তপসিয়ায় একটি বাড়ির গায়ে হেলে পড়েছে অন্য একটি ফ্ল্যাটবাড়ি। ছবি: সংগৃহীত।
তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। বাঘাযতীন, ট্যাংরা, বাগুইআটির পরে তপসিয়া। তপসিয়ার লোকনাথ বোস গার্ডেন রোডে একটি চারতলা ফ্ল্যাটবাড়ি হেলে পড়েছে বলে শুক্রবার সকালে নজরে এল স্থানীয়দের। স্থানীয়দের দাবি, বাড়িটি সাত-আট বছর আগে তৈরি হয়েছে। তাঁরা আঙুল তুলেছেন কলকাতা পুরসভার দিকে। উদ্বেগে রয়েছেন বাড়ির বাসিন্দারা। শুক্রবার সকালে বাড়িটি পরিদর্শন করে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন স্থানীয় ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জলি বসু। তিনি পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
লোকনাথ বোস গার্ডেন রোডে যে বাড়িটি হেলে পড়েছে, তার থেকে ৫০ মিটার দূরে ১০ই মহেন্দ্র রায় লেনে আরও দু’টি বাড়ি হেলে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়েরা। তাঁদের আশঙ্কা, যে কোনও সময় বাড়ি দু’টি ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বাড়ির বাসিন্দারা সন্ত্রস্ত হলেও তা ছেড়ে যেতে নারাজ।
শুক্রবার সকালে তপসিয়ার গুলোপাড়ার বাসিন্দাদের নজরে পড়ে যে, সেখানে চারতলা একটি ফ্ল্যাটবাড়ি অন্য একটি ফ্ল্যাটবাড়ির গায়ে হেলে পড়েছে। যে ফ্ল্যাটবাড়িটি হেলে পড়েছে, সেটি সাত-আট বছর আগে তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়েরা। তাঁদের আরও অভিযোগ, হেলে পড়া বাড়িটিতে ঠেকনা দেওয়ার জন্য লোহার রডও বসানো হয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা কৌশিক দাস বলেন, ‘‘সরু রাস্তার ধারে পাশাপাশি দু’টি ফ্ল্যাটবাড়ি রয়েছে। ওই দু’টি বাড়ির মাঝে কোনও জায়গা ছাড়া নেই বললেই চলে। তার মধ্যে চার তলা বাড়ির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’’ স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরসভা দেখেও না দেখার ভান করছে। সব কিছু বিচার না করেই ফ্ল্যাট তৈরির অনুমতি দিয়েছে।
কাউন্সিলর জলি লোকনাথ বোস গার্ডেনের ওই বাড়িটি দেখতে গিয়েছেন। হেলে পড়া বাড়ির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বাসিন্দাদের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের অসুবিধা হলে আমরা রয়েছি।’’ বিজেপির অভিযোগ, শহরে এ রকম আরও হেলে পড়া বাড়ি রয়েছে। প্রতি গলিতে রয়েছে। পুরসভার গাফিলতির কারণে এ রকম হয়ে চলেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়দের নজরে পড়ে যে, বিধাননগর পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে জগৎপুরের নেতাজিপল্লিতে একটি ফ্ল্যাটবাড়ি হেলে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুকুর বুজিয়ে ওই ফ্ল্যাটবাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল। ক্রমে সেটি পাশের ফ্ল্যাটবাড়িটির গায়ে হেলে পড়ছে বলে দেখা গিয়েছে। বুধবার সকালে ট্যাংরায় হেলে পড়ে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল। বাড়িটি তৈরি হচ্ছিল বলে সেখানে কেউ থাকতেন না। তবে মিস্ত্রিরা ছিলেন। তাঁদের সরিয়ে আনা হয়। এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। তবে পাশের বহুতলে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণের ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার কোনও শর্তই মানা হয়নি। পাশের বাড়িগুলির সঙ্গে যে ন্যূনতম দূরত্ব রেখে নির্মাণকাজ করতে হয়, সেই বিষয়টিও মানা হয়নি। তার আগে বাঘাযতীনে কলকাতা পুরসভার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডে একটি ফ্ল্যাটবাড়ি হেলে পড়েছিল। পর পর এই ঘটনার কারণে প্রশ্নের মুখে পড়েছে কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ। এই নিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘পুরসভা কি বাঁশ নিয়ে দাঁড়িয়ে হেলা বাড়ি সোজা করবে?’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, আইন অনুযায়ী কাজ করতে হয় পুরসভাকে। আর সেই আইন মেনেই কাজ করতে হবে পুরসভাকে। এ বার তপসিয়ায় বাড়ি হেলে পড়ার ঘটনা চোখে পড়ল স্থানীয়দের।