আজ রাজ্যে পূর্ণ লকডাউন। তার আগের দিন গ্রাহকদের লাইন স্টেট ব্যাঙ্কের বাইরে। মঙ্গলবার ফুলবাগানে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
অগস্ট জুড়ে গোটা রাজ্যে সাপ্তাহিক সার্বিক লকডাউন চালানো হবে। মঙ্গলবার নবান্নে কোভিড-পরিস্থিতি পর্যালোচনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাথমিক ভাবে অগস্টে ন’দিন পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করলেও রাতে তা থেকে দু’দিন কমিয়ে দেওয়া হয়। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, ধর্মীয় উৎসব এবং বিশেষ দিবস উপলক্ষে দু’টি দিন পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা না-করার আবেদন জানানো হয়েছিল বিভিন্ন মহলের তরফে। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে পূর্ব ঘোষিত ২ এবং ৯ অগস্ট সার্বিক লকডাউন হচ্ছে না। এই দু’দিনের পরিবর্তে কোন কোন তারিখে পূর্ণ লকডাউন হবে বা আদৌ হবে কি না, তা রাত পর্যন্ত জানানো হয়নি। বস্তুত, এ দিন দু’বার সার্বিক লকডাউনের তারিখ বদলানো হয়। তবে আজ, বুধবার পূর্বঘোষিত সার্বিক লকডাউন থাকছে রাজ্যে।
আনলক পর্বের আগের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩১ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে লকডাউন (বিশেষ ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ) চলার কথা ছিল। সরকারের এ দিনের সিদ্ধান্ত, সেই কড়া নিয়মবিধি চলবে ৩১ অগস্ট পর্যন্ত। এই লকডাউনের আওতায় রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জরুরি ছাড়া বাকি সব ধরনের গতিবিধিতে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সাপ্তাহিক সার্বিক লকডাউন এর অতিরিক্ত।
রাজ্য সরকার এ দিন জানিয়েছে, সাপ্তাহিক লকডাউনে শনি এবং রবিবারে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। যদিও পরে দু’টি রবিবার পূর্ণ লকডাউনের আওতা থেকে বাদ দেওয়া হয়। প্রশাসনের একাংশের মতে, সপ্তাহান্তে লকডাউন হলে দৈনিক রুজি-রুটি জোগাড়ের কাজে অসুবিধা হবে না। আবার সপ্তাহান্তে অকারণে বাইরে বেরোনোর হিড়িকও কমবে।
আরও পড়ুন: নয়া লকডাউনের লাভ নিয়েই প্রশ্ন
চলতি সপ্তাহে শনিবার বকর-ইদ থাকায় পূর্ণ লকডাউন হওয়ার কথা ছিল ২ অগস্ট, রবিবার। তা রাতে বাতিল করা হয়। পরের সপ্তাহে ৫ অগস্ট, বুধবার লকডাউন থাকবে। ওই সপ্তাহেই ৮ এবং ৯ অগস্ট, যথাক্রমে শনি এবং রবিবার লকডাউন থাকার কথা ছিল। বিশ্ব জনজাতি দিবস থাকায় বাদ গিয়েছে ৯ অগস্ট। ১৫ অগস্ট শনিবার হলেও সে দিন পূর্ণ লকডাউন হবে না। তার পরিবর্তে ১৬ এবং ১৭ অগস্ট যথাক্রমে রবি এবং সোমবার থাকবে লকডাউন। ওই সপ্তাহে গণেশ পুজো থাকায় পরবর্তী লকডাউনের দিন ২৩ এবং ২৪ অগস্ট যথাক্রমে রবি এবং সোমবার। সেই সপ্তাহে আবার মহরম থাকায় পরবর্তী লকডাউনের দিন ৩১ অগস্ট, সোমবার। মমতা বলেন, ‘‘এ বারও সবাই সহযোগিতা করুন। নিজেদের বাঁচাতেই।’’
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এ দিন সার্বিক লকডাউনের দিন-নির্বাচনে প্রথম থেকেই সমস্যা হয়েছিল। প্রথমে যে দিনগুলি ঘোষণা করা হয়েছিল, তাতে অগস্ট মাসে ১০ দিন সার্বিক লকডাউন হত। কিন্তু সেই সময় গণেশ পুজো এবং মহরমের দিনগুলি খেয়াল করেনি সরকার। তাই প্রথম ঘোষণা সংশোধন করে পূর্ণ লকডাউনের দিন দ্বিতীয় বার ঘোষণা করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘ক্যালেন্ডারে একটু টেকনিক্যাল মিসটেক আমাদের সঙ্গে হয়েছিল। দিনগুলো নিয়ে কিছু সংশয় হয়েছে। সেই সংশয় এড়াতে নতুন দিন ঘোষণা হচ্ছে কারণ, দু’তিনটে উৎসব পড়ে গিয়েছে। সরকারি ছুটি ছাড়া ক্যালেন্ডারে সব লেখা থাকে না।’’ রাতে আবার দু’টি রবিবার বাদ পড়ে তালিকা থেকে। সরকার এ দিন জানিয়েছে, প্রতি দিন এখন ১৬-১৭ হাজার করে পরীক্ষা হচ্ছে রাজ্যে। শীঘ্রই অ্যান্টিজেন পরীক্ষাও শুরু হবে। কোভিডের নমুনা পরীক্ষা যত বাড়বে, ততই বাড়তে পারে আক্রান্তের সংখ্যাও। মমতা বলেন, ‘‘৫৬টা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা হচ্ছে। কোভিড এখন ‘পিক’এ। এ রাজ্যে একাধিক সীমান্ত, একাধিক রাজ্যের সীমানাও রয়েছে। তাই এ রাজ্যে বাইরের অনেক মানুষ চিকিৎসা করতে আসেন। এখানকার মতো চিকিৎসা পরিকাঠামো আর কোথাও নেই।’’