গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
শনি ও রবিবার রাজ্যে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দু’হাজার চারশোর আশেপাশে। সোমবারের পর মঙ্গলবারও সেই সংখ্যা দু’হাজার একশোর গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ রইল। তবে সোমবারের তুলনায় নতুন আক্রান্ত বাড়ল ২২ জন। তবে দু’দিনই টেস্টের সংখ্যা বেড়েছে। টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধির পরেও আক্রান্তের সংখ্যা সেই তুলনায় না বাড়ায় রাজ্যের করোনা চিত্রে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজ্যে কোভিড-১৯ টেস্টের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে। চালু হচ্ছে র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট। ফলে আরও বেশি মানুষ চিহ্নিত হবেন। তাতে ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্তরে সচেতনতাও বাড়বে। তার সঙ্গে সপ্তাহে নিয়মমাফিক লকডাউনেও বাড়তি সুবিধা হবে করোনা-শৃঙ্খল ভাঙতে। আবার মঙ্গলবারও নবান্নে একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব মিলিয়ে গোটা ব্যবস্থাপনায় সদর্থক ইঙ্গিতই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাঁরা বলছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার পরীক্ষা এবং আরও পরীক্ষা। এই ক্ষেত্রেও রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা সদর্থক বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৭ হাজার টেস্ট হচ্ছে। সেই সংখ্যা অবশ্য মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যের চেয়ে কম। তবে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, নতুন টেস্টের যন্ত্র চালু হলে পরীক্ষার সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজারে পৌঁছবে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মঙ্গলবারের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২১৩৪ জন। সোমবার এই সংখ্যা ছিল ২১১২, রবিবার ছিল ২৩৪১ এবং শনিবার ছিল ২,৪০৮। এই নিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ৬২ হাজার ৯৬৪। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪৪৯। তার আগের 24 ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছিল ৩৯ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায় (১৮)। তার পরেই কলকাতা। মহানগরীতে মারা গিয়েছেন ১০ জন।
আরও পড়ুন: অগস্টে ৯ দিন সম্পূর্ণ লকডাউন রাজ্যে, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
প্রতিদিন কত জন রোগীর করোনা টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে কত জনের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হয় পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। এই সংক্রমণের হার নিয়েও কিছুটা স্বস্তির পরিস্থিতি রাজ্যে। গত কাল সোমবার এই সংক্রমণের হার ছিল ১২.৪২ শতাংশ। এ দিন তা সামান্য বেড়ে হয়েছে ১২.৫৪। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ হাজার ২১ জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই প্রবণতা বজায় থাকলে উদ্বেগ কিছুটা কমবে বলেই মত গবেষক-বিশেষজ্ঞদের।
গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭৮ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৪৬২ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নতুন আক্রান্ত ১৭৮, হাওড়ায় ১৪৫, হুগলিতে ১২৮ জন। উত্তরবঙ্গে সবচেয়ে বেশি (১১০) নতুন আক্রান্ত উত্তর দিনাজপুরে জেলায়। এর পরে রয়েছে দার্জিলিং (৬২)।
আরও পড়ুন: টেস্ট বেশি, সংক্রমণের হার কম, দেশের করোনা চিত্রে স্বস্তির ইঙ্গিত?
করোনা আক্রান্তদের সুস্থ হওয়ার পরিসংখ্যানও মোটামুটি আশাব্যাঞ্জক। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১০৫ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। অর্থাৎ নতুন আক্রান্ত ও সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা প্রায় একই রকম। এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৪২,০২২ জন। এই মুহূর্তে রাজ্যে মোট সক্রিয় করোনা আক্রান্ত ১৯ হাজার ৪০৩ জন। সুস্থতার হার সোমবারের (৬৫.৬২%) চেয়ে এক শতাংশেরও বেশি বেড়ে হয়েছে ৬৬.৭৪ শতাংশ।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)