প্রতীকী ছবি।
বঙ্গের ভোটার তথ্য যাচাই কর্মসূচিতে (ইভিপি) অংশগ্রহণের হার একশো শতাংশের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। তা যেন এক বালতি দুধে এক ফোঁটা চোনা পড়ার মতো। তবে এই কর্মসূচির উদ্দেশ্যপূরণে অন্যান্য রাজ্যকে কয়েক যোজন পিছনে ফেলে এগিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গই। পরিবারকে একত্র করা হোক বা তালিকার বাইরে থাকা ১৮ বছরের বেশি বয়সের বাসিন্দার আবেদন কিংবা নতুন ভোটারের আবেদন— সব ক্ষেত্রেই শীর্ষে বাংলা। সেই পরিসংখ্যানকে ‘হাতিয়ার’ করে সাফল্যের দাবি করছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) দফতর।
বয়স অনেক আগে ১৮ পেরিয়ে গেলেও নানা কারণে তালিকার বাইরে ছিলেন অনেকে। দেশে সেই সংখ্যা ৭.৩১ লক্ষ। তার প্রায় অর্ধেক বাসিন্দাই বঙ্গের। এই ধরনের বাসিন্দার ভোটার তালিকায় নাম তোলার ৩.১৪ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে এ রাজ্যে। গত কয়েক মাসে সংশোধনীর জন্য (আট নম্বর ফর্ম) আবেদন করেছেন বাংলার প্রায় ১.৪০ কোটি ভোটার। যার মধ্যে ইভিপি পর্বে আবেদনের সংখ্যা প্রায় কোটি ছুঁয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে অসম। সেখানকার ৫৫ লক্ষ ভোটার সংশোধনীর আবেদন করেছেন। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ইভিপির সঙ্গে নাগরিক পঞ্জিকরণের যে কোনও সম্পর্ক নেই, তা বারবার বলেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের এই সংশোধনীর আবেদন বা পরিবারকে একত্র করার তথ্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এনআরসি বা নাগরিক পঞ্জির আশঙ্কা ও উদ্বেগ কী ভাবে এই দুই রাজ্যের আমজনতার উপরে চেপে বসেছে। যদিও কমিশন-কর্তাদের মতে, সব রাজ্যেই কমবেশি ভাল কাজ হয়েছে। এর সঙ্গে নাগরিক পঞ্জিকে মিলিয়ে ফেলা ঠিক নয়।
ইভিপি-তে ভোটার তাঁর তথ্য যাচাইয়ের সঙ্গে সঙ্গেই পরিবারকে একত্র (ফ্যামিলি ট্রি) করেছেন। এ ক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছে বঙ্গ। এখানকার ১.৬১ কোটি ভোটার তথ্য যাচাই পর্বে পরিবারকে একত্র করেছেন। দ্বিতীয় রাজস্থান। সেখানকার ১.২২ কোটি ভোটার এই কাজ করেছেন। তৃতীয় স্থানে থাকা অসমে এক কোটি ভোটার পরিবারকে একত্র করেছেন ইভিপি পর্বে। দেশে মোট ৭.৭৭ কোটি ভোটার এই কাজ করেছেন। ০১.০১.২০১৯ তারিখে ১৮ বছর পূর্ণ হলেও অনেকেই যথাসময়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলেননি। সারা দেশে এই ধরনের ৬.২৪ লক্ষ বাসিন্দা ইভিপি-তে নাম তোলার আবেদন করেছেন। তাঁদের মধ্যে এই রাজ্যেই আছেন ৪.১৬ লক্ষ আবেদনকারী।
সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তথ্য যাচাইয়ের কাজ হয়েছে। তালিকায় বা ভোটার পরিচয়পত্রের (এপিক) নাম, ঠিকানা, সম্পর্ক, জন্মের তারিখ নিরীক্ষণ করে তা সংশোধন করেছেন তাঁরা। সেই সংশোধিত খসড়া ভোটার তালিকা ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশ করার কথা। সেই কাজের জন্য শনি ও রবিবারের ছুটি শিকেয় উঠেছে ভোটার তালিকার সঙ্গে যুক্ত কর্মী-অফিসারদের। সেই তালিকায় যাতে সামান্যতম ত্রুটি না-থাকে, তার জন্য সিইও-র দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। কারণ, এই খসড়া ভোটার তালিকাকে ব্যবহার করে ১৬ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ সংক্ষিপ্ত সংশোধনী (ভোটার তালিকায় সংযোজন, বিয়োজন, সংশোধন) প্রক্রিয়া চলবে।