Sushmita Dev

তৃণমূলে যোগ দিয়েই টিকিট পেয়েছিলেন রাজ্যসভায়, পড়েছিলেন বাদও, কী ভাবে সেই সুস্মিতা ফের উচ্চকক্ষে?

সুস্মিতা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধুনাপ্রয়াত সন্তোষমোহন দেবের কন্যা। তিনি শিলচরে কংগ্রেসের বিধায়ক ও সাংসদ ছিলেন। ২০২১ সালের ১৬ অগস্ট তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন সুস্মিতা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:০১
Share:

সুস্মিতা দেব। —গ্রাফিক সনৎ সিংহ।

পাওয়া। হারানো। ফের পাওয়া। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর গত আড়াই বছরে তাঁর রাজনৈতিক রেখচিত্র এটাই। তিনি সুস্মিতা দেব। যাঁকে ফের রাজ্যসভায় মনোনয়ন দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁকে গত অগস্টে রাজ্যসভা থেকে বাদ দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু কী কারণে ফের সুস্মিতাকে সংসদের উচ্চকক্ষে পাঠাচ্ছে বাংলার শাসকদল? যিনি মঙ্গলবার সকালে অসম থেকে কলকাতায় পৌঁছচ্ছেন মনোনয়ন-পর্ব সারতে।

Advertisement

সুস্মিতা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধুনাপ্রয়াত সন্তোষমোহন দেবের কন্যা। তিনি নিজে কংগ্রেসের টিকিটে শিলচরের বিধায়ক ও সাংসদ ছিলেন। রাহুল গান্ধীর ‘আস্থাভাজন’ও ছিলেন। কিন্তু সেই তিনি ২০২১ সালের ১৬ অগস্ট অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তার দেড় মাসের মধ্যে রাজ্যসভায় টিকিট পেয়েছিলেন সন্তোষ-কন্যা। মানস ভুঁইয়া রাজ্যে মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর রাজ্যসভার আসনটি ফাঁকা হয়। সেখানে সুস্মিতাকে পাঠায় তৃণমূল। গত বছর অগস্টে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু সুস্মিতাকে সে বার আর রাজ্যসভায় পুনরায় মনোনয়ন দেয়নি তৃণমূল।

কেন, সে ব্যাপারে অনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও ব্যাখ্যা তৃণমূল দেয়নি। তবে অনেকের ধারণা, ত্রিপুরায় নির্বাচনী ব্যর্থতা সুস্মিতার বাদ পড়ার অন্যতম কারণ ছিল। তার পর থেকে সুস্মিতা অসমেই বেশির ভাগ সময় থাকতেন। অসমে নতুন করে তৃণমূল রাজ্য কমিটিও তৈরি করেছে। সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কংগ্রেস থেকে আসা আর এক নেতা রিপুন বোরাকে।

Advertisement

সূত্রের খবর, আগের মেয়াদে রাজ্যসভায় থাকতে থাকতেই সুস্মিতা দলনেত্রী মমতার কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, তিনি লোকসভা ভোটে শিলচর থেকে লড়তে চান। কিন্তু গত অগস্টে অসমে আসন পুনর্বিন্যাসের (ডিলিমিটেশন) ফলে শিলচর তফসিলি জাতি সংরক্ষিত হয়ে যায়। সুস্মিতার ঘনিষ্ঠ সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে যে, গত ডিসেম্বরে মমতার সঙ্গে সুস্মিতার মুখোমুখি দেখা হয়েছিল। তখনই মমতা তাঁকে বলেছিলেন, অসমের অন্য কোনও আসনে লোকসভায় প্রার্থী হতে। কিন্তু রাজি হননি সুস্মিতা। তাঁর যুক্তি ছিল, বরাক উপত্যকা, বিশেষত শিলচরের বাইরে প্রার্থী হলে তিনি জিততে পারবেন না। কারণ, তিনি বাঙালি। অসমে বাঙালিরা ভাষাগত সংখ্যালঘু। বরাকে বাঙালিদের যে জোর রয়েছে, তা অন্যত্র নেই। উত্তর-পূর্বের রাজনীতিতে এই সমস্ত বিষয় অন্যতম মানদণ্ড। শিলচরের দীর্ঘ দিনের কংগ্রেস সাংসদ ছিলেন সুস্মিতার বাবা সন্তোষমোহন। সুস্মিতাও কি তাঁর পুরনো দলের দিকে ঝুঁকছিলেন? এর আনুষ্ঠানিক কোনও সত্যতা নেই। তবে অনেকে মনে করছেন, সুস্মিতাকে ধরে রাখতেই ফের রাজ্যসভায় টিকিট দিল তৃণমূল।

আনন্দবাজার অনলাইনকে সুস্মিতা বলেন, ‘‘আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম নিঃশর্তে। আমি জানতামও না আমায় রাজ্যসভায় পাঠানো হবে। গত অগস্টে দল রাজ্যসভায় না পাঠালেও আমায় জাতীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমি সেই দায়িত্ব পালন করেছি। অসমে সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। কাছাড় পার্বত্য পরিষদের ভোটেও লড়াই করেছি।’’ বস্তুত, এই ভোটে কংগ্রেসের থেকে তৃণমূল বেশি ভোট পেয়েছিল। যা নিয়ে জাতীয় সাবেক দলকে এক্স পোস্টে খোঁচা দিয়েছিলেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক।

ত্রিপুরার ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন করার আগেই সুস্মিতা বলেন, ‘‘ওই সময়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়দের গ্রেফতারি আমাদের সমস্যায় ফেলেছিল।’’ পাশাপাশি তাঁর এ-ও বক্তব্য যে, অসমের কংগ্রেস নেতাদের অনেকেই বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলছেন। বিজেপি-বিরোধী প্রকৃত লড়াই লড়ছেন মমতাই। যদিও মাঝে গুঞ্জন ছিল, রাজ্যসভা থেকে বাদ পড়ার পর সুস্মিতা কংগ্রেসে ফেরার চেষ্টা করছেন। ‘হাত’ শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছেন। কিন্তু সুস্মিতা সে গুঞ্জনের কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। সুস্মিতা-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, কেউ কেউ এমনও রটিয়ে দিয়েছিল, তাঁর সঙ্গে অভিষেকের সম্পর্ক ভাল নয়। সে কথাও ভিত্তিহীন। তবে তৃণমূলে সাম্প্রতিক সময়ে এমন ভাবে পাওয়া, হারানো এবং ফের পাওয়ার নজির খুব একটা নেই। যা গড়লেন সুস্মিতা। শিলচর তফসিলি-সংরক্ষিত না হলে কি এই কাহিনি লেখা হত? কে জানে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement