সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে কলকাতা হাই কোর্টের একটি নির্দেশই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্দেশের একটি অনুচ্ছেদের বদল চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হল রাজ্য সরকার। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সন্দেশখালি নিয়ে হাই কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তার অষ্টম অনুচ্ছেদটির পরিবর্তনের আবেদন জানিয়েছে তারা।
বুধবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে পূর্বের নির্দেশের অষ্টম অনুচ্ছেদের পরিবর্তন চায় রাজ্য। রাজ্যের আইনজীবী জানান, নির্দেশের ওই অংশটিই শাহজাহানকে গ্রেফতার করার বিষয়ে পুলিশের প্রধান বাধা।
কী আছে অষ্টম অনুচ্ছেদে?
বস্তুত, গত ৫ জানুয়ারি রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল ইডি। সেই আক্রমণের প্রেক্ষিতে তিনটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। যা নিয়ে হাই কোর্টে যায় কেন্দ্রীয় সংস্থা। হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চ ইডি আধিকারিকদের উপর আক্রমণের ঘটনায় সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশকে যৌথ ভাবে সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল। যাকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় ইডি এবং রাজ্য পুলিশ। সেখানে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সিট গঠনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশের অষ্টম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, রাজ্য পুলিশও এই সংক্রান্ত তদন্ত থেকে দূরে থাকবে। অর্থাৎ, এই সংক্রান্ত তদন্ত থেকে রাজ্যের পুলিশকে বিরত থাকতে বলেছিল হাই কোর্ট।
সম্প্রতি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শাহজাহানের গ্রেফতারির প্রসঙ্গে জানান, আদালতের নির্দেশের কারণেই রাজ্য পুলিশ ওই নেতাকে গ্রেফতার করতে পারছে না। আদালতে সেই প্রসঙ্গ উঠলে সোমবার প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম জানিয়ে দেন, আদালত শাহজাহানের গ্রেফতারিতে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। পুলিশ চাইলেই তাঁকে গ্রেফতার করতে পারে।
এর পর বুধবার সেই অষ্টম অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে তার পরিবর্তন চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির ব্যাখ্যা, আদালত সিট গঠন করে এই সংক্রান্ত তদন্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। কিন্তু শাহজাহানকে গ্রেফতার করায় স্থগিতাদেশ দেয়নি। তাঁকে গ্রেফতার করতে কোনও বাধা নেই।
এই সংক্রান্ত শুনানিতে ইডির আইনজীবী সওয়াল করেন, শাহজাহানের বিরুদ্ধে সন্দেশখালির নানা ঘটনায় মোট ৪২টি এফআইআর হয়েছে। রাজ্য পুলিশ নিজেই তা জানিয়েছে। আদালতের নির্দেশের কারণে ইডির বিরুদ্ধে হামলার তদন্তে স্থগিতাদেশ যদি থাকেও, অন্য এফআইআরগুলির প্রেক্ষিতে কেন তাঁকে গ্রেফতার করা গেল না? সব পক্ষের বক্তব্য শুনে বুধবার প্রধান বিচারপতি জানান, ইডি, সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশের মধ্যে যে কেউ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারবে।