Rizwanur Rahman

Rizwanur Rahman Death: শেষ সাক্ষ্যগ্রহণ মাস ছয়েক আগে, ১৫ বছর আগের রিজ মামলার নিষ্পত্তি কবে?

রিজওয়ানুরের সেই অপমৃত্যু আর রিজ-কেন্দ্রিক আন্দোলনের সঙ্গে আমতার ছাত্রনেতা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং তাকে ঘিরে ছাত্র-বিক্ষোভের মিল পাচ্ছেন অনেকে। কারণ, অভিযোগের তির এখানেও মূলত পুলিশের দিকে। মিল রিজ ও আনিসের উৎসেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:৫৬
Share:

রিজওয়ানুর রহমান ফাইল চিত্র।

বঙ্গীয় রাজনীতি সেই অস্বাভাবিক মৃত্যুতে তোলপাড় তো হয়েছিলই। এমন তির্যক সমালোচনাও আছে যে, বাম জমানার কফিনে যে-সব ঘটনা নানাবিধ পেরেক পুঁতে দিয়েছিল, রিজওয়ানুর রহমানের অপমৃত্যু তার অন্যতম। সেই মৃত্যুর পিছনে পুলিশের অতিসক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছিল এবং তাকে কেন্দ্র করেই উত্তাল হয়েছিল বঙ্গসমাজের বড় অংশ।

Advertisement

রিজওয়ানুরের সেই অপমৃত্যু আর রিজ-কেন্দ্রিক আন্দোলনের সঙ্গে আমতার ছাত্রনেতা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং তাকে ঘিরে ছাত্র-বিক্ষোভের মিল পাচ্ছেন অনেকে। কারণ, অভিযোগের তির এখানেও মূলত পুলিশের দিকে। মিল রিজ ও আনিসের উৎসেও। দু’জনেই মধ্যবিত্ত সংখ্যালঘু পরিবারের যুবক। তরুণ তাজা প্রাণের অসময়ের মৃত্যু ১৫ বছর আগে বাঙালি সমাজকে যে-ভাবে নাড়া দিয়েছিল, তার প্রতিচ্ছবিই যেন ফুটে উঠছে করোনা-পরবর্তী বাংলায়, অন্য তরুণ প্রাণের বিনষ্টিতে।

অমিলও আছে। প্রথমত, রিজের মৃত্যু আত্মহত্যা বলে চার্জশিটে জানিয়েছিল সিবিআই। আনিসের ক্ষেত্রে উঠেছে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ। দ্বিতীয়ত, রিজের অপমৃত্যুর পিছনে ছিল প্রণয়ঘটিত কারণ। বিত্তশালী তোডি পরিবারের মেয়ে প্রিয়ঙ্কাকে বিয়ে করেন তিনি। অভিযোগ, পুলিশ জোর করে স্বামী-স্ত্রীকে আলাদা করে দেয়। তার পরেই মৃত্যু হয় রিজের। আর আনিসের ক্ষেত্রে অভিযোগ, পুলিশের পোশাক পরে কিছু লোক রাতে তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়ে ছাদে ওঠে। তার পরেই ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে আনিসের মৃত্যু হয়। প্রিয়ঙ্কা বিবাহ-সূত্রে এখন কলকাতার বাইরে থাকেন বলে সূত্রের খবর।

Advertisement

২০০৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রেললাইন ধারে মেলে রিজওয়ানুরের দেহ। পাওয়া যায় সুইসাইড নোট। তাঁর মৃত্যুর জন্য তিনি বেশ কয়েক জনকে দায়ী করে গিয়েছেন। ১৫ বছর ধরে চলছে সেই মামলা। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তে নেমে ২০০৮-এর নভেম্বর নাগাদ সিবিআই চার্জশিটে জানায়, রিজ আত্মহত্যা করলেও তার পিছনে প্ররোচনা ছিল। সেই প্ররোচনার মামলায় অভিযুক্ত প্রিয়ঙ্কার বাবা অশোক তোডি, কাকা প্রদীপ তোডি, আত্মীয় অনিল সারোগি, মইনুদ্দিন ওরফে পাপ্পু। এই কাজে তোডিদের সাহায্য করায় অভিযুক্ত আইপিএস অফিসার অজয় কুমার, দুই পুলিশ অফিসার সুকান্তি চক্রবর্তী এবং কৃষ্ণেন্দু দাস। সকলেই জেল খেটেছেন, এখন জামিনে মুক্ত। রিজওয়ানুরের সুইসাইড নোটে আইপিএস অফিসার জ্ঞানবন্ত সিংহের নাম থাকলেও সিবিআইয়ের চার্জশিটে তাঁর নাম ছিল না। আনিস-কাণ্ডে গঠিত সিটের মাথা সেই জ্ঞানবন্ত।

রিজ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে বলে মঙ্গলবার জানান তোডিদের আইনজীবী দীপনারায়ণ মিত্র। ২০০৮ সালে সিবিআই চার্জশিট দেওয়ার পরেও তিন বছর কেটে যায় তোডিরা বার বার সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ায়। ২০১১ সালে ব্যাঙ্কশাল আদালতে শুরু হয় সেই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ।

দীপনারায়ণবাবু বলেন, “সিবিআই যে-সব সাক্ষীর কথা বলেছে, তাঁদের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। তাঁদের বয়ান রেকর্ড করা হচ্ছে আদালতে। ওই সব সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়ে গেলে আমরা সাক্ষীদের বয়ান দেখে তার পরে আবার তাঁদের আদালতে ডেকে প্রশ্ন (ক্রস এগ্‌জ়ামিনেশন) করব।”

এই মামলার মূল সাক্ষী রিজ়ওয়ানুরের দাদা রুকবানুর এবং তাঁর পরিবার। রুকবানুর ২০১১ সালে নদিয়ার চাপড়া কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃণমূলের বিধায়ক হন। এখনও তিনি বিধায়ক। আদালত সূত্রের খবর, সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দু’বার ডাকা হলেও রুকবানুর আসেননি। সময় চেয়েছেন।

এই মামলায় শেষ সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে মাস ছয়েক আগে। আইনজীবীরা জানান, মাঝখানে করোনার কারণে আদালতের কাজ বন্ধ থাকায় সাক্ষ্য নেওয়া যায়নি। সিবিআইয়ের তালিকায় দুই শতাধিক সাক্ষী আছেন। ফলে, কবে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে, কবে হবে মামলার নিষ্পত্তি— তা নিয়ে সবাই অন্ধকারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement