বুদ্ধদেবের স্মরণসভায় বলছেন মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। —সংগৃহীত।
জনগণের আস্থা ভেঙেছে। রয়েছে সঙ্কটও। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সেই প্রতিকূলতাকে স্বীকার করে নিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। পাশাপাশিই বুদ্ধদেবের ‘স্বপ্ন’ই ফেরি করার ডাক দিলেন যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়েরা।
বুদ্ধদেবের মৃত্যুর প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস পর সোমবার মৌলালি যুবকেন্দ্রে তাঁর স্মরণসভা করল সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই। ১৯৬৮ সালে এই সংগঠনেরই প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন বুদ্ধদেব। পরে ১৯৮০ সালে তা সর্বভারতীয় রূপ পেয়েছিল। প্রথম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হান্নান মোল্লা। উলুবেড়িয়ার প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ তথা সর্বভারতীয় কৃষক নেতা হান্নান বুদ্ধদেবের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, ‘‘বুদ্ধদা একটি নাম। বুদ্ধদা আদর্শ, বিশ্বাস। এখন নানা কারণে সেই বিশ্বাসের সঙ্কট রয়েছে। আমাদের প্রতি বিশ্বাস ভেঙেছে। কিন্তু সেই বিশ্বাসেরই পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে।
স্মরণানুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বুদ্ধদেবের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। যদিও তিনি বক্তৃতা করেননি। প্রাক্তন যুবনেতা হিসাবে স্মরণসভায় স্মৃতিচারণা করেন মহম্মদ সেলিম, রবীন দেব, আভাস রায়চৌধুরীরা। স্মরণসভার মধ্যেই একটি ১৭ মিনিটের তথ্যচিত্র দেখানো হয়। সেখানেই বুদ্ধদেবের রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে মুখ্যমন্ত্রিত্বের পর্ব এবং তার পরবর্তী সময়ে তাঁর ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।
২০০৬ সালে বুদ্ধদেবের নেতৃত্বেই ২৩৫টি আসন নিয়ে সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার তৈরি হয়েছিল। তার পরেই আগ্রাসী হয়ে শিল্পায়নের পথে হেঁটেছিল তাঁর সরকার। অল্প সময়ের মধ্যেই যা বামেদের ভিত আলগা করে দেয়। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের ঘটনা বাম-বিরোধী আন্দোলনকে তীব্র করে। পাঁচ বছরের মধ্যেই বামফ্রন্ট সরকারের পতন হয়। যদিও বুদ্ধদেব যে শিল্পায়নের পথে হেঁটেছিলেন, তাকেই একমাত্র বিকল্প বলে উল্লেখ করা হয়েছে স্মরণানুষ্ঠানে। বার্তা দেওয়া হয়েছে, সেই লক্ষ্যেই আন্দোলন চালাবে ডিওয়াইএফআই।
বুদ্ধদেব শিল্প-সাহিত্যের অনুরাগী ছিলেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্মরণসভায় সেই শিল্পকলার পাশাপাশিই তাঁর শিল্পায়নের দৃষ্টিভঙ্গির কথা বার বার উল্লেখ করেন সিপিএম নেতৃত্ব। বুঝিয়ে দেওয়া হয়, ‘সৎ’ দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বুদ্ধদেব শিল্পায়নের পথে হেঁটেছিলেন। একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বেকারদের কর্মসংস্থান। বুদ্ধদেব যে বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই লক্ষ্যেই যে তাঁর তৈরি সংগঠন পথ চলবে, তা-ও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বারংবার।