বেঙ্গালুরুতে ওষুধ দোকানের কর্মীকে খুনের অভিযোগে বুধবার গ্রেফতার হয়েছেন জনপ্রিয় কন্নড় অভিনেতা দর্শন থুগুদীপা। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী পবিত্রা গৌড়াকেও।
প্রথমে মনে করা হচ্ছিল দর্শনের স্ত্রী পবিত্রা। কিন্তু তাঁরা বিবাহিত নন বলেই খবর। দর্শনের স্ত্রীর নাম বিজয়লক্ষ্মী। ২০০৩ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। ভিনেশ নামে দম্পতির এক পুত্রও রয়েছে।
অন্য দিকে, পবিত্রা এক জন কন্নড় অভিনেত্রী। জনপ্রিয় মুখ না হলেও বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পবিত্রা একটি রিল পোস্ট করলে দর্শন এবং তাঁর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আসে।
সম্প্রতি ওষুধের দোকানের কর্মীকে খুনের দায়ে গ্রেফতার হয়েছেন দর্শন-পবিত্রা। দর্শন কন্নড় ছবির জনপ্রিয় তারকা। পরিচিত মুখ। কিন্তু কৌতূহল তৈরি হয়েছে পবিত্রাকে নিয়ে।
পবিত্রা সিনেমার পাশাপাশি টেলিভিশনের ধারাবাহিকেও কাজ করেছেন। তাঁর অভিনীত ছবিগুলির মধ্যে ‘চাত্রিগালু সার চাত্রিগালু’, ‘অগম্যা’ এবং ‘প্রীতি কিথাবু’ অন্যতম।
পবিত্রার ইনস্টাগ্রাম বায়ো অনুযায়ী তিনি একজন মডেল এবং শিল্পী।
বর্তমানে পবিত্রা ফ্যাশন ডিজ়াইনার হিসাবে কাজ করেন। তাঁর একটি বুটিকও রয়েছে। বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী শাড়ি এবং পোশাক তৈরির জন্য বিশেষ নাম রয়েছে পবিত্রার সংস্থার।
চলতি বছরের শুরুর দিকে সমাজমাধ্যমে আলোড়ন তৈরি করেছিলেন পবিত্রা। ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেন অভিনেত্রী। ওই ভিডিয়োতে তাঁর সঙ্গে দেখা গিয়েছিল দর্শনকেও। ভিডিয়োর ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘আমাদের সম্পর্কের ১০ বছর’।
এর পরেই হইচই পড়ে যায়। দর্শন এবং পবিত্রার সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আসে। সরব হন দর্শন-পত্নী বিজয়লক্ষ্মীও। পবিত্রার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন তিনি। তার কয়েক মাস পেরোতে না পেরোতেই এ বার খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হলেন পবিত্রা।
দর্শন এবং পবিত্রার বিরুদ্ধে যে ব্যক্তিকে খুনের অভিযোগ উঠেছে, তাঁর নাম রেণুকা স্বামী (৩৩)। পেশায় ওষুধের দোকানের কর্মী রেণুকা চিত্রদুর্গের বাসিন্দা ছিলেন। সেখানেই স্থানীয় এক ওষুধের দোকানে কাজ করতেন তিনি।
৮ জুন হঠাৎই উধাও হয়ে যান রেণুকা। তাঁর পরিবারের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এর পর বেঙ্গালুরুর সুমনাহাল্লি সেতুর কাছে গত সোমবার রেণুকার দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেতুর কাছে একটি নর্দমায় একটি কুকুর রেণুকার মৃতদেহ টানাটানি করার সময় বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে। তদন্তে নামে পুলিশ।
এই ঘটনায় তিন জনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে রবিবার অনেক রাত পর্যন্ত অভিনেতা দর্শনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল অভিযুক্তদের। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁরা খুনের কথা স্বীকার করে জানান, অভিনেতা দর্শনের নির্দেশেই তাঁরা এই কাজ করেছেন। ধৃতদের কাছ থেকেই রেণুকার পরিচয় উদ্ঘাটিত হয়।
মঙ্গলবার সকালে মাইসুরুর বাগানবাড়ি থেকে আটক করা হয় দর্শন এবং পবিত্রাকে। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেঙ্গালুরুতে নিয়ে আসা হয় তাঁদের। এ ছাড়াও আরও ১০ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, দর্শনের অনুরাগী ছিলেন রেণুকা। কিন্তু পবিত্রার সঙ্গে দর্শনের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক তিনি মেনে নিতে পারেননি। আর তাই ইনস্টাগ্রামে একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে তিনি প্রায়ই পবিত্রাকে আপত্তিকর মেসেজ পাঠাতেন। দর্শনের সংসার ভাঙার অভিযোগ এনে পবিত্রাকে ইনস্টাগ্রামে আপত্তিকর মেসেজ পাঠানো হয় বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
এর পরেই নাকি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন দর্শন। অভিযোগ, প্রথমে তাঁর ফ্যানক্লাবের সদস্যদের দিয়ে রেণুকাকে অপহরণ করান অভিনেতা। এর পর তাঁকে একটি জায়গায় আটকে রেখে মারধর করা হয়। পরে দর্শনও সেখানে পৌঁছন। অভিযোগ, তিনিও বেল্ট দিয়ে মারধর করেন রেণুকাকে।
দর্শন সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পর তাঁর ফ্যানক্লাবের সদস্যরা রেণুকাকে আবার মারধর করেন বলে অভিযোগ। তখনই রেণুকার মৃত্যু হয়। এর পর রেণুকার দেহ ফেলে আসা হয় ওই নর্দমায়।
এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত দর্শন, পবিত্রা-সহ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।