West Bengal Panchayat Election 2023

পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলে পদ্মের কোন কোন সাংসদ ‘বিপাকে’, কার এলাকায় কেমন ফল করল বিজেপি

পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলের বিচারে বিজেপি আশানুরূপ ফল করতে পারেনি। দলের সাংসদরা নিজেদের এলাকাতেও তেমন ফল পাননি। কোথায় কেমন হল ফলাফল, তার খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৩ ০৮:৫৮
Share:

( বাঁ দিক থেকে) সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, নিশীথ প্রামাণিক। —ফাইল চিত্র।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল ‘আশানুরূপ’ হয়নি। যদিও তার কারণ হিসাবে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি শাসক তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস, হিংসা, ভোটগণনায় কারচুপি’ ইত্যাদির কথা বলছে। কিন্তু অনেকে বলছেন, পঞ্চায়েতের চেয়েও তাদের সাংসদদের বেশি চিন্তিত হওয়া উচিত নিজেদের এলাকায় দলের ফলাফল নিয়ে।

Advertisement

সেই ফল যা বলছে, তাতে দলের কোনও সাংসদের এলাকাতেই বিজেপি উল্লেখযোগ্য ভাল ফল করতে পারেনি। মন্দের ভাল জগন্নাথ সরকার এবং সৌমিত্র খাঁ। তাঁদের দু’টি আসন যথাক্রমে রানাঘাট এবং বিষ্ণুপুরে বিজেপি তা-ও খানিকটা মানরক্ষা করেছে।

‘খুব খারাপ’ ফলাফলের তালিকায় আছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়। ‘কঠিন পরিস্থিতি’ নিশীথ প্রামাণিক, জন বার্লা, শান্তনু ঠাকুর, সুভাষ সরকারের।

Advertisement

প্রত্যাশিত ভাবেই বিজেপি নেতারা তা মানতে চাইছেন না। সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘এই ভোটের সঙ্গে কোনও কিছুরই তুলনা করা উচিত নয়। কারণ, রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে ভাবে ভোট করিয়েছে, সেটা প্রহসন। মনোনয়ন থেকে গণনা— সবেতেই কারচুপি। ভোটগ্রহণে আদালতের নির্দেশও মানা হয়নি। এটা জনগণের রায় নয়।’’ পাশাপাশিই তাঁর বক্তব্য, ‘‘লোকসভা নির্বাচন হবে বেশি দফায়। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার মধ্যে। কেন্দ্রীয় বাহিনীও ঠিকঠাক ব্যবহার হবে। তাই দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’ যাঁর আমলে বিজেপি দুই থেকে ১৮ সাংসদে পৌঁছেছিল, সেই দিলীপের বক্তব্য, ‘‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। ফলে লোকসভায় মানুষ বিজেপিকে জিতিয়ে বদলা নিয়েছিল। এই পঞ্চায়েত নির্বাচনেও মানুষকে বোকা বানানো হয়েছে। তাই আগামী লোকসভায় দ্বিগুণ বা তারও বেশি আসন পাব আমরা।’’

প্রত্যাশিত ভাবেই শাসক তৃণমূল মনে করছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ‘প্রভাব’ লোকসভা ভোটে পড়বেই। দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘বিজেপির লোকসভায় ভাল ফলের আশা করাই উচিত নয়। কোনও নেতা বা সাংসদের এলাকাতেই ভাল ফল করতে পারেনি ওরা।’’

গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যে ১৮টি আসন জিতলেও এখন তাদের সাংসদের সংখ্যা কমেছে। আসানসোলের দু’বারের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলে যোগ দিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী। উপনির্বাচনে ওই আসন তৃণমূল দখল করেছে। ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহও এখন তৃণমূলে। ফলে বিজেপির এখন প্রকৃত সাংসদ সংখ্যা ১৬। পঞ্চায়েত ভোটের পরে সেই ১৬ সাংসদ কে কোথায় দাঁড়িয়ে?

সুকান্ত মজুমদার, বালুরঘাট

রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বালুরঘাট আসনের পুরোটা দক্ষিণ দিনাজপুরের মধ্যে নয়। কিছুটা শহর এলাকাও রয়েছে। তবে গ্রামীণ ভোটই বেশি। পঞ্চায়েতের ফল বলছে, ২০১৮ সালের তুলনায় আসন বেড়েছে। কিন্তু নিজেদের দখলে থাকা লোকসভা আসন হিসাবে ফল ভাল হয়নি। গ্রাম পঞ্চায়েতে দলের উপস্থিতি থাকলেও পঞ্চায়েত সমিতিতে তেমন সাফল্য নেই। গঙ্গারামপুর থেকে তপন— সর্বত্রই জয়ের সংখ্যা খুব কম। জেলা পরিষদে কোনও আসনেই জয় মেলেনি। অথচ ২০১৯ সালে বালুরঘাট থেকে ৩৩,২৯৩ ভোটে জিতেছিলেন সুকান্ত। গত বিধানসভা নির্বাচনেও জেলার তিনটি আসনে জয় পায় বিজেপি।

দিলীপ ঘোষ, মেদিনীপুর

প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি এবং বর্তমান সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের আসন মেদিনীপুরেও পঞ্চায়েত ভোটের ফল তথৈবচ। দিলীপের এলাকায় মেদিনীপুর, খড়গপুর এবং এগরা পুরসভা এলাকা ছাড়া সবটাই গ্রাম। বাকি 8টি ব্লকে পঞ্চায়েত সমিতির মোট ২১২ আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে ১৯৯। বিজেপির ১১। পঞ্চায়েত সমিতির সবগুলিই তৃণমূলের দখলে। গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৩২৬টি। তার মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ১০৪৭টি। বিজেপি ২১৭টি। সাংসদ দিলীপের এলাকায় জেলা পরিষদের কোনও আসন পায়নি বিজেপি। কিন্তু ইতিহাস বলছে, দিলীপ জিতেছিলেন ৮৮,৯৫২ হাজার ভোটে। বিধানসভা নির্বাচনেও এই এলাকায় খারাপ ফল হয়েছিল বিজেপির।

নিশীথ প্রামাণিক, কোচবিহার

নিশীথ প্রামাণিক এখন কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তাঁর জেলা কোচবিহারে জেলা পরিষদ দখল করা যাবে বলে আশা ছিল বিজেপির। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলের ফল করুণ। জেলা পরিষদের ৩৪টি আসনের মধ্যে কোচবিহার লোকসভা এলাকায় ২৩টি। তার মধ্যে তৃণমূলের দখলে ২২টি আসন। নিশীথের দলের দখলে মাত্র একটি। মাথাভাঙ্গা ২ নম্বর ব্লকের জেলা পরিষদের ৬ নম্বর আসনটি জিতেছে বিজেপি। কোচবিহার জেলা পরিষদ বিজেপি দখল করার কথা শুধু শুধু ভাবেনি। কারণ, এখানকার রাজবংশী ভোটের উপরে বরাবরই গেরুয়া শিবিরের ভরসা দেখা গিয়েছে। ৫৪,২৩১ ভোটে গত লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার জেতার পরে গত বিধানসভা নির্বাচনেও জেলার ন’টির মধ্যে সাতটি বিজেপির দখলে যায়। কিন্তু সর্বমোট দু’টি আসন জেলা পরিষদে জিতেছে তারা।

জন বার্লা, আলিপুরদুয়ার

আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লাও এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সংখ্যালঘু মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর জেলাতেও বিজেপি খুব ভাল ফল করবে বলে আশা করেছিল। মনে করা হয়েছিল জেলা পরিষদের দখল মিলবে। কিন্তু বাস্তবে ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতই শুধু দখলে। কোনও পঞ্চায়েত সমিতি মেলেনি। বিরোধীশূন্য জেলা পরিষদের ১৮টি আসনই তৃণমূলের দখলে। অথচ বার্লা লোকসভায় জিতেছিলেন ২,৪৩,৯৮৯ ভোটে। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই জেলার পাঁচটির পাঁচটি বিধানসভাই জেতে বিজেপি।

শান্তনু ঠাকুর, বনগাঁ

কেন্দ্রের জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর শুধু মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁর সাংসদ নন। তিনি মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধানও। কিন্তু তাঁর এলাকায় তেমন ফল কোথায় বিজেপির? উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যে মতুয়া অধ্যুষিত বিধানসভা চারটি। বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, বাগদা এবং গাইঘাটা। এই চারটি বিধানসভায় জেলা পরিষদের মোট আসন ৯টি। সবক’টিই জিতেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতির ১২৪টি আসনের মধ্যে ১১২টি ঘাসফুল শিবিরের দখলে গিয়েছে। অথচ এই মতুয়াভূমে শান্তনু ২০১৯ সালে জিতেছিলেন ১,১১,৫৯৪ ভোটে।

সুভাষ সরকার, বাঁকুড়া

আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার বিজেপির আদি নেতা। বাঁকুড়া বিধানসভা এলাকা থেকে গত লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন ১,৭৪,৩৩৩ হাজার ভোটে। গত বিধানসভা নির্বাচনেও বাঁকুড়ায় বিজেপির ফল ভাল হয়েছিল। জেলার ১২টি আসনের মধ্যে বিজেপি জয় পায় ৮টিতে। তবে এই জেলায় দু’টি লোকসভা। বাঁকুড়া লোকসভা এলাকায় বিজেপি ছাতনা, শালতোড়া ও বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে জয় পায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল বলছে সুভাষের বাঁকুড়া লোকসভা এলাকায় মাত্র একটি পঞ্চায়েতের দখল পেয়েছে বিজেপি। মেলেনি কোনও পঞ্চায়েত সমিতি। জেলা পরিষদে কোনও আসনই নয়।

লকেট চট্টোপাধ্যায়, হুগলি

রাজ্য বিজেপিতে ঝড়ের গতিতে উত্থান হয় লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। মহিলা মোর্চার প্রাক্তন রাজ্য সভানেত্রী এখন মূল দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। একই সঙ্গে হুগলি জেলার সাংসদও। লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন ৭৩,৩৬২ ভোটে। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর এলাকার কোনও আসনেই জিততে পারেনি বিজেপি। তিনি নিজেও চুঁচুড়া বিধানসভা পরাজিত হন। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সেই ধারা বজায় রয়েছে। বলাগড়, পান্ডুয়া, চুঁচুড়া, মগড়া, পোলবা-দাদপুর, ধনিয়াখালি, সিঙ্গুর ছ’টি পঞ্চায়েত সমিতিই তৃণমূল দখল করেছে। ২৫৪টি পঞ্চায়েত সমিতির আসন। বিজেপি জিতেছে ৬টিতে। জেলা পরিষদের ১৮টি আসনের সবগুলিই তৃণমূলের। জেলা পরিষদের ৫৩ আসনের মধ্যে বিজেপি দু’টি জিতলেও তা লকেটের এলাকায় নয়।

দেবশ্রী চৌধুরী, রায়গঞ্জ

রায়গঞ্জের সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী এ বার রাজ্য বিজেপির পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালন কমিটির শীর্ষে ছিলেন। কিন্তু তাঁর নিজের লোকসভা এলাকায় দলের ফলই ‘হতাশাজনক’। উত্তর দিনাজপুর জেলার দুটি মহকুমা রায়গঞ্জ ও ইসলামপুর এলাকার মধ্যে একমাত্র রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, করণদিঘি এলাকায় বিজেপির ফলাফল আগের বারের থেকে আসনের সংখ্যার নিরিখে সামান্য হলেও বেড়েছে। কিন্তু চোপড়া, ইসলামপুর, গোয়ালপুকুর, চাকুলিয়া এলাকায় সে ভাবে খাতাই খুলতে পারেনি গেরুয়া শিবির। গোটা জেলায় ৯৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ন’টি। আর ন’টি পঞ্চায়েত সমিতির সবক’টিই দখল করেছে তৃণমূল। জেলা পরিষদ তো বিরোধীশূন্য। দেবশ্রী লোকসভায় জিতেছিলেন ৯৮,৫৩৬ ভোটে। তবে গত বিধানসভা নির্বাচনেই ফল খারাপ হয় জেলায়। ন’টি আসনের মধ্যে শুধু দু’টিতে জয় পায় বিজেপি।

জয়ন্তকুমার রায়, জলপাইগুড়ি

গত লোকসভা নির্বাচন থেকে জলপাইগুড়িতে ভাল ফল করা শুরু হয় বিজেপির। জয়ন্তকুমার রায় জিতেছিলেন ১,৮৪,০০৪ ভোটে। গত লোকসভা নির্বাচনেও জেলায় সাতের মধ্যে চার আসনে জয় পায় গেরুয়া শিবির। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের মুখরক্ষা হয়নি জয়ন্তকুমারের লোকসভা এলাকায়। ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি, সদর, মেখলিগঞ্জ সর্বত্রই হার আর হার। গোটা জেলায় বিজেপির ঝুলিতে ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত। কোনও পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদের আসনেই জয় মেলেনি গেরুয়া শিবিরের।

রাজু বিস্তা, দার্জিলিং

দার্জিলিংয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন ছিল দু’টি স্তরে। স্বশাসিত জিটিএ থাকায় এখানে জেলা পরিষদ নেই। পাহাড়ের ফল নিয়ে বিজেপির খুব আশাও ছিল না। তবে পর পর দু’বার জেতা লোকসভা আসনে কিছুটা ভাল ফলের আশা করা গিয়েছিল। ২০১৯ সালে তো রাজু জয় পান ৪,১৩,৪৪৩ ভোটে। তবে সেই ভোটে অন্য সমীকরণ ছিল। ২৩ বছর পরে পাহাড়ের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি জোট গড়েছিল জনমুক্তি মোর্চা, জিএনএলএফ, হামরো পার্টির সঙ্গে। অন্য দিকে, তৃণমূলের সঙ্গে ছিল অনীত থাপার প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। দার্জিলিংয়ের ৫৯৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে অনীতের প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা একাই দখল করেছে ৩৪৯টি আসন। পাঁচটি আসন জিতে গ্রামীণ দার্জিলিংয়ে খাতা খুলে ফেলেছে তৃণমূলও। অন্য দিকে, বিজেপি পেয়েছে ৫৯টি আসন। পঞ্চায়েত সমিতির মোট ১৫৬টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ১৯টি আসন।

খগেন মুর্মু, মালদহ উত্তর

পঞ্চায়েত নির্বাচনের তিনটি স্তরেই বিজেপির প্রতিনিধিত্ব রয়েছে মালদহ জেলায়। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি মালদহ উত্তর জিতলেও সামান্য ভোটে কংগ্রেসের কাছে হেরে যায় মালদহ দক্ষিণ লোকসভা আসন। খগেন মুর্মু জিতেছিলেন ৮৪,২৮৮ ভোটে। জেলায় ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত, একটি পঞ্চায়েত সমিতি বিজেপির দখলে। জেলা পরিষদে মিলেছে ৪টি আসন। গত বার ছিল সাতটি। তবে খগেনের এলাকা বামনগোলা, হবিবপুরে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু ফল হয়নি। গাজোল, চাঁচোল, হরিশ্চন্দ্রপুর বা রতুয়া বিধানসভাতেও বিজেপির ঝুলিতে নেই জেলা পরিষদের কোনও আসন।

কুনার হেমব্রম, ঝাড়গ্রাম

আদিবাসী প্রধান ঝাড়গ্রাম লোকসভা এলাকার মধ্যে এই জেলা তো বটেই পাশের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনি ও গড়বেতা বিধানসভা এবং পুরুলিয়ার বান্দোয়ান আসন রয়েছে। এখানে গত লোকসভা নির্বাচনে কুনার হেমব্রম জিতেছিলেন ১১,৭৬৭ ভোটে। কিন্তু কুড়মি ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ায় বিজেপি তেমন ভাল ফল করতে পারেনি ঝাড়গ্রাম লোকসভা এলাকায়। জেলা পরিষদে কোনও আসনে জেতেনি। কোনও পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েত দখলে নেই।

জ্যোতির্ময় মাহাতো, পুরুলিয়া

পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো বিজেপির রাজ্য সংগঠনেও গুরুত্বপূর্ণ নেতা। দিলীপের পরে সুকান্তের জমানাতেও তিনি রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর জেলায় গত বিধানসভা নির্বাচনেও ভাল ফল করেছিল বিজেপি। মোট ন’টি আসনের মধ্যে বিজেপি জেতে ছ’টিতে। গত লোকসভায় জ্যোতির্ময় জিতেছিলেন ২,০৪,৭৩২ ভোটে। কিন্তু সেই পুরুলিয়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করতে পারলেও একটিও পঞ্চায়েত সমিতি পায়নি। জেলা পরিষদে পেয়েছে দু’টি আসন। তবে দু’টিই জ্যোতির্ময়ের লোকসভা এলাকার মধ্যে।

সৌমিত্র খাঁ, বিষ্ণুপুর

বিজেপি পঞ্চায়েত নির্বাচনে তুলনামূলক ভাল ফল করেছে সৌমিত্র খাঁয়ের এলাকায়। বিষ্ণুপুর লোকসভায় সৌমিত্র ২০১৯ সালে জিতেছিলেন ৭৮,০৪৭ ভোটে। আর বিধানসভায় তাঁর এলাকার চারটি আসনে জয় পায় বিজেপি। বিষ্ণুপুর লোকসভা এলাকায় ন’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও একটি জেলা পরিষদ আসন জিতেছে বিজেপি।

এস এস অহলুওয়ালিয়া, বর্ধমান দুর্গাপুর

পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর এবং পূর্ব বর্ধমানের কিছুটা অংশ মিলে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অহলুওয়ালিয়া গত লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন খুবই কম ভোটে। ব্যবধান ছিল ২,৪৩৯ ভোট। পশ্চিম বর্ধমান জেলার যে অংশ এই লোকসভার মধ্যে সেখানকার সব জেলা পরিষদ আসন তৃণমূলের দখলে। পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রেও তাই। পূর্ব বর্ধমান এলাকাতেও ফল উল্লেখযোগ্য কিছু নয়।

জগন্নাথ সরকার, রানাঘাট

রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার অবশ্য কিছুটা ভাল ফলের দাবিদার। তাঁর লোকসভা এলাকার একটা বড় অংশই মতুয়াপ্রধান। ২,৩৩,৪২৮ ভোটে ২০১৯ সালে জিতেছিলেন জগন্নাথ। বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও রাণাঘাট আসনে জেতেন তিনি। যদিও পরে সাংসদ পদ রেখে বিধানসভা আসন ছেড়ে দেন তিনি। উপনির্বাচনে বিজেপি হেরে যায়। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোথাও কোথাও পদ্মশিবির খানিকটা এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি। যেমন কৃষ্ণগঞ্জে মোট গ্রাম পঞ্চায়েত আসন ১৪১টি। সেখানে বিজেপি পেয়েছে ৬৬টি আসন। হাঁসখালিতে মোট গ্রাম পঞ্চায়েত আসন ২৯২টি। বিজেপি পেয়েছে ১২২টি।

বিজেপির এই ১৬টি আসনের হিসাবের সঙ্গে ধরা যেতে পারে পূর্ব মেদিনীপুরের দুই লোকসভা কেন্দ্র কাঁথি ও তমলুকের ফলাফল। কারণ, ‘খাতায়কলমে’ বিজেপি হলেও ব্যারাকপুরের অর্জুন যেমন এখন তৃণমূলের, তেমনই পূর্ব মেদিনীপুরের দুই সাংসদ শিশির অধিকারী ও দিব্যেন্দু অধিকারী খাতায়কলমে তৃণমূল হলেও আসলে বিজেপি-পন্থী। কারণ, দলের নির্দেশ অমান্য করেই তাঁরা দিল্লি গিয়ে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন। পিতাপুত্র শিশির ও দিব্যেন্দুর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে দুই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে চারটি মহকুমা। কাঁথি লোকসভার মধ্যে রয়েছে কাঁথি ও এগরা মহকুমা (এর মধ্যে এগরা ১ এবং ২ এর কিছু অংশ মেদিনীপুর লোকসভার অন্তর্গত)। আবার তমলুক লোকসভার মধ্যে রয়েছে হলদিয়া ও তমলুক মহকুমা (এর মধ্যে পাঁশকুড়া ব্লক ঘাটাল লোকসভার অন্তর্গত)। এই জেলার সার্বিক জেলা পরিষদের ফলাফল ৭০টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের ৫৬টি এবং বিজেপির ১৪টি।

হলদিয়া ও তমলুক মহকুমায় মোট জেলা পরিষদের আসন সংখ্যা ২৭টি। এর মধ্যে তৃণমূলের প্রাপ্ত আসন ২১টি এবং বিজেপির প্রাপ্ত আসন ছ’টি। অন্য দিকে, কাঁথি ও এগরা মহকুমায় জেলা পরিষদের মোট আসন (এগরা ১ বাদ দিয়ে) ৩৭টি। এর মধ্যে বিজেপির দখলে সাতটি। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পঞ্চায়েত সমিতি ১৩টি। যার মধ্যে বিজেপির দখলে দু’টি এবং একটি অমীমাংসিত। মোট আসন ৩১৫। বিজেপি জিতেছে ১০৩টি। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পঞ্চায়েত সমিতি ১১টি। বিজেপি পেয়েছে দু’টি। মোট আসন ৩২৭টি। বিজেপির ১২১টি।

কাঁথি এবং তমলুক লোকভা আসনদু’টি বিজেপিকে জেতানোর ‘দায়িত্ব’ পড়বে নিশ্চিত ভাবেই শুভেন্দু অধিকারীর উপর। পঞ্চায়েতের ফলাফল কি তাঁকে চিন্তায় রাখল?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement