প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মেডিক্যাল বুলেটিন (বাঁ দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এখনও সঙ্কটজনক। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। রবিবার সন্ধ্যায় মেডিক্যাল বুলেটিনে এমনটা জানাল আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতাল। শনিবার বিকেলে ৭৯ বছর বয়সি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, বুদ্ধদেবকে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
গত কয়েক দিন ধরেই জ্বর ছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি সিওপিডির সমস্যায় আক্রান্ত। শনিবার সকাল থেকেই ক্রমশ আচ্ছন্ন হয়ে যেতে থাকেন তিনি। শরীরে কমতে থাকে অক্সিজেনের মাত্রা। তার পরই বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বুদ্ধদেবকে। হাসপাতালের মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়েছে, বুদ্ধদেবের শ্বাসনালীতে (লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট) সংক্রমণ রয়েছে এবং ‘টাইপ-২ রেসপিরেটরি ফেলিওর’ হয়েছে।
বুদ্ধদেবের চিকিৎসায় মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করা হয়েছে। ওই দলে রয়েছেন চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী (মেডিসিন), সৌতিক পাণ্ডা (ক্রিটিক্যাল কেয়ার), সুস্মিতা দেবনাথ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার), সরোজ মণ্ডল (হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ), অঙ্কন বন্দ্যোপাধ্যায় (ইন্টারনাল মেডিসিন এবং পালমনোলজি), ধ্রুব ভট্টাচার্য (ইন্টারনাল মেডিসিন এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার), আশিস পাত্র (অ্যানাস্থেশিয়া), দীপনারায়ণ মুখোপাধ্যায় (ইনফেকশাস ডিজ়িজ স্পেশালিস্ট), সেমন্তী চক্রবর্তী (এন্ডোক্রিনোলজি), সোমনাথ মাইতি (জেনারেল মেডিসিন), সপ্তর্ষি বসু (ফিজিশিয়ান এবং সুপার)। পরিস্থিতি বুঝে মেডিক্যাল বোর্ডে যে দুই চিকিৎসককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তাঁরা হলেন দীপনারায়ণ মুখোপাধ্যায় (ইনফেকশাস ডিজ়িজ স্পেশালিস্ট) এবং সেমন্তী চক্রবর্তী (এন্ডোক্রিনোলজি)।
রবিবার বুদ্ধদেবকে দেখে গিয়েছেন হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ সরোজ মণ্ডল। ইকো কার্ডিয়োগ্রাম করিয়েছেন চিকিৎসক ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার রিপোর্ট ভাল বলে জানিয়ে চিকিৎসক কৌশিক বলেন, ‘‘বুদ্ধদেববাবুর ‘কার্ডিয়াক ফাংশন’ (হৃদ্যন্ত্রের কাজ) বেশ ভাল। তাই ফুসফুসের অবস্থা খারাপ থাকলেও উনি লড়ে যাচ্ছেন। শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইনসুলিন দেওয়া হচ্ছে। রাইলস টিউবের মাধ্যমে তাঁকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। কোনও সমস্যা ছাড়াই তাঁর খাদ্যনালী দিয়ে খাবার শরীরে ঢুকছে। এটা ভাল লক্ষণ।’’
বুদ্ধদেবের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা কৌশিককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কেমন আছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সিডেশন (আচ্ছন্ন করে রাখার প্রক্রিয়া) কমিয়ে দেওয়ার ফলে উনি কানে শুনতে পাচ্ছেন। বুঝতে পারছেন, আশপাশটা অনুভব করতে পারছেন। আমরা ডাকলে উনি তাকাচ্ছেন, মাথা নাড়ছেন। কখনও কখনও ইশারায় ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বোঝানোরও চেষ্টা করছেন।’’ বুদ্ধদেবের ব্লাডগ্যাসের মাত্রা ধারাবাহিক ভাবে মাপা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসক। তিনি জানিয়েছেন, ব্লাডগ্যাসের মাত্রা ৫০-এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে তিনি এখনও বিপন্মুক্ত নন। বরং সঙ্কটজনকই রয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা।
রবিবার সকালে হাসপাতালে বাবাকে দেখতে হাজির হন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর একমাত্র সন্তান সুচেতন। প্রাক্তন সতীর্থের খোঁজ নিতে আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে যান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠকে হাজির ছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। হাসপাতালে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।