রাজ্যের কোষাগার থেকে আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা পাঠিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। — ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে রাজ্যের কোষাগার থেকেই ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা করে পাঠিয়ে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। জেলায় জেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষের অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পৌঁছতেই তিনটি হেল্পলাইন নম্বর সক্রিয় করল নবান্ন। সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়েছে, আবাস যোজনার উপভোক্তাদের যে কোনও সমস্যা হলে তাঁরা ওই তিনটি নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করে তাঁদের সমস্যার কথা জানাতে পারেন।
পঞ্চায়েত দফতরের একটি হেল্পলাইন নম্বর রয়েছে (১৮০০ ৮৮৯ ৯৪৫১)। পাশাপাশিই, ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’র যে হেল্পলাইন নম্বর (৯১৩৭০ ৯১৩৭০) রয়েছে, সেখানেও আবাস সংক্রান্ত সমস্যা জানানো যাবে। একই সঙ্গে একটি জরুরি হেল্পলাইনও (১১২) সক্রিয় করেছে নবান্ন। যাঁরা সমীক্ষার পরে আবাস যোজনায় বাড়ির টাকা পাওয়ার জন্য বিবেচিত হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই মোবাইলে এসএমএস মারফত সেই মর্মে বার্তা পেয়েছেন। সরকারের তরফে বলা হয়েছে, এসএমএস পেয়েছেন অথচ প্রথম কিস্তির টাকা পাননি কিংবা টাকা পাওয়ার পরেও অন্য কোনও সমস্যা হচ্ছে, তাঁরা হেল্পলাইন নম্বরে বিষয়টি জানাতে পারেন।
কেন এত তৎপরতা? মূল কারণ তিনটি। এক, নিচুতলায় যাতে আবাস যোজনা নিয়ে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ না ওঠে। দ্বিতীয়ত, অনেকেই আছেন, যাঁরা এ বার আবাস যোজনায় টাকা পাননি। তাঁরাও যদি ফোন করেন, তাঁদেরও সরকারের তরফে বার্তা দেওয়া হবে। কারণ, ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, আগামী বছর ডিসেম্বরে রাজ্য সরকার আরও ১৬ লক্ষ মানুষকে আবাস যোজনার টাকা দেবে। তৃতীয়ত, গ্রামীণ এলাকায় অনেকেই টাকা পাওয়ার বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন। তাঁরাও যাতে কোনও সমস্যায় না পড়েন, তা-ও নিশ্চিত করতে চাইছে সরকার। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের কয়েক মাস পরে দলের একটি সভা থেকে মমতা ‘কাটমানি’ প্রসঙ্গ তুলে নিচুতলার নেতাদের ভর্ৎসনা করেছিলেন। তার পরে জেলায় জেলায় দেখা গিয়েছিল, স্থানীয় স্তরের তৃণমূল নেতাদের বাড়ির সামনে ‘কাটমানি’ ফেরত চেয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে। যদিও পাঁচ বছর আগে আবাস যোজনার টাকা এসেছিল কেন্দ্র থেকে। এ বার পুরো টাকাটাই দিচ্ছে রাজ্য।
নবান্নের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই রাজ্য সরকার আবাস যোজনায় ১৪,৭৭৩ কোটি টাকা খরচ করছে। সেই লক্ষ্য যাতে কোনও অবাঞ্ছিত কারণে বিঘ্নিত না হয়, সেটা নিশ্চিত করতেই এই হেল্পলাইন শুরুর ভাবনা।’’ তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্র আবাসের টাকা দেয়নি। রাজ্য তা দিয়ে মানুষের মাথায় ছাদ করে দিচ্ছে। সরকারের অগ্রাধিকার হল, উপভোক্তাদের যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে না হয়।’’ ইতিমধ্যেই নবান্নের তরফে জেলা প্রশাসন মারফত মহকুমা এবং ব্লক প্রশাসনে বার্তা দেওয়া হয়েছে, স্থানীয় স্তরে আবাসের বাড়ি করে দেওয়ার নাম করে কেউ যেন ‘মাতব্বরি’ না করেন। তৃণমূলের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘২০২৬-এর ভোটের লক্ষ্যেই রাজ্য সরকার এতগুলো টাকা নিজেদের কোষাগার থেকে খরচ করছে। কিন্তু নিচুতলায় দলের একাংশ যদি কোনও দুর্নীতি করে, তা হলে লাভের লাভ হবে না। সরকার সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছে।’’ ইতিমধ্যে সাংগঠনিক ভাবেও তৃণমূল হেল্পলাইনের বিষয়টি সমাজমাধ্যমে প্রচার শুরু করেছে।