ধূপগুড়ি ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ বিজেপির। — ফাইল চিত্র।
বিধানসভা নির্বাচনের পর পরই জেতা দু’টি আসন নদিয়ার রানাঘাট ও কোচবিহারের দিনহাটায় উপনির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। অথচ বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ব্যবধানেই জয়ী হয়েছিল তারা। সাধারণ ভাবে উপনির্বাচনের ফল শাসকের দিকেই যায়। কিন্তু মাস কয়েক আগেই সাগরদিঘির জেতা আসনে হেরেছে তৃণমূল। সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস পরে তৃণমূলে ফিরে গেলেও ওই আসনে কংগ্রেসের জয় রাজ্য রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেছে। এ বার লোকসভা নির্বাচনের মুখে জেতা ধূপগুড়িতে তাই ভাল ফল করা বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক করেছেন, ৫ সেপ্টেম্বর হতে চলা এই উপনির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে দল ওই আসনে লড়বে।
ধূপগুড়ি মানেই রাজবংশী ভোট। ১৯৭৭ সাল থেকেই বিধানসভায় রাজবংশী প্রতিনিধি পাঠিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার এই আসন। ২০২১ সালে বিজেপির হয়ে জিতেছিলেন রাজবংশী সমাজেরই বিষ্ণুপদ রায়। তাঁর মৃত্যুতেই এ বার উপনির্বাচন। এই উপনির্বাচনেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বীরা সকলেই রাজবংশী সম্প্রদায়ের। ঈশ্বরচন্দ্র রায়কে প্রার্থী করেছে সিপিএম। তৃণমূলের প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়। আর মঙ্গলবার রাতে বিজেপি ঘোষণা করেছে প্রার্থী হচ্ছেন তাপসী রায়। বাম বা তৃণমূলের প্রার্থীরা রাজনীতিক হলেও বিজেপির তাপসী কখনও রাজনীতি করেননি। ভোটের ময়দানে তাঁর পরিচয় পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় নিহত সিআরপিএফ জওয়ান জগন্নাথ রায়ের স্ত্রী। বিজেপির অঙ্ক স্পষ্ট। ‘শহিদ’ আবেগ কাজে লাগিয়েই উপনির্বাচনে জয়ের লক্ষ্য গেরুয়া শিবিরের। সেই আবেগকে আরও বেশি করে কাজে লাগাতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয় স্বাধীনতার দিবসের রাতে।
ধূপগুড়িতে বিজেপির উত্থান ২০১৮ সাল থেকেই। সে বার ধূপগুড়ি পুরসভা নির্বাচনে চারটি ওয়ার্ডে জিতেছিল গেরুয়া শিবির। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও এই বিধানসভার গ্রামাঞ্চলে খাতা খুলেছিল বিজেপি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ন্ত রায় জলপাইগুড়ি আসনে ১,৮৪,০০৪ ভোটে জেতেন। ধূপগুড়ি বিধানসভাতেও এগিয়ে ছিল তারা। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জেতে ৪,৩৫৫ ভোটে। দলের ভোটপ্রাপ্তির হার ছিল ৪৫.৬৫ শতাংশ। আর তৃণমূল পেয়েছিল ৪৩.৭৫ শতাংশ। অনেক পিছিয়ে থাকা সিপিএম পেয়েছিল ৫.৭৩ শতাংশ ভোট।
কিন্তু সদ্য শেষ হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই অঙ্ক আর এক নেই। জেলা পরিষদ স্তরে তৃণমূল পেয়েছে ৪৭.৬০ শতাংশ ভোট। সেখানে বিজেপি পেয়েছে ৩৯.২০ শতাংশ আর বাম-কংগ্রেস জোটের দখলে ১২.১০ শতাংশ ভোট। এটা থেকে একটা সহজ অঙ্কে আসা যায় যে, তৃণমূলের ভোট কিছুটা বৃদ্ধির পাশাপাশি রামের ভোট অনেকটাই বামে এসেছে। এই ক্ষয় মেরামতি কি বিজেপি উপনির্বাচনে করতে পারবে? দলের চিন্তা, এমনিতেই উপনির্বাচনে ভোটদানের হার কম থাকে। ফলে ভোট বৃদ্ধি করা কঠিন। কিন্তু লোকসভা নির্বাচন যখন দোরগোড়ায়, তখন এই আসনে জিততে পারলে তা উত্তরবঙ্গে দলকে বাড়তি অক্সিজেন দেবে। সেই কারণে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ধূপগুড়ির প্রচারে অংশ নেবেন। দুই নেতাই একাধিক বার সেখানে যেতে পারেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।
গত কয়েকটি নির্বাচনেই দেখা গিয়েছে রাজবংশী ভোট বিজেপির সঙ্গে থেকেছে। সদ্যই রাজবংশী সমাজের নেতা হিসাবে পরিচিত অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত করেছে বিজেপি। তিনি সমর্থন দিলেও অতীতে বিজেপি করেননি। তবু রাজবংশী ভোট দলের ঝুলিতে টানতেই অনন্তকে রাজ্যসভায় পাঠাতে চায় বিজেপি। আগামী শুক্রবার বা তার পর পরই রাজ্যসভায় শপথ নিতে পারেন অনন্ত। তার পর তাঁকেও ধূপগুড়ির প্রচারে কাজে লাগাতে পারে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের যা পরিকল্পনা তাতে ভোটের প্রচারে বাংলা থেকে প্রথম কোনও রাজবংশীকে রাজ্যসভায় পাঠানোর কৃতিত্ব যেমন দল নিতে চাইবে তেমনই নিহত জওয়ানের স্ত্রীকে নিয়ে আবেগকেও কাজে লাগাতে চাইবে।