য ট্রেনে মালদহ যান। সেখানে পুখুরিয়ার চৌদুয়ার গ্রামে যান তিনি। মিজ়োরামে নির্মীয়মাণ রেলসেতু ভেঙে মালদহের ২৩ জন শ্রমিক মারা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৮ জনের দেহ এসেছে বাড়িতে। মৃতদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যপাল।
মৃত পরিযায়ী শ্রমিক মোজাম্মেল হকের স্ত্রী ইদিয়া বিবি রাজ্যপালকে বলেন, “ভাঙাচোরা ঘরে থাকি। স্বামীর মৃত্যুতে পুরো পরিবারই শেষ হয়ে গেল!” এর পরে, ওই গ্রামের মৃত ৯ জন পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারের সদস্যের হাতে রেলের ক্ষতিপূরণ বাবদ সাড়ে ন’লক্ষ টাকার চেক এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা করে তুলে দেন রাজ্যপাল। পরে রাজ্যপাল জানান, আহতদের ৫০ হাজার এবং গুরুতর আহতদের দু’লক্ষ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে কাছে পেয়ে রেল কিংবা অন্যত্র সরকারি চাকরির দাবি জানান মৃতদের পরিবারের সদস্যেরা।
নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা এই সূত্রে বলেন, ‘‘রাজ্যপাল মালদহে গিয়ে নিজেই রেলের হয়ে ক্ষতিপূরণ দিলেন। মৃতদের পরিবারের জন্য চাকরির প্রস্তাবও উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথা বলেছেন। মিজ়োরামের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ঘোষণা বা তা দেওয়ার কথা তো রেলের তরফে। অথবা কেন্দ্রের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হতে পারে।’’ তৃণমূলের মালদহ জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সীর মন্তব্য, “রাজ্যপাল বিজেপির দূত হয়ে মানুষের কাছে গিয়ে রেলের অনুদান তুলে দিচ্ছেন।” যদিও রাজ্যপাল বলেন, “মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কোনও সমালোচনা নয়। মৃতদের পাশে রাজভবন রয়েছে।’’
রাজ্যপালের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি বলব, শুধু পরিদর্শন করলে হবে না। আপনি আর্থিক অনুদান বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবার করুন।’’ তাঁর দলের মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচী বলেন, “রাজ্যে শিল্প নেই। রাজ্যের শ্রমিকেরা ভিন্ রাজ্যে পরিযায়ী হয়ে কাজে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন।” অধীরের খোঁচা, “পুজোর অনুদান বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু মৃতদের পরিবারকে রাজ্যের তরফে দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।”
বিতর্ক শুরু হয়েছে দেহগুলির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও। তৃণমূলের সাংসদ সামিরুল ইসলামের দাবি, ‘‘রেল মৃতদেহগুলি ভাল করে সংরক্ষণ না করে পাঠানো হয়েছে।”