—প্রতীকী ছবি।
আজ নতুন নয়, বহু বছর ধরেই কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে এঁদের যাতায়াত। কখনও পোশাক, কখনও বৈদ্যুতিন পণ্য নিয়ে। সাধারণত কাজ বিভিন্ন ব্যবসায়ীর হয়ে, তাঁদের বরাত অনুযায়ী। কমিশনের ভিত্তিতে। এই কাজের সূত্রে মাসে দু’তিন বার পর্যন্ত ব্যাঙ্কক, দুবাই, মরিশাস, সিঙ্গাপুরের উড়ানে সওয়ার হন এঁরা। বিমানবন্দর এবং ব্যবসায়ী মহলে এঁদের পরিচিতিই ‘ক্যারিয়ার’ বা ‘বাহক’ হিসেবে। ইডি সূত্রে অভিযোগ, দীর্ঘ এক দশক ধরে রেশন দুর্নীতির কোটি-কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে এই বাহকদের মাধ্যমেও!
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, বিদেশে যাওয়ার সময়ে ডলার, পাউন্ডের মতো বিদেশি মুদ্রা নিয়ে যেতেই হয়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুর্নীতির টাকা অল্প-অল্প করে ক্রমাগত বদলানো হয়েছে ডলারের মতো বিদেশি মুদ্রায়। এবং তার পরে সেই ডলার বাহকদের মারফত পাঠানো হয়েছে বিদেশে। মূলত দুবাইয়ে। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘একলপ্তে খুব বেশি নয়, বরং কম-কম অঙ্কের ডলার বার বার পাঠানো হয়েছে এক-এক জনের হাত দিয়ে। বিদেশে খরচের জন্য প্রয়োজনীয় মুদ্রা হিসেবে দেখিয়ে যেমন তাঁরা তা নিয়ে গিয়েছেন, তেমনই ডলারের একাংশ লুকিয়ে পাচার করা হয়েছে শুল্ক দফতরের চোখকে ফাঁকি দিয়ে।’’
রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিকের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য। রেশন দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন তিনিও। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, শঙ্কর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে আটটি বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থা রয়েছে। অভিযোগ, ওই সমস্ত সংস্থায় যে অঙ্কের লেনদেনের অনুমতি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তরফ থেকে ছিল, আদতে যা করা হয়েছে তার থেকে অনেক বেশি।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে দাবি, এক দশকে (২০১২-২০২২) প্রায় ২০০-২৫০ জন ক্যারিয়ারের হাত দিয়ে বিদেশে ডলার পাচার করা হয়েছে। ইডি সূত্রে অভিযোগ, শঙ্কর ও তাঁর ছেলে শুভর নামে দুবাইয়ে একটি সংস্থার হদিস মিলেছে। সেখানে যেমন হাওয়ালা মারফত টাকা জমা পড়েছে, তেমনই গিয়েছে বাহকদের নিয়ে যাওয়া টাকাও। এ ছাড়া, আরও ভুয়ো সংস্থা খুলে সেখানেও বাহকদের নিয়ে যাওয়া টাকা জমা করার তথ্য-প্রমাণ হাতে এসেছে বলে ইডি সূত্রে দাবি। এক অফিসারের কথায়, শঙ্করের ঘনিষ্ঠ তিন হিসাবরক্ষক মারফত ওই তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। তাঁরা বাহক মারফত এ ভাবে টাকা পাচারের কথা নাকি লিখিত ভাবেও জানিয়েছেন।
দুর্নীতির টাকা বিদেশে পাচারের ক্ষেত্রে কয়েক জন বাহককে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ইডি সূত্রে দাবি, ডলার নিয়ে যাওয়ার কথা তাঁরা কবুলও করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে কমিশন মিলেছে ২ শতাংশ। এই বাহকদের মধ্যে যেমন এ রাজ্যের বেশ কিছু যুবক রয়েছেন, তেমনই এই ‘পেশায়’ জড়িত বিহার, উত্তরপ্রদেশের অনেকেও।