মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মানিকতলার প্রার্থী হিসাবে আগেই সুপ্তি পাণ্ডে নাম জানা গিয়েছিল তৃণমূল সূত্রে। শুক্রবার সকালে তৃণমূলের তরফে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেল এই কেন্দ্রে প্রয়াত সাধন পাণ্ডের স্ত্রী সুপ্তিকেই প্রার্থী করা হয়েছে। বাকি তিন বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থীদের নামও জানিয়ে দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, রায়গঞ্জে প্রার্থী হচ্ছেন এই বিধানসভা কেন্দ্রেরই প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে প্রার্থী হচ্ছেন প্রাক্তন বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী। আর বাগদা কেন্দ্রে প্রার্থী হচ্ছেন দলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের কন্যা মধুপর্ণা ঠাকুর।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে রায়গঞ্জ এবং রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে জয়ী হয়েছিলেন কৃষ্ণ এবং মুকুটমণি। পরে তাঁরা তৃণমূলে যোগ দেন। লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণকে রায়গঞ্জ কেন্দ্রে এবং মুকুটমণিকে রানাঘাট কেন্দ্রে প্রার্থী করে রাজ্যের শাসকদল। দু’জনেই বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন। ফলে এই দুই কেন্দ্রে উপনির্বাচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। যদিও লোকসভা নির্বাচনে জিততে পারেননি দু’জনেই। তবে লোকসভা ভোটে জিততে না পারলেও দেখা যাচ্ছে দলবদলু দুই নেতার উপরেই বিধানসভা উপনির্বাচনে ভরসা রাখছে তৃণমূল। তাই ছেড়ে দেওয়া আসনে ফের প্রার্থী হচ্ছেন কৃষ্ণ এবং মুকুটমণি।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বাগদা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস। পরে তিনিও দল বদল করে তৃণমূলে আসেন। লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে বনগাঁ কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিল রাজ্যের শাসকদল। কিন্তু বিজেপির শান্তনু ঠাকুরের কাছে হেরে যান তিনি। বিশ্বজিৎ বিধায়ক পদে ইস্তফা দেওয়ায় বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে। মতুয়া অধ্যুষিত এই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে ঠাকুরবাড়ির কন্যা তথা বনগাঁর সাংসদ শান্তনুর জ্যাঠতুতো বোন মধুপর্ণাকেই বেছে নিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূলে গুঞ্জন ছিল যে, বাগদা কেন্দ্রে ফের বিশ্বজিৎকেই প্রার্থী করতে পারে তৃণমূল। প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পর বিশ্বজিৎ এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমিই দিদিকে বলেছিলাম আমায় প্রার্থী না করতে। কারণ, আমি জেলা সভাপতি। আমার দায়িত্ব অনেক বড়। আমায় সিটটা জেতাতে হবে।” কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী তথা বনগাঁর সাংসদ শান্তনুর বিরুদ্ধে তাঁকে এবং তাঁর মাকে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে অনশনে বসে সম্প্রতি সংবাদ শিরোনামে আসেন মধুপর্ণা।
গত বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতার মানিকতলা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা, অধুনা প্রয়াত সাধন পাণ্ডে। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সাধন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মারা যান। কিন্তু তার পর দীর্ঘ দিন মানিকতলা বিধায়কহীন থাকলেও সেখানে উপনির্বাচন হয়নি। কারণ, গত বিধানসভায় এই কেন্দ্রের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে কলকাতা হাই কোর্টে ‘ইলেকশন পিটিশন’ দাখিল করেছিলেন। সম্প্রতি সেই আইনি জটিলতা কেটে যায়। গত মঙ্গলবার নবান্নে মানিকতলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রার্থী হিসাবে প্রয়াত মন্ত্রী সাধনের স্ত্রী সুপ্তির নামেই যে সিলমোহর পড়তে চলেছে, তা বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার সকাল থেকেই মানিকতলা বিধানসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাঁর সমর্থনে প্রচার শুরু করে দেন তৃণমূল নেতারা।
গত ১০ জুন নির্বাচন কমিশন এই চার বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের দিনক্ষণ জানিয়ে দিয়েছে। চার কেন্দ্রেই নির্বাচন হবে আগামী ১০ জুলাই। ভোটগণনা ১৩ জুলাই। কমিশন জানিয়েছে, উপনির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ২১ জুন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ জুন। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও দেশের আরও ছ’টি রাজ্যের ন’টি কেন্দ্রে আগামী ১০ জুলাই উপনির্বাচন হবে। ভোট হবে বিহার, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাবের একটি করে কেন্দ্রে। হিমাচল প্রদেশের তিনটি এবং উত্তরাখণ্ডের দু’টি কেন্দ্রেই এই দিনক্ষণ অনুযায়ী উপনির্বাচন হবে।