প্রতীকী ছবি।
কোনও কোনও মহল থেকে প্রশ্ন উঠছিল। সময় ছিল কম। তার উপরে মামলাও হয়েছিল। অর্থাৎ বাধার আশঙ্কা ছিল নানা দিক থেকে। তবু দুর্গাপুজোর মুখে পুরোহিতদের ভাতা চালু করার প্রতিশ্রুতি রাখতে পেরে স্বস্তিতে রাজ্য সরকার। তবে গৃহহীন পুরোহিতদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে সময় লাগবে পদ্ধতিগত কারণে।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি দরিদ্র পুরোহিতদের মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী পুজোর আগেই তা চালু করতে হত রাজ্যকে। কিন্তু প্রথমত, সরকারের হাতে সময় খুব কম ছিল।
দ্বিতীয়ত, বিষয়টি নিয়ে মামলা হওয়ায় চাপ আরও বাড়ে প্রশাসনের উপরে। তবু পুজো শুরুর আগেই কমবেশি ৯৫০০ পুরোহিতকে
ভাতা দেওয়া গিয়েছে বলে
সরকারি সূত্রের খবর। “সময়টা সরকারের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নতুন করে আইনি জটিলতা তৈরি না-হওয়ায় সরকারের পদক্ষেপ বাধা পায়নি,” বলেন এক অফিসার।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই প্রতিটি জেলাকে সম্ভাব্য উপভোক্তাদের নাম পাঠাতে বলেছিল সরকার। কিন্তু কাজটা সহজ ছিল না বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনের অনেকে। কারণ, পঞ্চায়েত স্তর থেকে উপভোক্তাদের নাম জমা পড়েছে ব্লক স্তরে। সেখানে যাচাইয়ের পরে জেলাশাসকদের মাধ্যমে তা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে পৌঁছেছে। প্রকৃত উপভোক্তাদের খুঁজে বার করার প্রক্রিয়াও বেশ কঠিন হওয়ায় কিছুটা সময় লাগার সম্ভাবনা ছিল। তবে প্রশাসনের শীর্ষ মহল জেলাগুলিকে দ্রুত নাম পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার পরে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পুরোহিতদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেন জেলাশাসকেরা। জেলার অনেক প্রশাসনিক কর্তা জানান, পুজোর সময় বলে উপভোক্তা চিহ্নিত করতে কিছুটা সুবিধা হয়েছে। অনেক পুরোহিতেরই সন্ধান পাওয়া গিয়েছে পুজো কমিটিগুলির মাধ্যমে। সেই পুরোহিতদের প্রকৃত পারিবারিক পরিস্থিতি যাচাই করে তাঁদের নাম তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে পাঠানো হয়।
প্রশাসনের অন্দরের খবর, জেলা থেকে আসা তালিকার সব নাম গ্রাহ্য হয়নি। তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকের পরিচয় ও আর্থিক অবস্থা আরও এক বার যাচাই করেন আধিকারিকেরা। তাতে দেখা যায়, এমন অনেকের নাম আছে, যাঁরা ভাতা পেতে
পারেন না। আবার প্রকৃত অর্থে পুরোহিত না-হওয়ায় বেশ কিছু নাম বাদও দিতে হয়। এক কর্তা বলেন, “সব জেলা মিলিয়ে সাড়ে ন’হাজারের অনেক বেশি নাম এসেছিল সরকারের কাছে। তার থেকে প্রকৃত উপভোক্তাদের বাছাই করে তবেই সংশ্লিষ্টদের ভাতা দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলবে।”
সরকারের দ্বিতীয় ঘোষণা ছিল, যে-সব পুরোহিতের বাড়িঘর নেই, আবাস যোজনার আওতায় তাঁদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। তবে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাতা চালু করা গেলেও পুরোহিতদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। কারণ, আবাস যোজনার সুবিধা পেতে গেলে উপভোক্তার নিজের জমি থাকতে হয়। সেই জমির চরিত্র যাচাই করে তবেই প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হবে। এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, তাই এত দ্রুত সেই কাজ শুরু করা যায়নি।