কংগ্রেস নেতা বীরভদ্র সিংহ (বাঁ দিকে) এবং বিক্রমাদিত্য সিংহ (ডান দিকে) — ফাইল চিত্র।
রাজ্যসভার ভোটের পরই হিমাচলপ্রদেশে রাজনৈতিক অস্বস্তি শুরু হয়েছে। ওই রাজ্যে একটি আসন পেয়েই কংগ্রেস সরকার ফেলতে উদ্যোগী বিজেপি। তার মধ্যেই মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন কংগ্রেস নেতা বিক্রমাদিত্য সিংহ। মন্ত্রিত্ব ছাড়ার আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুললেন তিনি। বিক্রমাদিত্যের অভিযোগ, সুখবিন্দর নাকি বিধায়কদের উপেক্ষা করেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁর বাবা হিমাচলপ্রদেশে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত বীরভদ্র সিংহকেও অসম্মান করেছেন সুখবিন্দর এমনও অভিযোগ তোলেন বিক্রমাদিত্য।
মঙ্গলবার হিমাচলে রাজ্যসভা আসনের ভোটে বিজেপির প্রার্থী হর্ষ মহাজন হারিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা তথা প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে। ৬৮ সদস্যের বিধানসভায় দু’পক্ষই ৩৪টি করে ভোট পাওয়ায় লটারির মাধ্যমে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় হিমাচলে। বিজেপি এই আসন জয়ের পরই হিমাচলে সরকার টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সুখবিন্দর সিংহ সুখু সরকার।
মঙ্গলবারের ফলের পরে বিজেপি দাবি তোলে লোকসভা ভোটের আগেই সে রাজ্যে কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটবে। রাজনৈতিক এই ডামাডোলের মধ্যেই বিক্রমাদিত্যের মন্ত্রিত্ব ছাড়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে হাত শিবির। কেন তিনি মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বীরভদ্র-পুত্র পার্বত্য রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জিতে হিমাচলে সরকার গড়ে কংগ্রেস। সেই সরকারে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেছে নেওয়া হয় সুখবিন্দরকে। নির্বাচনী প্রচার কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। তবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্রকে সামনে রেখেই নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছিল কংগ্রেস। সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে মঙ্গলবার বিক্রমাদিত্য বলেন, ‘‘বীরভদ্র সিংহের নামেই যে ২০২২ সালে ভোট হয়েছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এমন কোনও ব্যানার বা পোস্টার ছিল না যাতে তাঁর ছবি ব্যবহার করা হয়নি।’’
তার পরই বীরভদ্র-পুত্র বলেন, ‘‘গত এক বছর ধরে আমি সরকারের কাজকর্ম নিয়ে একটি কথাও বলিনি। কিন্তু এখন মানুষের কাছে কথা বলা আমার দায়িত্ব। মন্ত্রিত্ব আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল হিমাচলের মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক।’’ বিক্রমাদিত্যের অভিযোগ, ‘‘সরকার বিধায়কদের অবহেলা করে কাজ করছে। তাঁদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে।’’
এখানেই থেমে থাকেননি বিক্রমাদিত্য। সুখবিন্দর সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। বিক্রমাদিত্যে অভিযোগ, ‘‘বিষয়টি পার্টি হাই কমান্ডকে বার বার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।’’ শেষে তিনি এও বলেন, ‘‘ বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের যুব সমাজ কংগ্রেসকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু আমরা কি যুবকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পেরেছি? তা আমাদের ভাবা উচিত।’’
অন্য দিকে, হিমাচলে সরকার ফেলতে আস্থাভোটের দাবি জানিয়ে বুধবার সকালেই রাজ্যপাল শিবপ্রতাপ শুক্ল-র কাছে দরবার করে বিজেপি। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বেরোনোর পর বিরোধী দলনেতা জয়রাম ঠাকুর বলেন, “জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ থাকা সত্ত্বেও আমাদের প্রার্থী হর্ষ মহাজন রাজ্যসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। নীতিগত ভাবে কংগ্রেসের এই রাজ্যে আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।” পাল্টা বিজেপির বিরুদ্ধে বিধায়কদের অপহরণের অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পাঁচ-ছ’জন বিধায়ককে অপহরণ করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফ এবং বিজেপি শাসিত হরিয়ানার পুলিশ।’’