নবান্নর কাছে নাকা চেকিং। ছবি: পিটিআই।
কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অবশ্যই ছিল। কিন্তু রবিবার, প্রথম দিনই সংক্রমণ রোধে রাজ্য সরকারের নির্দেশ কার্যকর করতে কলকাতা-সহ রাজ্যের বেশিরভাগ জায়গায় ‘সক্রিয়’ হতে হল পুলিশকে। বেশিরভাগ বাজারেই ভিড় দেখা গিয়েছে। কোথাও নির্দেশ অমান্য করায় পুলিশ লাঠি চালায়, কোথাও গ্রেফতার করা হয়, কোথাও বা দেওয়া হয় শাস্তি।
সকাল ৭টা থেকে ১০টা— আগামী ৩০ মে পর্যন্ত এই তিন ঘণ্টা দোকান-বাজার খোলা রাখার সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এ দিন বেশির ভাগ জায়গাতেই তার পরেও দোকান খোলা থাকায় এবং রাস্তায় লোকজন থাকায় ব্যবস্থা নিতে হয় পুলিশকে। কলকাতা জুড়ে কড়া পুলিশি বন্দোবস্ত ছিল। প্রায় প্রতি মোড়ে চলে নাকা-তল্লাশি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পথে বেরিয়েছেন বুঝলেই বহু ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হয়েছে। বেলা ১০টার পরে দোকান-বাজারের ভিড় সরাতে পুলিশকে লাঠি হাতে তেড়ে যেতেও দেখা গিয়েছে।
উল্টোডাঙা বাজার যেমন এ দিন দুপুরের পরেও খোলা ছিল। সেখান থেকে সাত জনকে আটক করে পুলিশ। একই রকম চিত্র দেখা গিয়েছে বালিগঞ্জের বাজারেও। সেখানে কয়েক জন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। লালবাজার জানিয়েছে, এ দিন রাত ৮টা পর্যন্ত শহরে বিধিভঙ্গের অভিযোগে ৭৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাস্ক না-পরার জন্য এবং প্রকাশ্যে থুতু ফেলার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যথাক্রমে ৩৪৪ জন এবং আট জনের বিরুদ্ধে। অকারণে ঘোরাঘুরিতে আটক করা হয়েছে প্রায় ৮৫টি গাড়ি।
লকডাউনের জন্যে ফাঁকা রাস্তাঘাট। ছবি: পিটিআই।
অভিযোগ, দিনভর পুলিশের এই কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল হয় বিকেলের পরে। চায়ের আড্ডার নামে এ দিনও চলেছে জমায়েত। পাড়ার মোড়ে বন্ধ হয়নি তাস খেলার আসরও। সোমবার থেকে পুলিশকে যা আরও চিন্তায় ফেলবে বলে অনেকের মত।
সকালের দিকে দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন বাজারে ভিড় ছিল। অনেক ক্ষেত্রেই শিকেয় ওঠে দূরত্ববিধি। মেদিনীপুর শহরে পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারিও তেমন ছিল না। খড়্গপুর এবং ঝাড়গ্রামে সকাল সাড়ে দশটাতেও দোকান খোলা ছিল। পরে পুলিশ পথে নামে। খড়্গপুরে এক বেলায় পুলিশি অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে ৬৭ জন। তমলুক-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকার বাজার ও সড়কেও পুলিশের টহলদারি ছিল। কাঁথিতে বিধিনিষেধ কার্যকর করতে পথে প্রচারে নামেন মহকুমাশাসক।
আসানসোল, দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজার-সহ কয়েকটি এলাকায় নির্দিষ্ট সময়ের পরেও দোকানপাট খোলা থাকায় পুলিশ গিয়ে বন্ধ করে দেয়। দুর্গাপুরে বেশ কিছু মোটরবাইক, গাড়ি ও পিক-আপ ভ্যান আটক করা হয়। পুলিশের দাবি, রবিবার ছুটির দিন থাকায় ঝাড়খণ্ড সীমানা দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি বিশেষ চলেনি। তবে যে কয়েকটি গাড়ি যাতায়াত করেছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে ছাড়া হয়েছে।
শুনশান: রাজ্যে জারি হওয়া বিধিনিষেধের প্রথম দিনে জনশূন্য শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
সকাল ১০টার পরেও দোকানপাট খোলা থাকায় পূর্ব বর্ধমানের কালনা, ভাতার-সহ নানা জায়গায় পুলিশ অভিযান চালায়। পুরুলিয়া শহরের চকবাবাজার ও মধ্যবাজারে এ দিন কিছু দোকান সময়ের পরেও খোলা দেখে পুলিশ গিয়ে ব্যবসায়ীদের রাস্তায় ডন-বৈঠক দিতে বাধ্য করে। অধিকাংশ জায়গাতেই অবশ্য বেলা সাড়ে ১০টার মধ্যেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের হিরা মার্কেটে একটি বস্ত্রবিপণি সময়ের পরেও খোলা থাকায় শাটার নামিয়ে দেন এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) কুতুবুদ্দিন খান। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ১৫ জন পথচারীকে আটক করা হয়।
বীরভূমের জেলা সদর সিউড়িতে সকাল ১০টা বাজতেই লাঠি হাতে রাস্তায় নামে পুলিশ। বন্ধ করানো হয় খোলা থাকা দোকানপাট। জেলার ১৩টি আন্তঃরাজ্য সীমানায় নাকা চেকিং করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী। বিধি ভাঙায় ধরপাকড় চলে হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায়। সময়ের পরেও খোলা থাকা দোকানপাট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। বাদুড়িয়ার একটি হাট বন্ধ করে দেন বিডিও সুপর্ণা বিশ্বাস। হাবড়াতে ক্রেতা-বিক্রেতার উপর মৃদু লাঠি চালায় পুলিশ।
শিলিগুড়ি থেকে মালদহ, কোচবিহার থেকে দুই দিনাজপুর— উত্তরের সর্বত্রই ঘড়ির কাঁটা ১০টা অতিক্রম করলেও আনাজ থেকে মাছ, মুদির দোকান খোলা থাকতে দেখা গিয়েছে। পুলিশ ময়দানে নামতেই অবশ্য ছবিটা পাল্টায়। এখানেও ধরপাকড় চলে। তবে শাস্তির ভয়েই হোক কিংবা সচেতনতায়, নতুন বিধিনিষেধ কার্যকরের প্রথম দিন মুর্শিদাবাদের মানুষ মোটের উপর ঘরবন্দিই ছিলেন। দু’-এক জায়গায় নিয়ম ভেঙে কিছু মানুষ রাস্তায় বেরোলেও পুলিশের কড়া মনোভাবে তাঁরাও নিয়ম মানতে বাধ্য হন। কয়েকটি জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ের পরে দোকান খোলা থাকায় পুলিশ বন্ধ করে দেয়। গ্রামীণ হাওড়ার বাজারগুলিতে তেমন ভিড় দেখা যায়নি।