Mamata Banerjee

‘আমার ভাই এবং ভাইয়ের বৌকে ভয় দেখিয়ে দলে নিতে চেয়েছিল বিজেপি’, বিধানসভায় বললেন মমতা

কয়লা পাচারকাণ্ডে বালিগঞ্জে টাকা উদ্ধারের ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই এবং ভ্রাতৃবধূর দিকে আঙুল তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এ নিয়ে বিধানসভায় পাল্টা মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:০২
Share:

কয়লা পাচারকাণ্ডে বালিগঞ্জে টাকা উদ্ধারের ঘটনায় মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক এবং তাঁর স্ত্রী কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ভয় দেখিয়ে, জোর করে’ দলে যোগদান করাতে চেয়েছিল বিজেপি। সোমবার বিধানসভায় জবাবি ভাষণে এমন দাবিই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও কার্তিক এবং কাজরীর নাম করেননি তিনি। বলেন, ‘‘আমার ভাই এবং ভাইয়ের বৌকে ভয় দেখিয়ে, জোর করে বিজেপিতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু, ওরা যায়নি । কারণ, ওরা জানে দিদি বকবে, রাগ করবে। আবার ভালবাসবে।’’ মমতার অভিযোগ, বিজেপিতে যোগ না দেওয়ার কারণেই কার্তিক এবং কাজরীকে নিশানা করা হচ্ছে।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত গত বুধবার। কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তে সেদিন বালিগঞ্জে এক বেসরকারি সংস্থার অফিসে রাতভর তল্লাশি চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। উদ্ধার করা হয় নগদ ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। তদন্তে নেমে মনজিৎ সিংহ গ্রেওয়াল ওরফে জিটি ভাই নামে এক ব্যক্তির কথা জানতে পারেন তদন্তকারীরা। যে বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়, সেটি মনজিতের বলে দাবি করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ইডি সূত্রের দাবি, মনজিতের মাধ্যমেই কয়লা পাচারের টাকা সরানোর চেষ্টা করতেন কোনও এক ‘প্রভাবশালী’ রাজনীতিক। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার এই দাবির পরই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী টুইট করে অভিযোগ করেন, ভবানীপুরে উপনির্বাচনে মমতার প্রচারের দায়িত্ব সামলেছিলেন ওই জিটি ভাই। মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর ভাই কার্তিকের সঙ্গে জিটি ভাইয়ের ছবিও (যদিও ওই ছবির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) প্রকাশ করেছেন তিনি। রবিবার এ নিয়ে ভিডিয়োও টুইট করেন শুভেন্দু। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। পাশাপাশি, মনজিতের সঙ্গে কাজরীর ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকারও বেশি সম্পত্তি থাকার অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতার সেই অভিযোগের পাল্টা, সোমবার বিধানসভায় জবাবি ভাষণে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

বিধানসভায় শুভেন্দুর সঙ্গে মনজিতের ছবি দেখান মমতা। তার পরই বলেন, ‘‘আমি মন্দিরে, মসজিদে যাই, গুরুদ্বারেও গিয়েছি। আমার ছবি দেখানো হচ্ছে।’’ মনজিতের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর যে ছবি টুইট করেছেন শুভেন্দু, সেই ছবিটি একটি গুরুদ্বারে তোলা। ছবির প্রসঙ্গ উত্থাপনের পরই মমতা নাম না করে বলেন, কার্তিক এবং কাজরী বিজেপিতে যোগ না দেওয়াতেই তাঁদের নিশানা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘বিজেপি কয়লা নিয়ে বলছে। কোল ইন্ডিয়া কার অধীনে? সবাইকে ইডি, সিবিআই দেখাচ্ছে। তৃণমূলের যত দোষ! গদ্দার সেজেছে সাধু বেশ।’’

শুভেন্দুর অভিযোগের পাল্টা একটি টিভি চ্যানেলে মুখ খুলেছেন কার্তিক। মনজিতের সঙ্গে তাঁর পরিচিতির কথা স্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে খণ্ডন করেছেন শুভেন্দুর অভিযোগ। দাবি করেছেন, ‘‘জ্ঞানত কখনও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করি না। আমার মনে হয়, ইডিতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাও মানুষ। সত্য-মিথ্যা নিশ্চয়ই বিচার করে দেখবেন।’’ শুভেন্দুর সঙ্গে মনজিতের একটি ছবিও সংবাদমাধ্যমে দেখিয়েছেন কার্তিক।

শুভেন্দুর অভিযোগের পাল্টা মুখ খুলেছেন কাজরীও। ২০২১ সালে কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন কাজরী। যে তিনটি জমি মনজিৎ বা তাঁর পরিবারের সঙ্গে একত্রে কেনার অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু, তার একটি রয়েছে ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডেই। সেই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে কাজরী বলেছেন, ‘‘কারও সঙ্গে কারও সম্পর্ক থাকাটা অন্যায় নয়। অভিযোগ ওঠা আর দোষী প্রমাণিত হয়ে যাওয়া এক ঘটনা নয়। আর যে সব সম্পত্তির কথা বলা হচ্ছে, সেই সব সম্পত্তির কথা আমার ভোটের হলফনামায় দেওয়া রয়েছে। এ বিষয়ে অহেতুক বির্তক তৈরি করা হচ্ছে।’’এই আবহে সোমবার বিধানসভায় এ নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে সরব হলেন, তা এই পর্বে আলাদা মাত্রা যোগ করল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement