ডেঙ্গি মশা। —ফাইল চিত্র।
ফি বছর ডেঙ্গি-আতঙ্ক তৈরি হয় বাংলায়। কলকাতায় বরাবর আক্রান্তের সংখ্যা বেশি থাকে। তবে এ বার তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জেলাতেও সংক্রমণ বাড়ছে। এ পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। এই অবস্থায় দফায় দফায় বৈঠক করছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ডেঙ্গি নিয়ে গাইডলাইন জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২ দিন ধরে জ্বর, মাথার যন্ত্রণা, শরীরে, হাত-পায়ে ব্যথা থাকলে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। শরীরে যদি লাল র্যাশ দেখা যায়, তা হলেও রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকায়। নাক-মুখ থেকে রক্তক্ষরণ হলেও পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, যে জেলাগুলিতে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত, সেখানকার রিপোর্ট তৈরি করেছে স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ টিম। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে পরিকাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে বীরভূম, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ একাধিক জেলাকে সতর্ক করা হবে বলে খবর সূত্রের। এই পরিস্থিতিতে জেলাগুলির ডেঙ্গি পরিস্থিতি কেমন? সচেতনতাই বা কেমন, খোঁজ নিয়ে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা
বেশ কিছু দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঠাকুরপুকুর ১২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাখরাহাট রোডের বাসিন্দা অণিমা সর্দার। পরিবারের সদস্যরা ৩৫ বছরের অনিমাকে বৃহস্পতিবার সকালে বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে তাঁকে এমআর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ডেঙ্গির কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে তৎপরতা নেওয়া হয়নি। জলাজঙ্গল ইত্যাদি পরিষ্কার করা হচ্ছে না। অন্য দিকে, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের জানানো হচ্ছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সচেতনতামূলক প্রচার চলছে এলাকায় এলাকায়।
পূর্ব বর্ধমান
যে কয়েকটি জেলায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য ভবন বিশেষ উদ্বিগ্ন, তার মধ্যে পূর্ব বর্ধমান অন্যতম। প্রায় প্রতি দিনই ওই জেলার কালনা মহকুমা হাসপাতালে জ্বরে কাবু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। শুক্রবার ‘অজানা জ্বরে’ আক্রান্ত হয়ে এক জন মারাও গিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, বর্তমানে অজানা জ্বর নিয়ে কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি অন্তত ৬০ জন। যার মধ্যে ডেঙ্গি পজ়িটিভ রোগীর সংখ্যা তিন জন। অন্য দিকে, রোগী ভর্তি সংখ্যায় এতটাই বেড়েছে যে, পরিস্থিতি সামলাতে একই শয্যায় দু’জন করে রোগীকেও রাখতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, শুক্রবার কালনার কৃষ্ণদেবপুর এলাকার বাসিন্দা ২৪ বছরের দেবকুমার ঢালি মারা যান। যদিও তাঁর ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া— দু'টি পরীক্ষার রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছিল। এ নিয়ে কালনা হাসপাতালের সুপার চন্দ্রশেখর মাইতি বলেন, ‘‘এনসেফেলাইটিসের জন্য ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।’’ তবে জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানাচ্ছেন তিনি। পরিস্থিতি সামলানোর জন্য কালনা মহকুমা হাসপাতাল সব দিক থেকে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সুপার তাপস ঘোষ বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্ত কোনও রোগী নেই। আগাম সতর্কতা হিসেবে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া রয়েছে।’’
পশ্চিম বর্ধমান
আসানসোল পুরনিগম এলাকায় এখনও পর্যন্ত ১০ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে বলে জানিয়েছে পুরনিগমের স্বাস্থ্য দফতর। তার মধ্যে ৮ জন আসানসোলেরই বাসিন্দা। এক জন কলকাতা এবং এক জন জামশেদপুর থেকে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে এসেছিলেন। আসানসোল পুরনিগমের স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক দীপক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরনিগমের পক্ষ থেকে ৫০০ জনকে নোটিস ধরানো হয়েছে। তাঁদের ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এই নোটিস যাদের দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বিভিন্ন থানাও আছে। থানার সামনে আটক করা বিভিন্ন পুরনো গাড়িতে জল জমে রয়েছে। তার জন্য থানাগুলিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রায় ২০০ খাটাল মালিক, মার্কেট কমপ্লেক্স ও টায়ারের একাধিক রিপেয়ারিং দোকান আছে, তাদেরও এই নোটিস ধরানো হয়েছে।’’
পূর্ব মেদিনীপুর
পূর্ব মেদিনীপুরে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের কোনও খবর নেই। জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং জেলাশাসকের দফতর জানিয়েছে, প্রশাসনের তরফে জেলার সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল এবং চিকিৎসাকেন্দ্রকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ডেঙ্গি সংক্রান্ত কোনও রকম খবর এলেই দ্রুত জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য পুরসভা এবং ব্লক প্রশাসনকে তৎপর থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হুগলি
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, হুগলির ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫৮। স্বাভাবিক ভাবে এই রিপোর্টে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যকর্তারা। জানা গিয়েছে, এখনও সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪৭ জন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৪ জন। হুগলি গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২২৭ জন। জেলার শহরাঞ্চলে আক্রান্ত সংখ্যা ১৩১ জন। হুগলিতে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গি আক্রান্ত (৬৫) চণ্ডীতলা-১ ব্লকে। তার পরেই রয়েছে শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লক। সেখানে ২৬ জন আক্রান্ত। শহরাঞ্চলের মধ্যে চন্দননগর পুরনিগম এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২৯। তার পরেই আছে শ্রীরামপুর পুরসভা এলাকা (২২) এবং চুঁচুড়া (১৮)।
হুগলি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমা ভুঁইয়ার কথায়, ‘‘ডেঙ্গি মোকাবিলায় একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলার বড় হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গি পরীক্ষা হচ্ছে। ‘ফিভার ক্লিনিক’ চালু হয়েছে সব হাসপাতালে। প্লেটলেটের জোগান যাতে ঠিক থাকে, সে দিকে নজর রাখা হয়েছে। জ্বর হলে রক্ত পরীক্ষা করতে বলা হচ্ছে। জমা জল যাতে কোথাও না থাকে, সেটা দেখতে স্বাস্থ্যকর্মী, আশাকর্মীদের সঙ্গে ‘ভিলেজ রিসোর্স পার্সন’ এবং এসএইচজি গ্রুপের সদস্যদের কাজে লাগানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর হুগলিতে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সাত হাজারের বেশি। সে তুলনায় এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তবু সাবধানের মার নেই। এক জন আক্রান্তেরও হদিস পেলে ওই এলাকাকে চিহ্নিত করে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।
হাওড়া
হাওড়া জেলাতেও ডেঙ্গি-ভীতি বাড়ছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৭৬ জন। যার মধ্যে হাওড়া পুর এলাকারই ৮০ জন রোগী রয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে ১০ থেকে ১২ জন আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা অভয় দিয়ে জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়। ডেঙ্গি প্রতিরোধে সচেতনতার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রচার করছেন। দেখছেন কোথাও জল জমে রয়েছে কি না। হাওড়া পুর এলাকায় সতর্কতামূলক সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যে সমস্ত জায়গায় জল জমে রয়েছে, তা পরিষ্কারের জন্য নোটিস দেওয়া হচ্ছে। তা না মানলে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
নদিয়া
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত জেলায় সরকারি ভাবে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা দেড় হাজারের আশপাশে। এখনও পর্যন্ত জেলায় ৬ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। শুধুমাত্র রানাঘাটেই আক্রান্তের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর।
মালদহ
ডেঙ্গি নিয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে মালদহ জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বর্ষায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জন ডেঙ্গি আক্রান্তের হদিস মিলেছে। যদিও অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরে মালদহে ডেঙ্গির প্রকোপ অনেকটাই কম বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। ইতিমধ্যে জেলা জুড়ে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে শুরু হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। জেলার দুই পুরসভা-সহ গ্রামীণ স্তরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক করছেন সাধারণ মানুষকে। সচেতনতা শিবির আয়োজিত হচ্ছে। লিফলেটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা জুড়ে চলছে ডেঙ্গি নিধনের বিভিন্ন উদ্যোগ।
চলতি মরসুমে মালদহে ৭২ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। জেলার কালিয়াচক-১ ব্লক, হবিবপুরে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। কালিয়াচক-১ নম্বর ব্লকে ১৪ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। এখনও পর্যন্ত হবিবপুর ব্লকের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় প্রায় ১০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ওই এলাকাগুলিতে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সর্তকতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, বর্ষায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম হবে। বর্ষার পরেই সাধারণত আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তাই আগেভাগে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। জেলার প্রতিটি ব্লক স্তরে বিশেষ ‘ফিভার ক্যাম্প’ করা হবে। বিশেষ শিবিরগুলিতে ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়ার শনাক্তকরণ করা হবে।
বাঁকুড়া
গত বছরের পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার ডেঙ্গি মোকাবিলায় শুরু থেকে সজাগ বাঁকুড়া পুরসভা । শনিবার বাঁকুড়ার ডেঙ্গিপ্রবণ ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়ি ঘুরে ঘুরে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা সমীক্ষা করেছেন। খতিয়ে দেখেছেন কোথাও জমা জল রয়েছে কি না। এই অভিযানে বেশ কিছু বাড়ি এবং এলাকায় জমে থাকা জল থেকে মশার লার্ভার নমুনা সংগ্রহ করেছেন পুরকর্মীরা। জ্বর এলে দ্রুত রোগীর রক্ত পরীক্ষার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। গত বছর এই ১৯ নম্বর ওয়ার্ডেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০০। বাঁকুড়া পুরসভা সূত্রে খবর, চলতি বছর বাঁকুড়া শহরে ১৪ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। তাঁদের মধ্যে তিন জনের বাড়ি ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কেঠারডাঙা এলাকায়। আক্রান্তের সংখ্যা এখনও তেমন বেশি না হলেও কেঠারডাঙার মতো শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় দ্রুত ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাকে মাথায় রাখছে পুরসভা। তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে শনিবার থেকে এলাকায় অভিযান শুরু হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে খবর, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মী এবং মশানাশক স্প্রে করার কাজে যুক্ত কর্মীদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে এলাকা জুড়ে ডেঙ্গি মোকাবিলায় নামানো হয়েছে । দলগুলি নিকাশি ব্যবস্থার হাল খতিয়ে দেখার পাশাপাশি অন্য কোথাও জল জমে রয়েছে কি না এবং প্রতিটি বাড়ি ঘুরে কেউ জ্বরে আক্রান্ত কি না, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে তা নথিভুক্ত করার কাজ চালাচ্ছেন। এ সবের মাঝে বাঁকুড়া শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় পুরসভার গাফিলাতির অভিযোগও এনেছেন স্থানীয়েরা। যেমন কেঠারডাঙার আশ্রমপাড়া এলাকার বাসিন্দা রত্না মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এলাকার নর্দমা সাফাই ঠিকমতো না হওয়ায় আবর্জনা জমে মাঝেমধ্যেই জলনিকাশি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মশার উপদ্রব বাড়ছে। যে ভাবে এলাকায় ডেঙ্গি থাবা বসাচ্ছে, তাতে পরিবার নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।’’
কোচবিহার
কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত বিশ্বাস জানিয়েছেন, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত জেলায় মোট ৫৯ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে এক জন, মাথাভাঙ্গা মহকুমা হাসপাতালে এক জন এবং মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে এক জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। জেলায় ডেঙ্গিতে এ পর্যন্ত একটিও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। কোচবিহার জেলার গ্রাম এবং শহরে প্রত্যেকটি জায়গায় সচেতনতামূলক প্রচার করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে।
দক্ষিণ দিনাজপুর
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় মোট ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪। এ পর্যন্ত গঙ্গারামপুর হাসপাতালে এক জন এবং বালুরঘাট হাসপাতালে এক জন ডেঙ্গি আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বালুরঘাট গ্রাম ও শহর এলাকা মিলিয়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১২। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ দাস বলেন, ‘‘জেলায় এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট একটি এলাকায় খুব বেশি সংখ্যক ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। যে সমস্ত রোগীর সন্ধান দক্ষিণ দিনাজপুরে পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই বাইরে গিয়েছিলেন। এখন জেলায় ফিরেছেন। এই রকম রোগীর সংখ্যাই বেশি। তবে স্বাস্থ্য দফতর সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত রয়েছে।’’
দার্জিলিং
গত বছরের তুলনায় এ বছরের ডেঙ্গির প্রকোপ অনেকটাই কম জেলায়। ডেঙ্গি প্রতিরোধ গড়তে বিভিন্ন বিভাগে লোক বাড়িয়েছেন শিলিগুড়ি পুরনিগম থেকে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। কাজেই জুলাই মাসের শেষ লগ্নেও ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি ভাবে অনেকটাই কম। তবে এর সঠিক হিসেব এখনই দেওয়া সম্ভব নয় বলে জনিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসী প্রামাণিক। তিনি বলেন, ‘‘দার্জিলিং জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা এ ভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে এটুকু বলতে পারি, গত বছরের তুলনায় এ বছর পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল।’’
তবে পুরনিগম এলাকায় ডেঙ্গির পরিস্থিতি নিয়ে জল ও স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত বলেন, ‘‘জানুয়ারি মাস থেকে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২১ জন। বিভিন্ন ওয়ার্ড মিলিয়ে এই পরিসংখ্যান পেয়েছি আমরা। ডেঙ্গি মোকাবিলায় লোকবল বাড়িয়েছি। ইতিমধ্যে বহু নির্মীয়মাণ বহুতল চিহ্নিত করে সেগুলো পরিষ্কার রাখা হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে বৈঠক হচ্ছে এ নিয়ে। কাজের পরিধি বাড়তেই ডেঙ্গি এখনও পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে।’’
চলতি মরসুমে ডেঙ্গিতে মৃত্যু
১৩ জুলাই: সায়নিকা হালদার (১৩), বারাসত। মারা যায় আরজি কর হাসপাতালে।
১৯ জুলাই: ৯ মাসের শিশু, স্বরূপনগর, মারা যায় বিসি রায় হাসপাতালে।
২১ জুলাই: রিঙ্কি রায় (৩০), বাঙুর। বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়।
হরিপদ মিস্ত্রি (৬৬), নদিয়া। বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান।
উমা সরকার (৪৫), নদিয়া। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে মৃত্যু হয়।
২২ জুলাই: পল্লবী দে (১০), পিকনিক গার্ডেন, ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
২৪ জুলাই: জয় বিশ্বাস (১১), নদিয়া হাঁসখালি, এনআরএসে মৃত্যু হয়।
২৮ জুলাই: অণিমা সর্দার (৪৫), বারুইপুর। এমআর বাঙুর হাসপাতালে মারা গিয়েছেন।