TMC Rally on 21st July

অভিষেকের হাতে বাংলার দায়িত্ব দিয়ে মমতার লক্ষ্য দিল্লি, সুদীপের বক্তব্য নিয়ে জল্পনা শুরু শাসক শিবিরে

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন জাতীয় রাজনীতির কথায় জোর দিলেন তখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিলেন এখন বাংলার রাজনীতিই তাঁর লক্ষ্য। ফের ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ যাত্রার মতো কর্মসূচির ইঙ্গিতও দিলেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৩ ১৯:৫২
Share:

ধর্মতলার সভায় মমতার আগেই বক্তৃতা করেন অভিষেক। — নিজস্ব চিত্র।

দেওয়ালের লিখনটাই কি সর্বসমক্ষে পড়ে দিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়? শুক্রবার ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে ধর্মতলার সভামঞ্চ থেকে তৃণমূলের প্রবীণতম সাংসদ তথা লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা বলেই দিলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা দেশকে নেতৃত্ব দেবেন। আর বাংলাকে নেতৃত্ব দেবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।’’

Advertisement

তৃণমূলে বেশ কিছু দিন ধরেই এমন শোনা যাচ্ছিল যে, অভিষেক দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্বেও বড় ভূমিকায় আসছেন। ‌সুদীপের কথায় সেই জল্পনার উপর ‘সিলমোহর’ পড়ল বলেই অনেকে মনে করছেন। সুদীপ একেবারে আলটপকা ওই মন্তব্য করেছেন বলে মনে করছেন না তৃণমূলের একাংশ। তা-ও আবার দলের বৃহত্তম বাৎসরিক সমাবেশের মঞ্চ থেকে। প্রথমত, সুদীপ যথেষ্ট পোড়খাওয়া রাজনীতিক। দুই, তিনি তৃণমূলের অন্দরের নাড়িনক্ষত্র সম্পর্কে অবহিত। অর্থাৎ, সুদীপ স্পষ্টই জানিয়েছেন, অভিষেককে ভবিষ্যতে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের পদে দেখা যাবে। মমতা চলে যাবেন জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে। দেশশাসনের মতো প্রশাসনিক কোনও ভূমিকায়।

তবে তৃণমূলের অন্দরে অনেকে আবার বলছেন, সুদীপ তেমন কিছু বলতে চাননি। দলের এক প্রথম সারির নেতার মতে, সুদীপ লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের সাপেক্ষে নিজের অবস্থান ‘ঠিকঠাক’ করতে চেয়েছেন। ওই মন্তব্যের কোনও ‘সুদূরপ্রসারী’ তাৎপর্য নেই। আবার অন্য এক নেতার মতে, সুদীপ বলতে চেয়েছেন, অভিষেক বাংলায় দলের সংগঠনের ভার এবং দায়িত্ব নেবেন। মমতা ‘দল করবেন’ জাতীয় স্তরে।

Advertisement

এমনিতে অভিষেক দলীয় পদে থাকার কারণে কোনও সরকারি কর্মসূচিতে যান না। তবে উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী একটি প্রশাসনিক বৈঠকের আগে বা পরে জনসভার মঞ্চে তাঁকে ডেকেছিলেন মমতা। বলেছিলেন, অভিষেক ঘটনাচক্রে ওই সময়ে সেখানে ছিলেন। তাই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, মঞ্চে এসে এক বার সকলকে ‘নমস্কার’ করে যেতে। অভিষেক সেটাই করেছিলেন। মঞ্চে চেয়ার এগিয়ে দেওয়া হলেও বসেননি। তিনি ‘সাংগঠনিক’ ভূমিকার বাইরে যেতে চাননি বলেই মঞ্চে বসেননি বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানানো হয়েছিল। তবে আপাতত সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বেশি মাথা ঘামালেও অভিষেক যে রাজ্যের প্রশাসনে আসবেন, তা নিয়ে কোনও মহলেই বিশেষ সংশয় নেই।

পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল সাফল্যের ‘কৃতিত্ব’ অভিষেকের উপরেই দিয়েছেন দলের নেতারা। কারণ হিসাবে তাঁরা টানা ৫২ দিন ধরে অভিষেকের ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচির কথা বলছেন। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যেমন প্রবীণ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় পঞ্চায়েত ভোটে দলের তরুণ নেতা অভিষেকের পরিশ্রমের কথা বলেছেন, তেমনই তাঁর পরের প্রজন্মের নেতা তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে আন্দোলন করছেন, আমরা তাতে শামিল হব।’’

ঘটনাচক্রে, শুক্রবার মমতার বক্তৃতায় বাংলার প্রসঙ্গ থাকলেও বেশি অংশ জুড়ে থেকেছে জাতীয় রাজনীতির কথা। আর অভিষেকের বক্তব্যে জাতীয় রাজনীতির কথা থাকলেও ‘মূল জোর’ ছিল বাংলার উপর। রাজ্যে দলের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা থেকে বাংলার বকেয়া অর্থের দাবি নিয়ে দিল্লি গিয়ে আন্দোলনের কথা বলেছেন তিনি। কিন্তু পাশাপাশিই অভিষেকের বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, আগামিদিনে তিনি আবার ‘নবজোয়ার’-এর মতো কর্মসূচি নিলেও নিতে পারেন। কারণ, বক্তৃতায় অভিষেক বলেছেন, ‘‘আপনাদের সঙ্গে আবার মাঠে-ময়দানে দেখা হবে।’’

অভিষেকের বক্তৃতায় আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে— পঞ্চায়েত ভোটের সাফল্যের উপর ভিত্তি করে তিনি লোকসভা ভোটের সৌধ গাঁথতে চাইছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বলেছিলাম, পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির ভোটের ব্যবধান ১০ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হবে। ওটা ভুল বলেছিলাম। ব্যবধান বেড়েছে ৩০ শতাংশ। তৃণমূল একা লড়ে ৫২ শতাংশ ভোট পেয়েছে। আর ভারতীয় জুমলা পার্টি (বিজেপি) পেয়েছে ২২ শতাংশ।’’ প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত ভোটের ফলপ্রকাশের পরেই অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে এই ৫২ শতাংশকে ৫৬ শতাংশে নিয়ে যাবে তৃণমূল।’’

‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে, জাতীয় রাজনীতির কথা বলতে গিয়েও অভিষেক তাঁর বক্তৃতায় টেনে এনেছেন বাংলারই কথা। তিনি বলেন, ‘‘আমার ২০১০ সালের ২১ জুলাইয়ের কথা মনে পড়ছে। সেই সময়ে বামফ্রন্টের বিদায় খালি সময়ের অপেক্ষা ছিল। এখন আকাশে-বাতাসে একটাই বার্তা মুখরিত, একটাই আওয়াজ, আনেওয়ালে চুনাও মে কওন জিতেগা? জ়োর সে বোলো, দোনো হাত উপর করকে বোলো কওন জিতেগা?’’ সমাবেশ থেকে সম্মিলিত জবাব এসেছে— ‘‘ইন্ডিয়া! ইন্ডিয়া জিতেগা!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement