(বাঁ দিক থেকে) সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী এবং মনোজ টিগ্গা। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যে প্রথম বার প্রধান বিরোধী দল হওয়ার পরে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা কে হবেন তা একেবারে নিশ্চিতই ছিল। শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া আর কেউ দাবিদারই ছিলেন না। আবার বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতক বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা হয়নি। বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব মাদারিহাটের দু’বারের বিধায়ক মনোজ টিগ্গার নাম প্রস্তাব করলে এক কথায় রাজি হয়ে যান দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং শুভেন্দু। মনোজের নাম প্রস্তাব করেছিলেন তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। প্রসঙ্গত, অতীতে বিধানসভায় একই সঙ্গে ছিলেন দিলীপ ও মনোজ। ঠান্ডা মাথার এবং দলের অনুগত মনোজ যে ওই পদের জন্য উপযুক্ত তা নিয়ে দিলীপের সঙ্গে বাকিরাও একমত ছিলেন। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচন হয়েছিল। সেখানে মুকুল রায় বিরোধী দলনেতা হিসাবে শুভেন্দুর নাম প্রস্তাব করেছিলেন। আর শুভেন্দু প্রস্তাব করেন মনোজের নাম। ভোট দেন দলের বিধায়করা।
এখন মনোজ লোকসভায়। আলিপুরদুয়ার আসন থেকে সাংসদ হওয়ার পরে বৃহস্পতিবারই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মনোজ। এ বার তাই নতুন কাউকে মুখ্য সচেতক বাছতে হবে। বিজেপির নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্য নেতৃত্ব বিরোধী দলনেতার সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করেন কোন বিধায়ককে দায়িত্ব দেওয়া হবে। বিধানসভায় মুখ্য সচেতককে বড় ভূমিকা পালন করতে হয়। অধিবেশন চলার সময়, কোন বিধায়ক কবে কোন বিষয়ে বক্তৃতা করবেন তা ঠিক করেন মুখ্য সচেতক। বিরোধী দলনেতার সঙ্গে আলোচনা করে তিনিই ঠিক করেন কোন বিষয়ে দলের অবস্থান কী হবে। সেটা নিয়ে বাকি বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা করা, প্রয়োজনে পরিকল্পনা গোপন রাখা, সবটাই দেখতে হয়। আবার মুখ্য সচেতককে সরকার পক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতে হয়। কারণ, বক্তৃতার বিষয় থেকে সময় সবটাই আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত হয়।
বিধানসভার স্পিকার, পরিষদীয় মন্ত্রী এবং শাসকদলের মুখ্য সচেতকের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকা খুবই জরুরি। এই তিন পদে থাকা বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, নির্মল ঘোষ ও তাঁদের সচিবালয়ের সঙ্গে মনোজের সম্পর্ক ছিল খুবই ভাল। এক দিকে, শুভেন্দু যেমন কট্টর বিরোধীর ভূমিকা নিয়েছেন বিধানসভায়, তেমনই দলের নীতি বজায় রেখে ঠান্ডা মাথায় শাসক শিবিরের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতেন মনোজ।
এ বার মনোজের উত্তরসূরি বাছা হবে। আগামী মঙ্গলবার নিউটাউনের একটি হোটেলে হবে নির্বাচন পর্ব। সেটা হবে আবার মনোজের উপস্থিতিতেই। সে দিন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে দলের সব বিধায়ককে ওই হোটেলে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। সেখানে প্রথমে বিধায়ক থেকে সাংসদ হওয়া মনোজকে সংবর্ধনা দেবে পরিষদীয় দল। এর পরে হবে নির্বাচন। নিয়ম অনুযায়ী, পরিষদীয় দলের যে কোনও সদস্য নাম প্রস্তাব করতে পারেন। ধ্বনি ভোটে যিনি জয়ী হবেন তিনিই বিধানসভায় বিজেপির তরফে পরবর্তী মুখ্য সচেতক।
কে আসবেন সেই পদে? বিজেপি নেতারা এই নিয়ে কোনও জবাব না দিলেও রাজ্য দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মণের নাম আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বিজেপির আদি নেতাদের অন্যতম। সঙ্ঘ পরিবারের সদস্য দীপকেরও মনোজের মতোই ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে পারার সুনাম রয়েছে। বিজেপি উত্তরবঙ্গ থেকেই কাউকে মুখ্য সচেতক বাছলে তাঁর সঙ্গে আরও এক জনের নাম উঠে আসতে পারে। তিনি শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তবে সিপিএম থেকে বিজেপিতে আসা শঙ্করের থেকে এগিয়ে দীপকের নাম। আবার অনেকে বলছেন, মহিলা মুখকে বাছা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এগিয়ে দু’টি নাম। তুফানগঞ্জের বিধায়ক মালতী রাভা রায় এবং ইংরেজবাজারের শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। যদিও রাজ্যের এক বিধায়কের দাবি, কোনও নাম নিয়েই আলোচনা হয়নি। উত্তর বা দক্ষিণবঙ্গে হিসাবেও কোনও ভাগ নেই। বিধায়কদের প্রস্তাব এবং ঐকমত্যই ঠিক করবে দলের পরবর্তী মুখ্য সচেতক কে হবেন।