শাহজাহান শেখ। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
ইডিকে ভয় পেয়েছিলেন শাহজাহান শেখ! সিবিআই হেফাজতে এমনটাই জানিয়েছেন সন্দেশখালির ‘বাঘ’ শাহজাহান। একই সঙ্গে জেরায় তিনি জানিয়েছেন, ইডি যখন তাঁর বাড়ির দোরগোড়ায়, তখন তিনি নিজে কোথায় ছিলেন। কেনই বা ফেরেননি বাড়িতে।
বুধবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল— সিবিআই হেফাজতে প্রায় দেড় দিন কাটিয়ে ফেলেছেন সন্দেশখালির শেখ। এই পর্বে তাঁকে নানা বিষয়ে জেরা করেছে সিবিআই। জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে স্বাভাবিক ভাবেই এসেছে ৫ জানুয়ারির কথা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের সে বিষয়ে ঠিক কী বলেছেন সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা? সিবিআই সূত্রে খবর, শাহজাহান যা বলেছেন, তার সার কথা হল সন্দেশখালির প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা ইডিকে ভয় পেয়েছিলেন। আর গ্রেফতার হতে পারেন ভেবেই ইডির অভিযানের পর আর সন্দেশখালির বাড়িমুখো হননি।
গত ৫ জানুয়ারিই সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় শাহজাহানের বাড়িতে প্রথম গিয়েছিলেন ইডির তদন্তকারীরা। সেখানে গিয়ে শাহজাহানের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তাঁরা। ইডি জানিয়েছিল, তাঁরা বুঝতে পারছিলেন, শাহজাহান ওই বাড়ির ভিতরেই রয়েছেন। তাঁর মোবাইলের টাওয়ারের ঠিকানা দেখে তার প্রমাণও মিলেছিল বলে জানিয়েছিল ইডি। যদিও শাহজাহান ইডির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ঘটনার তদন্তকারী সিবিআইয়ের প্রশ্নের জবাবে শাহজাহানের দাবি, তিনি আদৌ ওই দিন বাড়িতেই ছিলেন না। ৫ জানুয়ারি ভোরবেলায় শাহজাহানের বাড়িতে হাজির হয়েছিল ইডির দল। শাহজাহানের কথা মতো, ওই দিন প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন তিনি। সরবেড়িয়ার বাড়িতে থাকলে তিনি প্রতিদিনই প্রাতর্ভ্রমণে বার হন। পরে হাঁটতে হাঁটতেই গ্রামের নানা এলাকায় যান। ঘুরে দেখেন। ঘটনার দিনও তা-ই করেছিলেন। কিন্তু বাড়িতে ইডি এসেছে শুনে এবং ইডির ফোন পেয়ে তিনি ভয় পেয়ে যান। তাই আর মর্নিং ওয়াক থেকে বাড়িতে ফেরেননি।
শাহজাহানের বক্তব্যে স্পষ্ট, তিনি বোঝাতে চাইছেন, ইডির হাতে গ্রেফতার হতে পারেন, এই ভয়েই বাড়িমুখো হননি। উল্লেখ্য, এই একই সুর শোনা গিয়েছিল শাহজাহানের ভাইয়ের বয়ানেও। এই ঘটনার তদন্ত শুরু হওয়ার পর জানুয়ারিতেই ইডিকে তিনি জানিয়েছিলেন, সবাই ভেবেছিল ইডি ওকে ফাঁসিয়ে দেবে। সেই ভয়েই জনগণের জনরোষে পড়েন ইডির কর্তারা।
তবে শাহজাহান যা-ই বলুন তাঁর কথায় বিশ্বাস করছে না সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, এখনকার প্রযুক্তিতে মোবাইল টাওয়ারের যে লোকেশন দেখা যায়, তাতে যাঁর কাছে ওই মোবাইল রয়েছে তাঁর অবস্থান নির্ভুল বোঝা যায়। হিসাবমতো ওই লোকেশনের ৫ মিটারের মধ্যেই থাকেন মোবাইলের মালিক। সিবিআই সূত্রে খবর, তারা ইডির এফআইআরে ঠিক সময়টি দেখে আবার শাহজাহানের মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন পরীক্ষা করে দেখবে। তাতেই শাহজাহান সত্যি বলছেন কি না, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।