VC Recruitment Row

উপাচার্যদের নিয়ে রাজ্য বনাম রাজভবন সংঘাত তুঙ্গে, রাজ্যপালের নিয়োগকে ‘স্বীকৃতি’ই নয় ব্রাত্যর

রাজ্যের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এই নিয়োগ আইনসম্মত ভাবে হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩ ০৪:১৯
Share:

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।

অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাতের পারদ ক্রমশ চড়ছে। সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আচার্যের নিয়োগ করা উপচার্যদের স্বীকৃতি দেবে না রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতর। শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। রাজ্যের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন আচার্য সিভি আনন্দ বোস। নিয়ম মেনে ওই অস্থায়ী উপাচার্যদের নিয়োগ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর দাবি, উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই এই নিয়োগ করা হয়েছে। ব্রাত্যের অভিযোগ, উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই আচার্য বৃহস্পতিবার নিজের মর্জিমতো উপাচার্যদের নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছেন। মন্ত্রীর আরও দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ করবেন রাজ্যপাল। কিন্তু ১১টি সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। এ নিয়ে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। বিতর্কের আবহে মুখ খুলেছেন রাজ্যপালও। শুক্রবার আচার্য বলেছেন, ‘‘আলোচনা করা মানেই ঐকমত্য হওয়া নয়।’’

Advertisement

উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর বৃহস্পতিবারই সমাজমাধ্যমে এই নিয়ে সব হয়েছিলেন ব্রাত্য। নবনিযুক্ত অস্থায়ী উপাচার্যের এই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করার আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, এক জন বাদে, বাকি উপাচার্যরা সকলেই রাজ্যপালের নির্দেশ মোতাবেক দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। অন্য দিকে, উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে এই সংঘাতের আবহে সরব হয়েছেন ‘সরকারপন্থী’ হিসাবে পরিচিত শিক্ষাবিদ এবং প্রাক্তন উপাচার্যদের একাংশ। এই বিষয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।

কেন সংঘাত

Advertisement

উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাতের শুরু বুধবার। ওই দিন রাজ্যের ১৪টি উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অস্থায়ী উপাচার্যের নাম ঠিক করতে রাজভবনে শলা-পরামর্শ করেন রাজ্যপাল। বৃহস্পতিবার সেই সংঘাত আরও তীব্র হয়। ওই দিন ১১ জনকে অস্থায়ী উপাচার্য পদে নিয়োগের চিঠি দেয় রাজভবন। এই পদ্ধতি আইন মেনে হয়নি বলে অভিযোগ করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। টুইটারে তিনি জানান, উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই নিয়োগ করা হয়েছে। ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশন বা ইউজিসি (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশন)-এর শর্ত পূরণ করেই উপাচার্য হতে হয়। শর্তগুলির মধ্যে অন্যতম হল, ১০ বছর অধ্যাপক হিসাবে কাজের অভিজ্ঞতা। অভিযোগ, যে ১১ জনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে রাজ্যপাল নিয়োগ করেছেন, তাঁদের কয়েক জনের ওই শর্ত পূরণের যোগ্যতা নেই।

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ

১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হল যাদবপুর, কলকাতা, কাজী নজরুল, কল্যাণী, বিএড, বর্ধমান, দক্ষিণ দিনাজপুর সিধো-কানহো-বীরসা, বাঁকুড়া, ডায়মন্ড হারবার, সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তাঁদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে বলে জানানো হয়েছে রাজ্যপালের স্বাক্ষর করা চিঠিতে। নবনিযুক্ত ওই অস্থায়ী উপাচার্যরা যাতে ওই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেন, বৃহস্পতিবার সমাজমাধ্যমে সেই অনুরোধ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু একজন বাদে বাকি সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়েই রাজ্যপালের নিযুক্ত করা অস্থায়ী উপাচার্যরা দায়িত্ব নিয়েছেন। শুধুমাত্র রাজ্যপালের নির্দেশানুযায়ী দায়িত্বভার গ্রহণ করেননি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্যের ভার নিতে বলেছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু তিনি সেই দায়িত্ব নিতে পারবেন না বলে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। সূত্রের খবর, ব্যক্তিগত কারণেই দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্যের পদ গ্রহণ করছেন না বলে তিনি জানিয়েছেন।

রাজ্যপালের বক্তব্য কী

অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে রাজ্য শিক্ষা দফতরের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাতের আবহে শুক্রবার মুখ খুলেছেন রাজ্যপাল। বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রীর টুইটবার্তার পর শুক্রবার রাজভবনে ‘তেলঙ্গানা স্টেটহুড উদ্‌যাপন দিবস’-এ রাজ্যপাল বোস বলেন, ‘‘আলোচনা করা মানেই ঐকমত্য হওয়া নয়।’’ পুরনো উপাচার্যদের ভূমিকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গোষ্ঠীতন্ত্র প্রাধান্য পাচ্ছিল বলে রাজভবনের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন ব্রাত্য। বলেছেন, ‘‘তা হলে বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করলেন না কেন রাজ্যপাল?’’

কী বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী

সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আচার্যের নিয়োগ করা উপচার্যদের স্বীকৃতি দেবে না রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতর। শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। আইনসম্মত ভাবে অস্থায়ী উপাচার্যদের নিয়োগ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। ব্রাত্যের অভিযোগ, উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই আচার্য বৃহস্পতিবার নিজের মর্জিমতো উপাচার্যদের নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছেন। বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি নিয়ে উচ্চশিক্ষা দফতরের গড়া সন্ধান কমিটি (সার্চ কমিটি) সম্ভাব্য উপাচার্যদের নামের তালিকা দেবে এবং আচার্যের অনুমোদনের পর সেই তালিকা থেকে উপাচার্যকে বেছে নেওয়া হবে। এত দিন রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে এটাই ছিল দস্তুর। কিন্তু বর্তমান রাজ্যপালের আমলে প্রচলিত সেই পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষামন্ত্রীর। তাঁর দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ করবেন রাজ্যপাল। কিন্তু ১০টি সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে ‘চেকস অ্যান্ড ব্যালান্স’ থাকে বলে জানতাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার গণতন্ত্র শব্দটাকেই মান্যতা দিতে চাইছে না।’’ উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বিবেচনা করছেন বলেও জানান ব্রাত্য।

সরব প্রাক্তন উপাচার্যরা

উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে এই দ্বন্দ্বের আবহে সরব হয়েছেন ‘সরকারপন্থী’ হিসাবে পরিচিত শিক্ষাবিদ এবং প্রাক্তন উপাচার্যদের একাংশ। তাঁদের অনেকেই ওই ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন, যেখানে নতুন অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপালের সমালোচনা করেছেন তাঁরা। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দেব নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যপাল নিয়ম ভাঙছেন। আমরা নিয়ম মেনে চলতে চাই। আমরা অপমানিত। উচ্চ শিক্ষা দফতরের মাধ্যমে নিয়োগ হবে, সেটাই নিয়ম। তিনি সরাসরি নিয়োগের চিঠি পাঠাচ্ছেন। যাঁরা নিয়ম ভাঙতে চান না, তাঁদের তিনি সরিয়ে দিলেন। যাঁরা ভাঙতে চান, তাঁদের মেয়াদ বাড়ালেন। আমি অবাক। বিক্ষুব্ধ।’’ প্রাক্তন উপাচার্য আশুতোষ ঘোষের দাবি, আচার্যের সঙ্গে সরাসরি উপাচার্যেরা যোগাযোগ করবেন না, এটাই নিয়ম। সকলকে আইন মানতে হবে। তাঁরা যে সেই নিয়ম মেনেই পদ হারিয়েছেন, সে দাবিও করেছেন তিনি। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্র এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। উচ্চশিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে উষ্মাপ্রকাশও করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী কাল টুইট করেছেন। এই টুইট আগেই করা উচিত ছিল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement