বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও বেশ কিছু বিধিনিষেধের ঘেরাটোপেই থাকতে হবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। সব ঠিক থাকলে বুধবারই বাড়ি ফিরতে পারেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবারই সেই আশার কথা জানিয়েছেন বুদ্ধদেবের চিকিৎসকরা। গত ২৯ জুলাই থেকে আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বুদ্ধদেব। তবে এখন তিনি অনেকটাই ভাল। সংক্রমণমুক্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বুধবারই বুদ্ধদেবকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার ব্যাপারে আশাবাদী চিকিৎসকেরা। সোমবার বৈঠকে বসেছিল মেডিক্যাল বোর্ড। সেই বৈঠকেই বুদ্ধদেবের বাড়ি যাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বাড়ি ফিরলেও চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানেই থাকবেন বুদ্ধদেব। বালিগঞ্জের পাম অ্যাভিনিউতে যে বাড়িতে থাকেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, সেই বাড়ি জীবাণুমুক্ত করা হবে। অন্য দিকে, সেরে উঠলেও এখনই বুদ্ধদেবের রাইলস টিউব খোলা হচ্ছে না। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহ ধরে রাইলস টিউব দিয়েই তাঁকে খাওয়ানো হবে। তার পর খোলা হতে পারে রাইলস টিউব। মঙ্গলবার রক্তপরীক্ষা করানো হবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। আবার বসবে মেডিক্যাল বোর্ড। সব দিক খতিয়ে দেখার পরই হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে ৭৯ বছর বয়সি বুদ্ধদেবকে। বাড়িতে তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। বাড়ি ফেরার পর আগামী বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁর দেখভাল করবে হাসপাতালের ‘হোম কেয়ার টিম’।
বুধে বাড়ির পথে বুদ্ধ
সব ঠিক থাকলে বুধবারই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে পারবেন বুদ্ধদেব। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে কবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে, এই নিয়ে সোমবার বৈঠকে বসেছিল মেডিক্যাল বোর্ড। বৈঠকের পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বুধবার বুদ্ধদেবকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী। তবে সব খতিয়ে দেখার পরই চূড়ান্ত ঘোষণা করা হবে। চিকিৎসকদের মতে, বুদ্ধদেবের জন্য বাড়িতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। সেই বন্দোবস্ত খতিয়ে দেখার পরই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে।
বাড়িতেই চলবে চিকিৎসা
হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, বাড়িতেও পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বুদ্ধদেবকে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে বুদ্ধদেবকে তাঁর বাড়িতে দেখভাল করবে হাসপাতালের ‘হোম কেয়ার টিম’। যে ঘরে থাকেন বুদ্ধদেব, সেটি জীবাণুমুক্ত করা হবে। বাইরের কেউ যাতে বাড়িতে না ঢোকেন, সে ব্যাপারে জোর দেওয়া হবে। অর্থাৎ, নতুন করে যাতে বুদ্ধদেবের শরীরে সংক্রমণ না ছড়ায়, তা সুনিশ্চিত করতে চান চিকিৎসকেরা। বাড়িতে থাকবেন এক জন নার্স। আগামী এক সপ্তাহ বুদ্ধদেবের রাইলস টিউব খোলা হবে না। তবে তার পর রাইলস টিউব খোলা হবে। খাবার তিনি গলাধঃকরণ করতে পারছেন কি না, পরীক্ষা করে তা দেখা হচ্ছে। চলবে ‘সোয়ালো অ্যাসেসমেন্ট’। ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে চলবে ‘চেস্ট ফিজিয়োথেরাপি’ এবং রিহ্যাবিলিটেশন। বাড়িতে রাখা হবে বাইপ্যাপ সাপোর্ট, নেবুলাইজেশন সাপোর্ট। অক্সিজেনের ব্যবস্থাও রাখা হবে।
বুদ্ধের মন-মেজাজ ভাল
সংক্রমণমুক্ত হয়েছেন বুদ্ধদেব। এখন অনেকটাই ভাল। সোমবার মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠকের পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ‘মন-মেজাজ ভাল’। তাঁকে গান শোনানো হচ্ছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনছেন তিনি। বুদ্ধদেবকে উঠিয়ে বসানো হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যার মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়েছে, নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে তাঁকে। তবে তিনি সজাগ রয়েছেন এবং আগের থেকে ভাল।
১০ দিন ধরে হাসপাতালে
২৯ জুলাই থেকে আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বুদ্ধদেব। হাসপাতালে ভর্তির সময় বুদ্ধদেবের শ্বাসনালিতে (লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট) সংক্রমণ ছিল এবং ‘টাইপ-২ রেসপিরেটরি ফেলিওর’ হয়েছিল। তবে এখন তিনি ভাল। সোমবার চিকিৎসকরা বলেন, ‘‘আমরা খুশি, উনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।’’ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আবার বৈঠকে বসবে মেডিক্যাল বোর্ড।
বুদ্ধদেবের চিকিৎসায় কারা
বুদ্ধদেবের চিকিৎসায় রয়েছেন চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী (মেডিসিন), সৌতিক পান্ডা (ক্রিটিক্যাল কেয়ার), সুস্মিতা দেবনাথ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার), সরোজ মণ্ডল (হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ), অঙ্কন বন্দ্যোপাধ্যায় (ইন্টারনাল মেডিসিন এবং পালমনোলজি), ধ্রুব ভট্টাচার্য (ইন্টারনাল মেডিসিন এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার), আশিস পাত্র (অ্যানেস্থেশিয়োলজি), দীপনারায়ণ মুখোপাধ্যায় (সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ), সেমন্তী চক্রবর্তী (এন্ডোক্রিনোলজি), সোমনাথ মাইতি (জেনারেল মেডিসিন), সপ্তর্ষি বসু (ফিজিশিয়ান এবং মেডিক্যাল সুপার)।