শেখ শাহজাহান। —ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালির ‘শেখ’! এই পদবির সঙ্গে যে একটা ‘শেঠ শেঠ’ ব্যাপার ছিল, গত কয়েক দিনে সেই ছবিটার আমূল পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ‘শেখ’ বলতে আগেই শাহজাহানের প্রসঙ্গ উঠে আসত এখানে। কিন্তু গ্রেফতারির পর থেকে শাহজাহান শেখকে নিয়ে আতঙ্ক সেখানে কিছুটা ফিকে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এক নতুন ‘আতঙ্ক’ কিন্তু মাথাচাড়া দিয়েছে সন্দেশখালির মানুষের একাংশের মধ্যে।
না, এ ‘আতঙ্ক’ শাহজাহান শেখকে নিয়ে নয়। তা হলে? এই নতুন ‘আতঙ্ক’ ‘শেখ’ পদবি নিয়েই। যার পদবি ‘শেখ’ নয়, ভুলবশত যদি তাঁর নামের সঙ্গে ‘শেখ’ জুড়ে দেওয়া হয়, তা হলে আপত্তি জানাচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, দয়া করে যাঁর তাঁর নামে ‘শেখ’ জুড়ে দেবেন না। তবে সকলের এ বিষয়ে আপত্তি অবশ্য নেই। কিন্তু ‘শেখ’ বলতেই যে ‘দাপটের’ ছবি উঠে আসত সন্দেশখালিতে, এখন অনেকেই সেই বিষয়টির সঙ্গে নিজেদের গুলিয়ে ফেলতে নারাজ। গ্রামে গ্রামে, মোড়ে মোড়ে এ নিয়েই গুঞ্জন, জটলা আর আলোচনা। ‘শেখ’ নামেই যেন একটা বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন সন্দেশখালির একাংশ। আর তাই এই পদবির সঙ্গে কেউ ভুলবশত জড়িয়ে ফেললেই আপত্তি জানাচ্ছেন। তবে সরাসরি নয়, কান পাতলেই সেই ফিসফিসানি যেন শোনা যাচ্ছে সন্দেশখালির আনাচকানাচে।
শাহজাহান শেখের বিরুদ্ধে আমদানি-রফতানি সংক্রান্ত একটি মামলায় বৃহস্পতিবার সন্দেশখালির কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি অভিযানে গিয়েছেন ইডির আধিকারিকেরা। ধামাখালির কাছে একটি পাইকারি মাছের বাজার এবং ওই বাজারের অন্যতম অংশীদার নজরুল মোল্লার বাড়িতেও তল্লাশি চালান তাঁরা। উৎসুক লোকজন দূর থেকেই বিষয়টি দেখছিল। সেই ভিড়ের কাছাকাছি যেতেই গুঞ্জন এবং চাপা আলোচনা শোনা গেল ‘শেখ’ পদবি নিয়েই। কিসের এত আপত্তি একটু জানার চেষ্টা করতেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি ভিড়ের মধ্যে থেকে চাপা গলায় বললেন, ‘‘এখানে অনেকেই শেখ পদবিতে বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন। কারণটা অবশ্য জলের মতো স্পষ্ট।’’ তার পরেও ওই ব্যক্তিকে কারণ জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলে ওঠেন, “বুঝে নিন বিষয়টা। কেন আপত্তি?” ফলে এই ‘শেখ’ নাম জড়িয়ে গেলে বিপদে পড়তে পারেন এমনও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই।
তবে পদবি তো অনেকের এক হতেই পারে। এমনও বলছেন সেখানকার বাসিন্দাদের অন্য এক অংশ। কোনও এক ‘শেখ’ অপরাধ করলে তার জন্য সব ‘শেখ’কে আতঙ্কে থাকতে হবে কেন? প্রশ্ন তাঁদের। তবে যাঁদের পদবি ‘শেখ’, তাঁরা কিন্তু বিষয়টি নিয়ে খুব একটা ‘মাথা ঘামাতে’ চাইছেন না। বা এই গুঞ্জন, আলোচনাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। ‘সন্দেশখালির শেখ’, সেখানকার বেশিরভাগ এলাকায় এই শব্দবন্ধ যাঁকে নিয়ে মূলত প্রচলিত ছিল, সেই এক শেখের জন্য বাকি শেখদের তো এক সরলরেখায় টেনে আনা তো যুক্তিসঙ্গত নয়! প্রশ্ন তুলছেন সন্দেশখালির অন্য শেখরা।