সতর্কতা: দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের সার্কিট হাউসের সামনের রাস্তা। নিজস্ব চিত্র
‘‘ঘুরতে যাব,’’ বাঁটুলদার কাছে আবদার করল নন্টের সঙ্গী ফন্টে। বাঁটুল চেঁচিয়ে উঠে পত্রপাঠ তা নাকচ করে দিল। করোনা রুখতে নারায়ণ দেবনাথের সৃষ্টি কমিকস সিরিজ়ের উপরে এ ভাবেই নির্ভর করছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। যার পোশাকি নাম ‘কোভিড আর্ট’।
পোস্টার থেকে মাইকিং, সবই রয়েছে। তাতেও সব সময় মানুষের নজর কাড়া যাচ্ছে না। কিন্তু কমিকস সিরিজ়ের দিকে দৃষ্টি দেবেন না, এমন মানুষ হাতে গোনা। তাই নন্টে-ফন্টে এবং বাঁটুল দি গ্রেটকে আশ্রয় করে মানুষকে সচেতনতার বার্তা দিচ্ছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন।
ভয়ঙ্কর ভাইরাসের থাবা এড়াতে লকডাউন চলছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে না-বেরোতে বার বার আবেদন জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু আমজনতা যে সব সময়েই তাতে কর্ণপাত করছে, তা নয়। বরং ‘ভুল’ তথ্যের দিকে মন দিচ্ছেন অনেকেই। তাতে অনেক সময় আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যথাযথ দিশা দেখাতে রংবেরঙের ‘গ্রাফিতি’-কে হাতিয়ার করল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। সেই গ্রাফিতিতেই নন্টের সঙ্গী ফন্টে বাঁটুলের কাছে আবদার করছে, ‘বাঁটুলদা, চলো, ঘুরতে যাই’। সটান নাকচ করে দিয়ে বাঁটুল বলে উঠছে, ‘চোপ! বাড়িতে থাক, সুস্থ থাক।’ দক্ষিণ দিনাজপুরের সার্কিট হাউসের কাছে জাতীয় সড়কে চোখ রাখলে দেখা যাবে এই দৃশ্য।
বাড়ির দরজা আধখোলা করে বাইরে বেরোবেন কি না, ইতস্তত করছেন গৃহস্থ। কিন্তু লকডাউনের সময় অতি প্রয়োজন ছাড়া বেরোনো ঠিক নয়। যামিনী রায়ের অঙ্কন ব্যবহার করে সেই বার্তাই দেওয়া হচ্ছে জেলাশাসকের অফিস সংলগ্ন সড়কের মাঝখানে। ‘‘মানুষকে সচেতন করতে এবং সেই সঙ্গে ভুল তথ্য ঠেকাতেই এই ভাবনা। মূলত জেলার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতেই গ্রাফিতি করা হচ্ছে,’’ বলেন জেলাশাসক নিখিল নির্মল।
‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির তিন বন্ধুর পাশাপাশি থাকার দৃশ্য অনেকেরই মনে আছে। কিন্তু শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে গেলে সেই দৃশ্য বদলানো দরকার। তাই ওই ছবিটিতে ‘ক্রস’ চিহ্ন দিয়ে বলা হচ্ছে, এটা ঠিক নয়। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বন্ধুত্ব অটুক রাখা হোক— এই বার্তাই গ্রাফিতিতে তুলে ধরছেন শিল্পী।
বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর এবং বুনিয়াদপুরে এমন ভাবে সাতটি রঙিন ছবি ও স্লোগান ব্যবহার করছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। তিনটির কাজ শেষ। দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মহাদ্যুতি অধিকারী বলেন, ‘‘বিভিন্ন ভাবে প্রচার চলছে। রঙের সঙ্গে স্লোগানের মিশেল হলে মানুষের চোখ অনেক সহজে সে-দিকে যায়।’’